Skip to content

কোষ কাকে বলে? | ইউক্যারিওটিক কোষ ও প্রোক্যারিওটিক কোষ

কোষ কাকে বলে? কোষ কত প্রকার ও কি কি?

হ্যালো বন্ধুরা আবার আমরা নিয়মিত হাজির হয়েছি আজকের নতুন বিষয় নিয়ে। আজকে আমরা আলোচনা করবো “কোষ” নিয়ে। আজ আমরা জানব “কোষ কাকে বলে?”, “কোষের প্রকারভেদ “, “প্রোক্যারিওটিক কোষ, ইউক্যারিওটিক কোষ এবং মেসোক্যারিওটিক কোষ কাকে বলে?” এবং “আদর্শ বা ইউক্যারিওটিক কোষের উপাদান ও তাদের কাজ” ইত্যাদি।

কোষ কাকে বলে?

অর্ধভেদ্য বা প্রভেদক ভেদ্য আবরণী দ্বারা বেষ্টিত, প্রোটোপ্লাজম দ্বারা নির্মিত, স্বপ্রজননশীল, জীবদেহের কার্যগত ও গঠনগত একক কে কোষ বলে।

কোষের প্রকারভেদ

সাধারণত কোষ কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়-
1) প্রোক্যারিওটিক কোষ
2) ইউক্যারিওটিক কোষ এবং
3) মেসোক্যারিওটিক কোষ।

প্রোক্যারিওটিক কোষ কাকে বলে?

সুগঠিত নিউক্লিয়াস বিহীন এবং পর্দাবিহীন কোষ অঙ্গাণু দ্বারা গঠিত কোষকে প্রোক্যারিওটিক কোষ বলে। যেমন- নীলাভ সবুজ শৈবাল, ব্যাকটেরিয়া, মাইকোপ্লাজমা।

প্রোক্যারিওটিক কোষের বৈশিষ্ট্য:

1) নিউক্লিয়াস সুগঠিত নয়। এটি নিউক্লিয় পর্দা নিউক্লিওলাস, নিউক্লিওপ্লাজম ও নিউক্লিয়জালিকা বিহীন।

2) DNA যুক্ত কোষীয় মধ্যাংশকে নিউক্লিয়য়েড বা জেনোপোর বলে।

3) সাইটোপ্লাজমের কোনো পর্দাবৃত কোষঅঙ্গাণু থাকে না।

4) রাইবোজোম 70s প্রকৃতির।

5) কোষ প্রাচীর ও কোষ পর্দা উপস্থিত। ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরের মুখ্য উপাদান পেপটাইডোগ্লাইক্যান।

[আরও পড়ুন : ভিটামিনের উৎস, তাদের কাজ এবং অভাবজনিত ফল]

ইউক্যারিওটিক কোষ কাকে বলে?

সুগঠিত নিউক্লিয়াস যুক্ত এবং পর্দাঘেরা কোষ অঙ্গাণু দ্বারা গঠিত কোষকে ইউক্যারিওটিক কোষ বলে।

ইউক্যারিওটিক কোষের বৈশিষ্ট্য:

1) আদর্শ নিউক্লিয়াস থাকে।
2) কোষ পর্দা ও কোষ প্রাচীর উভয়ই বর্তমান। তবে কোষপ্রাচীর কেবলমাত্র উদ্ভিদ কোষে থাকে।
3) সেন্ট্রোমিয়ার থাকে।
4) রাইবোজোম 80s প্রকৃতির।
5) ক্রোমোজোম গঠিত হয় ও তা ক্ষারীয় প্রোটিন যুক্ত।

মেসোক্যারিওটিক কোষ কি?


সুগঠিত নিউক্লিয়াস যুক্ত এবং উভয় কোষের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কোষকে মেসোক্যারিওটিক কোষ বলে। উদাহরণ পিরিডিনিয়াম, জিমনোডিনিয়াম।

মেসোক্যারিওটিক কোষের বৈশিষ্ট্য

1) আদর্শ নিউক্লিয়াস থাকে।
2) কোষ পর্দা থাকে কিন্তু কোষ প্রাচীর থাকে না কোষ প্রাচীর এর পরিবর্তে পেলিকল থাকে।
3) সেন্ট্রোমিয়ার থাকে না।
4) রাইবোজোম 80s প্রকৃতির হয়।
5) ক্রোমোজোম গঠিত হয় ও তা আম্লিক প্রোটিন যুক্ত।

