Skip to content

বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস ও তাদের বর্ণনা

বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস ও তাদের বর্ণনা

বায়ুমণ্ডল কী?

আমরা পৃথিবীর উপরিভাগে যেখানে বাস করি- ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে যে গ্যাসীয় আবরণ পৃথিবীতে বেষ্টন করে আছে তাকেই বায়ুমণ্ডল বলে। পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণে পৃথিবীর গায়ে লেগে আছে এবং পৃথিবীর আবর্তন করছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে প্রায় 10,000 কিলোমিটার পর্যন্ত আমাদের বিস্তৃত।  তবে এর অধিকাংশ উপাদান ভূপৃষ্ঠ থেকে 30 কিলোমিটার এর মধ্যে সীমাবদ্ধ।

বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর বা বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস

ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে বায়ুমণ্ডলকে দুইটি প্রধান অংশে ভাগ করা হয়ে থাকে
1) তাপমাত্রার তারতম্য অনুযায়ী বিভিন্ন স্তর।
2) রাসায়নিক গঠন অনুযায়ী বিভিন্ন স্তর।

বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর
বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস কি?

তারতম্য অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস

ভূপৃষ্ঠ থেকে ঊর্ধ্বে তাপমাত্রার তারতম্য অনুযায়ী বায়ুমণ্ডল কে 5 ভাগে ভাগ করা হয় এগুলি হল

ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্দ মন্ডল কি? = ট্রপোস্ফিয়ার বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নিচের স্তর। ভূপৃষ্ঠ থেকে নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় 16 থেকে 18 কিলোমিটার এবং মেরু অঞ্চলে প্রায় 8 থেকে 9 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

বৈশিষ্ট্য :
বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদানের প্রায় 75 শতাংশ এবং জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা এই স্তরে অবস্থান করে। মেঘ, বজ্রপাত, ঝড়-বৃষ্টি, তুষারপাত প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায় বলে। এই স্তরকে ক্ষুব্ধ মন্ডল বলে। ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা হ্রাসের জন্য এই স্তরকে ট্রপোস্ফিয়ার বলা হয়। সাধারণত প্রতি কিলোমিটার উচ্চতায় 6.4° সেলসিয়াস হারে উষ্ণতা হ্রাস পায়

ট্রপোপজ = ট্রপোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমায় 2-3 কিলোমিটার বিস্তৃত অঞ্চলের তাপমাত্রায় যেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না তেমনি বায়ুচলাচল তেমন হয় না। এই অংশকে ট্রপোপজ বলে। এই অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা থাকে প্রায় – 60 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড।

[আরও পড়ুন : জোয়ার ভাটা কি? কেন জোয়ার ভাটা হয় ?]

স্ট্রাটোস্ফিয়ার বা শান্ত মন্ডল কি?= ট্রপোপজ এর উপরে প্রায় 50 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরকে স্ট্যাটোস্ফিয়ার বলে।
বৈশিষ্ট্য :
1) অতি সূক্ষ্ম সামান্য ধূলিকণা ছাড়া এই স্তরে কোন জলীয়বাষ্প থাকে না। তাই আবহাওয়ার শান্ত থাকে বলে। এই স্তরকে শান্ত মন্ডল বলা হয়। এই জন্য এই স্তরের মধ্য দিয়ে জেট বিমান গুলি চলাচল করতে পারে।
2) এই স্তরের উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে।
3) এই স্তরেই 20-35 কিলোমিটার উচ্চতা মধ্যে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই এই স্তরকে অনেকেই ওজোনোস্ফিয়ার বলে।

স্ট্যাটোপোজ বা শান্তস্তর= স্ট্যাটোস্ফিয়ার এর উর্ধ্বসীমায় 2-3 কিলোমিটার বিস্তৃত অঞ্চলে। তাপমাত্রার কোন পরিবর্তন দেখা যায় না বলে। এই অঞ্চলকে শান্ত স্তর বলে। এই অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা থাকে 0°সেন্টিগ্রেড।

