Skip to content

জোয়ার ভাটা কি? কেন জোয়ার ভাটা হয় ?

জোয়ার ভাটা কি? কেন জোয়ার ভাটা?

 

হ্যালো ভিজিটর্স, আজ আবার আমার হাজির হয়েছি নতুন কিছু topic নিয়ে। আজ আমরা আলোচনা করব “জোয়ার ভাটা” অধ্যায় সম্পর্কে।

চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণ এর ফলে সমুদ্রের জল নিয়মিতভাবে এক জায়গায় ফুলে ওঠে এবং অন্য জায়গায় নেমে যায় প্রধানত চাঁদের আকর্ষণে সমুদ্র জলের ফুলে ওঠাকে জোয়ার বলে।
জোয়ারের ফলে সমুদ্রের জল যেখানে ফুলে ওঠে, তার সমকোণে অবস্থিত স্থানে সমুদ্রের জল নেমে যায় একে ভাটা বলে।

জোয়ার ভাটা কেন হয় ?

দুটি প্রধান কারণে জোয়ার ভাটা হয় 1) পৃথিবীর আবর্তন ও 2) পৃথিবীর উপর সূর্যের চাঁদের আকর্ষণ।

পৃথিবীর আবর্তন : পৃথিবীর মেরুদন্ড নিজের চারিদিকে নির্দিষ্ট গতিতে অবিরাম ঘুরে চলেছে। পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে কেন্দ্রবিমুখ ও বহির্মুখী শক্তি উৎপন্ন হয়। এই বহির্মুখী শক্তির প্রভাবে সমুদ্রের জল বাইরের দিকে বেরিয়ে যেতে চাই। চাঁদের আকর্ষণ সমুদ্রের যেখানে জোয়ার হয় তার ঠিক বিপরীত দিকে আকর্ষণ এর তুলনায় কেন্দ্রবিমুখ বলের প্রভাব বেশি হয় ফলে সমুদ্রের ওই স্থানে জোয়ার হয়। সমুদ্রে পরস্পর বিপরীত যে দুটি স্থানে জোয়ার হয় তার সমকোণে অবস্থিত দুটি স্থানে তখন ভাটা হয়।

পৃথিবীর উপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ : সূর্যের ভর চাঁদের তুলনায় প্রায় 2 কোটি 60 লক্ষ গুণ বেশি। কিন্তু চাঁদের তুলনায় সূর্য প্রায় 390 গুন দূরে অবস্থিত। চাঁদের ভর কম হওয়া সত্বেও সূর্যের তুলনায় চাঁদ পৃথিবীর অনেক কাছে রয়েছে বলে, পৃথিবীর উপর চাঁদের আকর্ষণ সূর্যের তুলনায় প্রায় দু গুণ বেশি তাই প্রধানত চাঁদের আকর্ষণে জোয়ার হয়।

[আরও পড়ুন : স্থিতি ও গতি ( Rest and Motion ) কি?]

মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ার কি?

পৃথিবী তার অক্ষের উপর ঘুরতে ঘুরতে ভূপৃষ্ঠের যেদিক চাঁদের সরাসরি মুখোমুখি হয় সেই দিকে চাঁদের আকর্ষণ বেশী বলে সমুদ্রের জল ফুলে উঠে যে জোয়ার সৃষ্টি হয়। তাকে মুখ্য জোয়ার বলে।
পৃথিবী তার অক্ষের উপর ঘুরতে ঘুরতে ভূপৃষ্ঠের যেদিক চাঁদের সরাসরি বিপরীত দিকে চলে আসে সেই দিকে চাঁদের আকর্ষণ এর তুলনায় পৃথিবীর কেন্দ্র বিমুখ বলে প্রভাব বেশি পড়ে ফলে সমুদ্রের জল ফুলে উঠে যে জোয়ারের সৃষ্টি করে তাকে গৌণ জোয়ার বলে।

জোয়ার ভাটা কি ? কখন জোয়ার ভাটা হয় ? ভরা কটাল ও মরা কটাল কি ?
জোয়ার ভাটা কি ?

জোয়ার ভাটার সময়ের ব্যবধান :

পৃথিবীর মেরু রেখা চারিদিকে একবার ঘুরতে সময় নেয় 23 ঘন্টা 56 মিনিট 4 সেকেন্ড। অর্থাৎ 23 ঘন্টা 56 মিনিট 4 সেকেন্ড সেকেন্ডে পৃথিবীর প্রত্যেকটি দ্রাঘিমা একবার করে চাঁদের সরাসরি সামনে আসে। ফলে যেখানে মুখ্য জোয়ার হয় মুখ্য জোয়ার বিপরীত স্থানে গৌণ জোয়ার হয়। তাই প্রায় 24 ঘন্টায় একই জায়গায় 2 বার জোয়ার এবং 2 বার ভাটা হয়

পৃথিবীর কোন অংশেই প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাটা হয় না কেন?

