প্রিয় পাঠক গণ, আমরা জীবন বিজ্ঞানের আগের পোস্ট টিতে আলোচনা করেছি রেচন সম্পর্কে, এবং উদ্ভিদের বিভিন্ন রেচন কৌশল সম্পর্কে, জেনেছি উদ্ভিদ কি কি উপায়ে রেচন ত্যাগ করে, আজ আমরা এই পোস্টে আলোচনা করবো উদ্ভিদ রেচনে কি কি ত্যাগ করে অর্থাৎ উদ্ভিদের রেচন পদার্থ , জানবো উদ্ভিদের রেচন পদার্থ হিসাবে কি কি ত্যাগ করে। উদ্ভিদের রেচন পদার্থ কে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলি হলো –
১) উদ্ভিদের নাইট্রোজেন বিহীন রেচন পদার্থ
২) উদ্ভিদের নাইট্রোজেন যুক্ত রেচন পদার্থ
উদ্ভিদের নাইট্রোজেন বিহীন রেচন পদার্থ
উদ্ভিদের নাইট্রোজেন বিহীন রেচন পদার্থের মধ্যে প্রধান কয়েকটি রেচন পদার্থ হলো , গঁদ বা গাম , রজন বা রেজিন , তরুক্ষীর বা ল্যাটেক্স । আমরা এই প্রধান নাইট্রোজেন বিহীন রেচন পদার্থ গুলি সম্পর্কে আলোচনা করব এবং তাদের উৎস এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো ।
1. তরুক্ষীর (Latex):
তরুক্ষীর একপ্রকারের সাদা রঙের জলের মতো তরল রেচন পদার্থ। তরুক্ষীর প্রোটিন, গঁদ, রজন, উপক্ষার প্রভৃতি বস্তুর জলীয় দ্রবণ।
উৎস: বট, আকন্দ, পেঁপে, রবার, কাঁঠাল, করবী , ইত্যাদি উদ্ভিদের ক্ষীর নালিতে বা ক্ষীর কোশে জমা থাকে।
অর্থকরী গুরুত্ব:
(i) পেঁপে গাছের তরুক্ষীর প্যাপাইন নামক পদার্থ প্রোটিন পরিপাকে সাহায্য করে।
(ii) রবার গাছের তরুক্ষীর থেকে বাণিজ্যিক রবার প্রস্তুত হয়। এছাড়া তরুক্ষীর জলরোধক বস্তু হিসেবে এবং ইলেকট্রিক তারের ইনসুলেটার রূপে ব্যবহৃত হয়।
2. গঁদ (Gum) :
গঁদ একপ্রকারের জটিল কার্বোহাইড্রেট। গঁদ কোলয়েড জাতীয় পদার্থ।
উৎস: সজিনা, শিরীষ, আমড়, জিয়োল, বাবলা প্রভৃতি গাছের কাণ্ডে পাওয়া যায়।
অর্থকরী গুরুত্ব:
(i) গঁদ আঠা রূপে বই বাঁধাই ও কাঠশিল্পে ব্যবহৃত হয়। (ii) ছাপার কালি, ঔষধ, প্রসাধন সামগ্রী, জল রং প্রস্তুত করতে।
(iii) কাগজ প্রস্তুতিতে ,
(iv) দেওয়ালে চুন করার সময় গঁদ ব্যবহৃত হয়।
আরও পড়ুন:-
- উদ্ভিদের রেচন পদ্ধতি (Process of Excretion in Plants) | উদ্ভিদের রেচন ত্যাগের কৌশল
- রেচন কাকে বলে? রেচন গুরুত্ব কি?
- অযৌন জনন কাকে বলে | অযৌন জননের পদ্ধতি আলোচনা করো
3. রজন (Resins):
রজন জলে অদ্রাব্য, হালকা হলুদ রঙের সুগন্ধিযুক্ত রেচন পদার্থ।
উৎস:
(i) শাল গাছের ছালে।
(ii) পাইন গাছের কাণ্ড ও পাতার রজন নালিতে পাওয়া যায়।
অর্থকরী গুরুত্ব:
(i) কঠিন রজন বা গালা কাঠের পালিশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
(ii) গঁদ রজন ধুনা পূজা – পার্বনে ব্যবহৃত হয়,
(iii) হিং রজন রন্ধন ও ভেষজ শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
4. ট্যানিন (Tannin) :
এটি উদ্ভিদের তিক্ত কার্বনযুক্ত রেচন পদার্থ।
উৎস: চা গাছের পাতায়, হরিতকী, বয়ড়া, তেঁতুল ইত্যাদির ফলে পাওয়া যায়।
অর্থকরী গুরুত্ব:
(i) চামড়া পাকা করতে,
(ii) কালি প্রস্তুতিতে ট্যানিন ব্যবহৃত হয় ।
উদ্ভিদের নাইট্রোজেন যুক্ত রেচন পদার্থ
উপক্ষার (Alkaloids)
উদ্ভিদের নাইট্রোজেন যুক্ত রেচন পদার্থকে অ্যালকালয়েড বা উপক্ষার বলে। কুইনাইন, নিকোটিন, ডাটুরিন, রেসারপিন হল উদ্ভিদের উপক্ষার।
উৎস:
(i) কুইনাইন: সিঙ্কোনা গাছের ছাল।
(ii ) নিকোটিন: তামাক গাছের পাতায়।
(iii) ডাটুরিন: ধুতরা গাছের পাতায়।
(iv) রেসারপিন: সর্পগন্ধা গাছের মূলে।
(v) ক্যাফিন: কফি গাছের বীজে।
অর্থকরী গুরুত্ব:
(i) কুইনাইন : ম্যালেরিয়ার ওষুধ তৈরি হয়।
(ii) নিকোটিন : মাদক দ্রব্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
(iii) ডাটুরিন: হাঁপানি উপশমকারী ওষুধ তৈরি হয়।
(iv) রেসারপিন: উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ তৈরি হয় ,
(v) ক্যাফিন: ব্যথা – বেদনা উপশমকারী ওষুধ তৈরি হয়
Covered Topics: উদ্ভিদের বিভিন্ন রেচন পদার্থ, উদ্ভিদের রেচন ত্যাগের কৌশল, তরুক্ষীর কি, রজন কি, গদ কি, উপক্ষার কি, উৎস, অর্থকরী গুরুত্ব।