ওজোন স্তরের বিনাশ
স্ট্রাটোস্ফিয়ারের 20-25 কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব বেশি। এটি বর্ম হিসেবে কাজ করে। পৃথিবীর জীবজগতকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির মারাত্মক প্রভাব থেকে রক্ষা করে। ওজোন স্তরে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মে ওজনের সৃষ্টি হয়। কিন্তু ক্লোরিন, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন এর প্রভাবে বায়ুমণ্ডলের ওজোন ভেঙে যায়। এবং ওজোন স্তরের দ্রুত বিনাশ ঘটে। প্রাকৃতিক ভাবে পূরণ সম্ভব হয় না। এই ওজোন স্তরের বিনাশ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, 1970 দশকে শেষ ভাগ থেকে আন্টার্টিকার উপরে ওজোন স্তর ক্রমশ পাতলা হয়ে আসছে। একে বলা হয় আন্টার্টিকা ওজন ছিদ্র।
CFC হালকা বলে তা সহজেই উপরে উঠে যায়। এবং ওজোন স্তরে প্রবেশ করে ওজন কে ভেঙে ক্লোরিন ও অক্সিজেন সৃষ্টি করে। এর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়বে, মানুষ প্রাণী ও উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে এবং বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন ঘটবে তাই  CFC ব্যবহার হ্রাস করার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে।

মেসোস্ফিয়ার কী?
স্ট্যাটোপোজের উপরে প্রায় 80 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরকে মেসোস্ফিয়ার বলে।
বৈশিষ্ট্য:
1) এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কমতে থাকে।
2) মহাকাশ থেকে যেসব উল্কা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে, সেগুলি অধিকাংশ এই স্তরের মধ্যে পুড়ে যায়।
মেসোপোজ= মেসোস্ফিয়ার এর উপরে যে অঞ্চলে তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। সে অঞ্চলকে মেসোপোজ বলে। এ অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা থাকে প্রায় 100° সেন্টিগ্রেড।

থার্মোস্ফিয়ার বা আয়নোস্ফিয়ার কী?
মেসোপোজের উপরে প্রায় 500 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরকে থার্মোস্ফিয়ার বলে।
বৈশিষ্ট্য:
1) এই অংশে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা খুব দ্রুত হারে বাড়তে থাকে। 500 কিলোমিটার উচ্চতা প্রায় 1200 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড।
2) থার্মোস্ফিয়ার এর উপরে তাপমাত্রা একই পরিমাণ থাকে। একে সমতাপ অঞ্চল বলে। সৌর বিকিরণের রঞ্জন রশ্মি, অতিবেগুনি রশ্মি সংঘাতে বায়ুর আয়নিত হয় বলে একে আয়নোস্ফিয়ার বলে।
3) ভূপৃষ্ঠের বেতার তরঙ্গ এই অঞ্চলের আয়নিত বায়ুতে বাধা পেয়ে পুনরায় ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে।

এক্সোস্ফিয়ার কী?
থার্মোস্ফিয়ার এর উপরে প্রায় 750 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরকে এক্সোস্ফিয়ার বলে।
বৈশিষ্ট্য:
1) এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
2)এই স্তরের হিলিয়াম হাইড্রোজেন গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায়।

ম্যাগনেটোস্ফিয়ার কী?
এক্সোস্ফিয়ার এর উপরে বায়ুমণ্ডলের শেষ সীমা পর্যন্ত 22 তর্কে বায়ু স্তরকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলে।
এই অংশের বায়ুমণ্ডল ইলেকট্রন ও প্রোটন দ্বারা গঠিত চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা বেষ্টিত বলে একে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলে।

রাসায়নিক গঠন অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস

রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডল প্রধানত দুটি স্তরে বিভক্ত 1) সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার।
2) হেটেরোস্ফিয়ার।

হোমোস্ফিয়ার কি? ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে প্রায় 90 কিলোমিটার পর্যন্ত অঞ্চলে বায়ুমন্ডলের  রাসায়নিক গঠন এবং বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় একই রকম থাকে বলে এই অংশকে হোমোস্ফিয়ার বলা হয়।

হেটেরোস্ফিয়ার কি? হোমোস্ফিয়ার স্তরের উপরে বায়ুমণ্ডলের শেষ সীমা পর্যন্ত অংশে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত এবং গ্যাসীয় স্তর গুলি এমন ভাবে একরকম থাকে না বলেই অংশকে বলা হয় হেটেরোস্ফিয়ার। হোমোস্ফিয়ার রাসায়নিক গঠন অনুসারে এই স্তরকে চারটি উপগ্রহ উপ বিভাগে ভাগ করা হয়। 

 

Share this

Related Posts

Comment us

3 thoughts on “বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস ও তাদের বর্ণনা”

  1. Pingback: জলের ব্যতিক্রান্ত প্রসারণ কি? (Anomalous Expansion of water) – Studious

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook Page