পৃথিবীর কোন অংশে প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাটা হয় না এর কারণ হলো। পৃথিবী যেমন নিজের মেরু রেখার চারিদিকে 360 ডিগ্রি 24 ঘন্টায় একবার আবর্তন করে, চাঁদও তেমনি 27 দিনে পৃথিবীর চারিদিকে একবার ঘোরে। সুতরাং 24 ঘন্টায় চাঁদ পৃথিবীর কক্ষপথে 360÷27=13 ডিগ্রী পথ অতিক্রম করে বা 24 ঘন্টায় চাঁদ পৃথিবীর কক্ষপথ পৃথিবীর একবার আবর্তন চাঁদ প্রায় 13° পথ এগিয়ে যায়। এই 13° পথ অতিক্রম করতে পৃথিবীর সময় লাগে প্রায় 52 মিনিট। অর্থাৎ যে দ্রাঘিমারেখা টি চাঁদের সামনে আছে 24 ঘন্টা পরে 360° অতিক্রম করে এসেই দ্রাঘিমার পূর্ব অবস্থানে ফিরে আসার মধ্যে 13° পথ এগিয়ে যায়। ওই দ্রাঘিমারেখা টি পুনরায় তাদের সামনে আসার জন্য তাই আরো 13 ডিগ্রী বেশি আবর্তন করতে হয়। এর জন্য ওই দ্রাঘিমারেখা চাঁদের সামনে আসতে সময় লাগে আরও 52 মিনিট বেশি। তাই পৃথিবীর কোন নির্দিষ্ট স্থানে প্রত্যেক মুখ্য ও গৌণ জোয়ার এর পরবর্তী মুখ্য ও গৌণ জোয়ার আরও 52 মিনিট পর অনুষ্ঠিত হয়। কোন স্থানে এই মুহূর্তে মুখ্য জোয়ার হলে, পরবর্তী মুখ্য জোয়ার হবে 24 ঘন্টা 52 মিনিট পরে।
পরবর্তী গৌণ জোয়ার হবে 12 ঘন্টা 26 মিনিট পরে
পরবর্তী ভাটা হবে 6 ঘন্টা 13 মিনিট পর।

ভরা কটাল ও মরা কটাল কি?

ভরা কটাল কী? : অমাবস্যা, পূর্ণিমা ও পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবী, সূর্য ও চাঁদ যখন একই সরলরেখায় চলে আসে তখন চাঁদ ও সূর্যের প্রবল আকর্ষণে মুখ্য জোয়ার আরও তেজি হয়ে ওঠে। এই তেজী মুখ্য জোয়ারকে ভরা কটাল বা  তেজ কটাল বলে। ভরা জোয়ার সবচেয়ে জল বেশি ফুলে ওঠে।


মরা কোটাল কী? :  অমাবস্যা ও পূর্ণিমার পরে শুক্লপক্ষ, কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পৃথিবীর অবস্থান অনুসারে সূর্য ও চাঁদ পরস্পরের সমকোণে অবস্থান করে। ফলে চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ সমুদ্র জলের ওপরে চাঁদ পৃথিবীর কাছে রয়েছে বলে সূর্যের আকর্ষণের তুলনায় চাঁদের আকর্ষণ বেশি হয় কিন্তু সেই আকর্ষণ অনেক দুর্বল হয়। তাই ভূপৃষ্ঠের যেদিকে চাঁদের মুখোমুখি থাকে সেখানে জোয়ার হলেও জলস্ফীতি কম হয় এভাবে প্রতি মাসে অষ্টমী তিথিতে জোয়ার হয় তাকে মরা কাটাল বলে।

অ্যাপোজি, পেরিজি ও সিজিগি বলতে কী বোঝো ?

অ্যাপোজি কি? :  চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার পথে পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে দূরত্ব যখন সবচেয়ে বেশি হয় তখন চাঁদের দূরঅবস্থানকে অ্যাপোজি অপভু বলে।

পেরিজি কী? : চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার পথে পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে দূরত্ব যখন সবচেয়ে কম হয়। তখন চাঁদের ঐ নিকটতম অবস্থানকে পেরিজি বলে।

সিজিগি কি? : পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য যখন পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় একই সরলরেখায় পরস্পর বা একে অন্যের বিপরীতে অবস্থান করে তখন এই বিশেষ অবস্থাকে সিজিগি বলে ।

বানডাকা কি? : জোয়ারের সময় সমুদ্রের জল প্রবল বেগে নদীর মোহনা থেকে নদীর প্রবাহের বিপরীত মুখে নদীখাত এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে যে জলোচ্ছ্বাস হয়। তাকে বানডাকা বা বান বলে। বর্ষাকালে ভরা নদী মোহনায় মোহনার কাছাকাছি অংশে বান ডাকে।

জোয়ার ভাটার ফলাফল :

1) জোয়ারে নদীতে জল ঢুকে নৌ চলাচলের সুবিধা হয়।
2) ভাটায় নদীর জল পলি পরিবহন করে সমুদ্রে নিয়ে যায়। নদীখাত পলিমুক্ত হয়।
3) নদীতে সমুদ্রের মাছ ধরার সুবিধা হয়।
4) জোয়ার ভাটা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

আজ এখানেই শেষ হল “জোয়ার ভাটা” অধ্যায় । পরবর্তী পোস্ট এর জন্য নিয়মিত visit করুন আমাদের এই blog পেজ টিতে। ধন্যবাদ।

Share this

Related Posts

Comment us

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook Page