Skip to content

অযৌন জনন কাকে বলে | অযৌন জননের পদ্ধতি আলোচনা করো

অযৌন জনন কাকে বলে অযৌন জননের সুবিধা ও অসুবিধা

জীবন বিজ্ঞানের আগের পোস্ট টিতে আমরা জেনেছি জনন এবং জননের প্রকারভেদ সম্পর্কে, আজ আমার এই পোস্ট টিতে আলোচনা করবো জননের একটি প্রকার ভেদ অযৌন জনন সম্পর্কে, জানবো অযৌন জননের বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ, ইত্যাদি

অযৌন জনন [Asexual Reproduction] কাকে বলে

যে জনন প্রক্রিয়ায় গ্যামেট উৎপাদন ছাড়াই জনিতৃ জীবের দেহকোশ বিভাজিত হয়ে অথবা রেণু তৈরির মাধ্যমে অপত্য জীবের সৃষ্টি হয়, তাকে অযৌন জনন বলে।

অযৌন জননের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of asexual reproduction)

1) একটি মাত্র জনিতৃ জীবই অযৌন জননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করতে পারে। জীবদেহের কোনো অংশ প্রত্যক্ষভাবে বা রেণু উৎপাদনের মাধ্যমে অযৌন জনন সম্পন্ন করে।

2) অযৌন জনন প্রক্রিয়া মাইটোসিসের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় অর্থাৎ মিয়োসিসের প্রয়োজন নেই।

3) অযৌন জনন প্রক্রিয়ায় গ্যামেট উৎপাদন বা নিষেক পদ্ধতি অনুপস্থিত। অযৌন জননের মাধ্যমে জীবন চক্র সম্পন্ন হয় অর্থাৎ হ্যাপ্লয়েড (n) ও ডিপ্লয়েড (2n) দশার পর্যায়ক্রমিক আবর্তন ঘটে না।

4) অপত্য জীবগুলি মাতৃজীবের সমবৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয় যাদের ক্লোন (Clone) বলে।

5) মিয়োসিস বা ক্রসিংওভার অনুপস্থিত বলে নতুন বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি হয় না অর্থাৎ জীবের অভিব্যক্তি ঘটে না

6) যৌন জননের তুলনায় এটি সহজ ও সরল পদ্ধতি। অল্প সময়ে দ্রুত হারে বংশবৃদ্ধি ঘটে।

7) অনুকূল পরিবেশে অযৌন জনন সম্পন্ন হয়।

 

অযৌন জনন কোথায় ঘটে ?

ঘটনাস্থল (Occurrence):

অযৌন জনন প্রধানত এককোশী জীবদেহে এবং কিছু বহুকোশী জীবদেহে সম্পন্ন হয়।

প্রাণী : অ্যামিবা (Amoeba), প্যারামেসিয়াম (Paramoecium), ইউক্লিনা (Euglena) নামক প্রোটোজোয়া ; সাইকন ( Sycon ) — স্পঞ্জ , হাইড্রা ( Hydra ) — নিডারিয়া ; প্লানেরিয়া ( Planaria ) — চ্যাপ্টা কৃমি , সাইলিস ( Syllis ) — অ্যানিলিডা; তারামাছ ( Asteras ) — একাইনোডার্মাটা; স্যালপা ( Salpa ) – ইউরোকর্ডাটা।

উদ্ভিদ : ইস্ট (Saccharomyces), পেনিসিলিয়াম (Penicillium) — ছত্রাক ; ক্ল্যামাইডোমোনাস ( Chlamydomonas ), শৈবাল ; ফিউনেরিয়া ( Funaria ) — মস ; ড্রায়োপটেরিস ( Dryopteris ) — ফার্ন ; কয়েকপ্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ, যেমন— কচুরিপানা , আলু , আখ , কলা , আদা , ডালিয়া ইত্যাদি।

অযৌন জননের প্রকার (Types of Asexual Reproduction) :

অযৌন জনন বিভিন্নভাবে সম্পন্ন হয়, যথা –

1. বিভাজন ,

2. বাড়িং বা কোরকোদ্গম ,

3. গেমিউল গঠন ,

4 , খণ্ডীভবন ,

5. পুনরুৎপাদন ,

6. রেণু উৎপাদন ,

7. অ্যাপোমিক্সিস।

 

1) বিভাজন (Fission) : বেশিরভাগ এককোশী জীব, কতিপয় বহুকোশী জীব বিভাজন প্রক্রিয়ায় অযৌন জনন সম্পন্ন করে। এই প্রক্রিয়ায় মাতৃজীব দুই বা ততোধিক অপত্য জীব সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে অপত্য জীব তার মাতৃজীবের অনুরূপ হয়। বিভাজন প্রক্রিয়া দ্বি-বিভাজন ও বহুবিভাজন পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়।

2) রেণু উৎপাদন (Sporulation) : যে প্রক্রিয়ায় রেণু উৎপাদনের মাধ্যমে উদ্ভিদ অযৌন জনন সম্পন্ন করে তাকে স্পোরিউলেশন বলে। রেণু হল এককোশী, পাতলা প্রাচীর বিশিষ্ট অযৌন জননের একক যা অঙ্কুরিত হয়ে প্রত্যক্ষভাবে অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে। নিম্ন শ্রেণির উদ্ভিদেরাই রেণুর মাধ্যমে অযৌন জনন ঘটায়।