ইউক্যারিওটিক কোষের উপাদান ও তাদের কাজ

কোষপর্দা: প্রত্যেক সজীব কোষের প্রোটোপ্লাজমের বাইরে অবস্থিত সজীব, প্রোটিন ও লিপিড দ্বারা গঠিত প্রভেদক ভেদ্য পর্দাকে কোষপর্দা বলে।
কাজ: কোষের প্রোটোপ্লাজমকে রক্ষা করা, কোষের আকৃতি প্রদান, অন্তঃকোষীয় ব্যাপন ও অভিস্রবণ।

কোষপ্রাচীর: উদ্ভিদকোষের কোষপর্দা বাইরে অবস্থিত দৃঢ়, স্থিতিস্থাপক ও মৃত স্তরটিকে কোষপ্রাচীর বলে। এটি সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ, পেকটিন দ্বারা গঠিত পুরু প্রাচীর।
কাজ: কোষের আকৃতি প্রদান ও কোষের সজীব অংশকে রক্ষা করা।

নিউক্লিয়াস: নিউক্লিয়াস হল প্রোটোপ্লাজমের সবচেয়ে ঘন, প্রায় গোলাকার এবং দ্বি-একক পর্দাঘেরা অংশ। এটি চারটি অংশ নিয়ে গঠিত।

  • নিউক্লিয়পর্দা: নিউক্লিয়াসকে ঘিরে অবস্থিত সচ্ছিদ্র, প্রোটিন ও লিপিড নির্মিত দ্বি-একক পর্দা।
  • নিউক্লিওলাস: নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থিত RNA ও প্রোটিন নির্মিত সবচেয়ে ঘন ও গোলাকার অংশ।
  • নিউক্লিওপ্লাজম: নিউক্লিয়াসের অন্তর্গত অর্ধস্বচ্ছ, অর্ধতরল ধাএ যার মধ্যে ক্রোমাটিন সূত্রগুলি অবস্থিত থাকে।
  • নিউক্লিয় জালিকা: ইন্টারফেজ দশা নিউক্লিওপ্লাজমে অবস্থিত নিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা নির্মিত পেঁচানো সূত্রাকার অংশ।

কাজ: কোষের বিপাক নিয়ন্ত্রণ, কোষ বিভাজন, বংশগতির বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় বহন করা।

সাইটোপ্লাজম: সাইটোপ্লাজম হল প্রোটোপ্লাজমের নিউক্লিয়াস বিহীন জেলির মত অংশবিশেষ। সাইটোপ্লাজম অবস্থিত সজীব কোষ অঙ্গাণুগুলো হল- মাইট্রোকন্ডিয়া, গলগী বডি, প্লাস্টিড, সেন্ট্রোজোম, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম, রাইবোজোম ও লাইসোজোম প্রভৃতি।
কাজ: কোষমধ্যস্থ অঙ্গাণু গুলিকে রক্ষা করে ও বিভিন্ন বিপাকক্রিয়ার প্রধান স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

মাইটোকনড্রিয়া: সজীব উদ্ভিদ ও প্রাণীকোষের সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্ত আকারে ছড়িয়ে থাকা দ্বি-একক পর্দা যুক্ত দন্ডাকার অঙ্গাণু গুলিকে মাইট্রোকন্ডিয়া বলে। মাইটোকনড্রিয়ার অন্তঃপর্দাটি আঙুলের মতো অসংখ্য ভাজ বিশিষ্ট হয়। এই ভাজ গুলিকে ক্রিস্টি বলে।
কাজ: শ্বসনের ক্রেবস চক্র নিয়ন্ত্রণ করা মাইটোকনড্রিয়ার প্রধান কাজ। মাইট্রোকন্ডিয়া মধ্যে কোষের শক্তি উৎপন্ন হয় এইজন্য মাইটোকনড্রিয়াকে কোষের শক্তিঘর বলা হয়।

গলগী বডি: উদ্ভিদ ও প্রাণী কোষের নিউক্লিয়াসের কাছে একক পর্দা ঘেরা যেসব গোলাকার বা সূত্রাকার কোষ অঙ্গাণুগুলি সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত থাকে। তাকে গলগী বডি বলে। উদ্ভিদ কোষের গলগী বডি কে ডিকটিওজোম বলে।
কাজ: গলগী বডি বিভিন্ন প্রকার উৎসেচক ও হরমোন ক্ষরণে অংশগ্রহণ করে এবং এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম উৎপন্ন প্রোটিন, লিপিড এর সঞ্চয়, একত্রীকরণ ও বন্টনের সঙ্গে যুক্ত।

প্লাস্টিড: উদ্ভিদের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত দ্বি-একক পর্দা বিশিষ্ট অঙ্গাণুকে প্লাস্টিড বলে। রঞ্জক এর উপস্থিতি অনুসারে এটি তিন প্রকার-
1) ক্লোরোপ্লাস্টিড।
2) ক্রোমোপ্লাস্টিড এবং
3) লিউকোপ্লাস্টিড

কাজ: ক্রোমোপ্লাস্টিড ফল ও ফুলের বর্ণ গঠনে,  ক্লোরোপ্লাস্টিড খাদ্য সংশ্লেষের এবং লিউকোপ্লাস্টিড ফ্যাট, শ্বেতসার, স্নেহজাতীয় খাদ্য সংশ্লেষের সহায়তা করে।

সেন্ট্রোজোম: প্রাণী কোষের সাইটোপ্লাজম নিউক্লিয়াসের কাছে অবস্থিত উজ্জ্বল তারকার অঙ্গানুকে সেন্ট্রোজোম বলে। এটি সেন্ট্রোস্ফিয়ার ও সেন্ট্রিওল নিয়ে গঠিত। সেন্ট্রোজোমের সাধারণত দুটি সেন্ট্রিওল থাকে। এগুলো নয়টিএম এয়ী অনুনালিকা দিয়ে গঠিত এবং দুমুখ খোলা পিপের মতো আকারবিশিষ্ট।
কাজ: প্রাণী কোষের বিভাজনের সময় বেমতন্তু  গঠন করা সেন্ট্রোজোম এর প্রধান কাজ। কয়েক প্রকার ফ্লাজেলাযুক্ত শৈবালে (ক্ল্যামাইডোমোনাস) অনুন্নত প্রকৃতির সেন্ট্রোজোম পরিলক্ষিত হয়।

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম: কোষের সাইটোপ্লাজমের নিউক্লিয়পর্দা থেকে কোষপর্দা পর্যন্ত বিস্তৃত চ্যাপ্টা থলি বা নালিকার মত অঙ্গাণু কোষের সাইটোপ্লাজম কে অসংখ্য প্রকোষ্ঠে বিভক্ত করে। একে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম বলে। এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলামের গায়ে রাইবোজোম যুক্ত থাকলে তাকে  মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম ও রাইবোজোম অনুপস্থিত থাকলে তাকে অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম বলে। এটি সিস্টারনি, টিউবিউল এবং ভেসিকল নিয়ে গঠিত।
কাজ: সাইটোপ্লাজমের কাঠামো গঠন করা ও কোষের বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলিকে পৃথক রাখা এদের প্রধান কাজ।

রাইবোজোম: কোষের সাইটোপ্লাজম এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম এর গায়ে রাইবোনিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত যে দানা গুলি থাকে, তাদের রাইবোজোম বলে। ইউক্যারিওটিক কোষের রাইবোজোম 80s প্রকৃতির হয়।
কাজ: প্রোটিন সংশ্লেষ করা।

লাইসোজোম: প্রাণীকোষের সাইটোপ্লাজমে পর্দা ঘেরা উৎসেচক পূর্ণ কতকগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র থলির মত অঙ্গানু থাকে, এদের লাইসোজোম বলে।
কাজ: এরা কোষের ভিতরে প্রবেশ করা কোন বিজাতীয় বস্তু বা প্রয়োজনে কোন কোষীয় অঙ্গাণু কে উৎসেচক ক্রিয়ার দ্বারা ধ্বংস করে বলে এগুলি কে আত্মঘাতী থলি বা suicide bag বলে।

ভ্যাকুওল: কোষের সাইটোপ্লাজমে অসংখ্য ছোট-বড় তরল পদার্থ পূর্ণ গহবর থাকে। তাদের বলে ভ্যাকুওল বলে। প্রাণী কোষের ভ্যাকুওলগুলি আকারে ছোট এবং সংখ্যায় বেশি থাকে। তবে অনেক সময় প্রাণী কোষে ভ্যাকুওল থাকে না। পরিণত উদ্ভিদ কোষে সংখ্যায় বেশি  ভ্যাকুওল থাকে তবে পরিণত অবস্থায় উদ্ভিদ কোষে দু একটা বড় আকারের ভ্যাকুওল দেখা যায়। এর চারপাশে কোষের পরিধি বরাবর পাতলা পাতলা প্রোটোপ্লাজম এর বিন্যাসকে প্রাইমোরডিয়াল ইউট্রিকল বলে।
কাজ: বিভিন্ন পদার্থ সঞ্চয় করা এর মূল কাজ। উদ্ভিদ কোষের ক্ষেত্রে কোষ গহ্বরের কোষরস সঞ্চিত থাকে।

Share this

Related Posts

Comment us

1 thought on “কোষ কাকে বলে? | ইউক্যারিওটিক কোষ ও প্রোক্যারিওটিক কোষ”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook Page