3) কোরকোদ্গম বা বাডিং (Budding) : জনিতৃ দেহ থেকে উৎপন্ন কোরক বা বাড (bud) থেকে বংশবিস্তারকে বাড়িং বা কোরকোদ্গম বলে।

  • ইস্টের বাডিং (Budding of Yeast) : ইস্টের অসমান বিভাজন দ্বারা একটি ক্ষুদ্র কোরক সৃষ্টি হয়। প্রথমে কোরকটি মাতৃদেহে সংলগ্ন থাকে, পরে কোরক মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য ইস্ট গঠন করে। কখনো – কখনো ইস্টের একাধিক কোরক সৃষ্টি হয়, যেগুলি পুনরায় অপত্য কোরক সৃষ্টি করে। ইস্টে এরকম কোরক গঠন টরুলা ( Torula histolytica ) প্রাণীর মতো দেখায়। তাই ইস্টের এই দশাকে টরুলা দশা ( Torula stage ) বলে এবং পদ্ধতিকে টরুলেশন ( Torulation ) বলে।

 

4) গেমিউল (Gemmule formation) : মিঠে জলের স্পঞ্জ স্পঞ্জিলার ( Spongilla ) দেহের অভ্যন্তরে কোরক সৃষ্টি হয়। এই প্রকার বাডিংকে এন্ডোজেনাস (endogenous) বা ইন্টারনাল বাডিং (Internal budding) বলে। বাড বা কোরকগুলিকে গেমিউল ( gemmule ) বলে। প্রতিটি গেমিউল কতকগুলি কোশ (archeocytes) নিয়ে গঠিত, যা রক্ষাত্মক আবরণী বেষ্টিত থাকে। অনুকূল পরিবেশে আরকিওসাইট কোশগুলি মাইক্রোপাইলের (micropyle) নিকট এসে নতুন কলোনি গঠন করে।

5) খণ্ডীভবন (Fragmentation) : জনিতৃ দেহ কয়েকটি খণ্ডে ভেঙে যায়। প্রতিটি দেহখণ্ডক থেকে অপত্য জীব সৃষ্টি হয়।

এইরকম ঘটনা যেসব প্রাণী ও উদ্ভিদে দেখা যায় তারা হল—

প্রাণী (Animals) : স্পঞ্জ , সাগরকুসুম , তারামাছ ইত্যাদি।

উদ্ভিদ (Plants) : স্পাইরোগাইরা ( Spirogyra— শৈবাল ), রাইজোপাস ( Rhizopus- ছত্রাক ) , রিকসিয়া ( Riccia— মস ), সিলাজিনেলা ( Selaginella— ফার্ন )।

6) পুনরুৎপাদন ( Regeneration ) : জীবদেহের কোনো কাটা অংশ থেকে পূর্ণাঙ্গ জীবের পুনর্গঠনকে পুনরুৎপাদন বলে । যখন কোনো খণ্ডিত অংশ থেকে সম্পূর্ণ জীব সৃষ্টি হয় তখন তাকে মরফোল্যাক্সিস (morpholaxis) এবং হারানো অংশের পুনঃস্থাপনকে এপিমরফোসিস (epimorphosis) বলে।

অ্যামিবা , স্পঞ্জ , হাইড্রা , প্লানেরিয়া প্রভৃতি প্রাণীদের পুনরুৎপাদন দেখা যায়।

আরও পড়ুন:- 

 

অযৌন জননের সুবিধা (Advantages of Asexual Reproduction) :

( i ) এই প্রকার জননে একটি জনিতৃ জীব থেকে বংশবিস্তার সম্ভব। সুতরাং , যৌনমিলনের প্রয়োজন হয় না।

( ii ) এটি খুব সরল পদ্ধতি যা কেবল অ্যামাইটোসিস ও মাইটোসিস কোশ বিভাজন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়।

( iii ) এই প্রকার জননে দ্রুত বংশবিস্তার ঘটে।

( iv ) একটিমাত্র জনিতৃ জীব থেকে অসংখ্য অপত্য জীব সৃষ্টি হয়।

( ৮ ) অপত্য জীব জিনগতভাবে ( genetically ) মাতৃজীবের সদৃশ হয়।

 

অযৌন জননের অসুবিধা (Disadvantages of Asexual Reproduction) :

i ) জিন বস্তুর মিলন না হওয়ায় প্রজাতির মধ্যে কোনো ভেদ ( variation ) পরিলক্ষিত হয় না।

ii ) প্রজাতিগত ভেদ না থাকায় এদের বিবর্তন ঘটে না।

iii ) খুব দ্রুত বিভাজন ঘটায় জীবের সংখ্যা অতিরিক্ত হারে বেড়ে গিয়ে গাদাগাদি ( over crowding ) সৃষ্টি হয়। ফলে খাদ্য ও বাসস্থানের অভাব দেখা যায়।

iv ) অযৌন জনন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন জীব পরিবেশে খাপ খাওয়াতে অক্ষম হয়।

Share this

Related Posts

Comment us

1 thought on “অযৌন জনন কাকে বলে | অযৌন জননের পদ্ধতি আলোচনা করো”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook Page