নিউটন নভোবস্তুর (আকাশে দেখা যায় এমন বস্তু যেমন : উল্কা , ধূমকেতু , নীহারিকা ইত্যাদি) প্রতিবিম্ব নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে গিয়ে আবিষ্কার করেন যে, প্রতিবিম্বের কিনারা বা প্রান্তগুলি রঙিন। প্রথমে, এর কারণ হিসেবে ফোকাসিং লেন্সের ত্রুটির কথা ভাবলেও পরবর্তীকালে কাচনির্মিত প্রিজম দ্বারা দীর্ঘ পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে তিনি সিদ্ধান্তে আসেন যে, সূর্যালোক প্রকৃতপক্ষে কিছু রঙিন আলোর সমষ্টি ( বর্ণালী)।
বর্ণালী কাকে বলে? (What is Spectrum)
বর্ণালী (Spectrum) : প্রিজম বা কোনো বিচ্ছুরক মাধ্যমের মধ্য দিয়ে সাদা আলোর বিচ্ছুরণের ফলে পর্দায় যে সাতটি বর্ণের আলোকপটি বা বর্ণপটি গঠিত হয়, তাকে বর্ণালি বলে।
বর্ণালির উপাদান : প্রিজম দ্বারা বিশ্লিষ্ট হওয়ার ফলে সাদা আলো পর্দায় সাতটি বর্ণবিশিষ্ট এক আলোকপটি বা বর্ণালী গঠন করে। নীচের থেকে উপরের দিকে বর্ণগুলির উপস্থিতির বেগুনি, নীল , আকাশি নীল , সবুজ , হলুদ , কমলা ও লাল। এই সাতটি বর্ণই হল সাদা আলোর বর্ণালির উপাদান।
বেনীআসহকলা : বর্ণালী গঠনকারী সাতটি বর্ণের আদ্যাক্ষর পরপর সাজিয়ে যে অনুক্রম (Sequence) গঠিত হয়, তাকেই বাংলায় ‘বেনীআসহকলা ‘ বলে। আবার , বর্ণগুলির ইংরেজি ( Violet, Indigo, Blue, Green, Yellow, Orange, Red ) আদ্যাক্ষরগুলি নিয়ে গঠিত ক্রমটিকে বলা হয় ‘ VIBGYOR
শুদ্ধ বর্ণালী কাকে বলে? (What is Pure Spectrum)
শুদ্ধ বর্ণালী (Pure Spectrum) : যে বর্ণালিতে উপস্থিত বর্ণগুলি পরস্পরের সঙ্গে অভিলেপন (Overlapping) না ঘটিয়ে পৃথক পৃথক স্থান দখল করে এবং বর্ণগুলিকে স্পষ্টভাবে দেখা যায় , তাকে শুদ্ধ বর্ণালী বলে । যেমন – গ্রেটিং বর্ণালি, কম্প্যাক্ট ডিস্ক (CD) দ্বারা সৃষ্ট বর্ণালি ইত্যাদি।
শুদ্ধ বর্ণালী গঠন : বিজ্ঞানী ফ্রনহফার উদ্ভাবিত লেন্স ও প্রিজ্ম সহযোগে গঠিত বিশেষ ব্যবস্থার সাহায্যে শুদ্ধ বর্ণালি গঠন করা যায়। চিত্রানুযায়ী, S একটি সূক্ষ্ম রেখাছিদ্র (Slit) যা L , উত্তল লেন্সের ফোকাসে অবস্থিত এবং এর মধ্য দিয়ে নির্গত আলোকরশ্মি L , উত্তল লেন্সের মধ্য দিয়ে গিয়ে সমান্তরাল আলোকরশ্মিতে পরিণত হয়। P একটি প্রিজম যা মধ্যবর্ণ অর্থাৎ, হলুদ বর্ণের রশ্মির ন্যূনতম চ্যুতির অবস্থানে বসানো আছে। আপতিত সমান্তরাল সাদা রশ্মি প্রিজমের মধ্য দিয়ে গিয়ে বিভিন্ন বর্ণে বিশ্লিষ্ট হয়ে যায়। একই বর্ণের নির্গত আলোকরশ্মিগুলি পরস্পর সমান্তরাল হয় এবং L , উত্তল লেন্স দ্বারা প্রতিসৃত হয়ে L , লেন্সের ফোকাসতলে রাখা পর্দা M- এর ওপর মিলিত হয়। L2 লেন্স সব বর্ণের রশ্মিগুলিকে পৃথক পৃথকভাবে পর্দার ওপর কেন্দ্রীভূত করে। তাই, পর্দায় সাতটি বর্ণকে পৃথকভাবে পাওয়া যায়। একে শুদ্ধ বর্ণালী বলে।
শুদ্ধ বর্ণালী গঠনের শর্ত : রেখাছিদ্র খুব সরু হওয়া আবশ্যক। ছিদ্রের বেধ বেশি হলে তাকে বহুসংখ্যক সরু রেখাছিদ্রের সমন্বয় রূপে বিবেচনা করা যায়, যারা পৃথক পৃথক বর্ণালী গঠন করে। এই বর্ণগুলি সমাপতিত হয়ে অশুদ্ধ বর্ণালী সৃষ্টি করে। ও প্রিজমটিকে এমনভাবে বসানো প্রয়োজন, যাতে এর প্রতিসারক প্রান্ত রেখাছিদ্রের দৈর্ঘ্যের সমান্তরাল হয়। ও রেখাছিদ্র থেকে L , উত্তল লেন্সের দূরত্ব লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্যের সমান হওয়া দরকার , যাতে প্রিজমে আপতিত রশ্মিগুচ্ছ সমান্তরাল হয় । এর ফলে প্রিজ্জ্ম থেকে নির্গত একই বর্ণের রশ্মিগুলি পরস্পর সমান্তরাল হবে। ও একই বর্ণের বিভিন্ন সমান্তরাল রশ্মিগুলিকে পর্দায় ফোকাস করার জন্য পর্দাটিকে L2 লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্যের সমান দূরত্বে রাখতে হবে। প্রিজমটিকে, হলুদ বর্ণের জন্য ন্যূনতম চ্যুতির অবস্থানে রাখতে হবে, যাতে অন্যান্য বর্ণের রশ্মিগুলির চ্যুতিও প্রায় ন্যূনতম হয় এবং সকল রশ্মিগুচ্ছকে একত্রে পর্দার বিভিন্ন অংশে ফোকাস করা যায়।
ব্যবহৃত লেন্সগুলি অবর্ণক (Achromatic) হওয়া বাঞ্ছনীয়, যাতে তাদের মধ্য দিয়ে যাওয়ার ফলে আলোর বিচ্ছুরণ না হয় এবং বর্ণাপেরণজনিত ত্রুটি না আসে।
আরও পড়ুন:
- প্রিজমের চ্যুতি কোণের রাশিমালা | প্রিজমের চ্যুতি কোণ কাকে বলে
- প্রতিবিম্ব কাকে বলে | প্রতিবিম্ব কত প্রকার ও কি কি |সদবিম্ব কাকে বলে | অসদবিম্ব কাকে বলে
- মায়োপিয়া | হাইপারমেট্রোপিয়া | মায়োপিয়া ও হাইপারমেট্রোপিয়া কারণ ও প্রতিকার
অশুদ্ধ বর্ণালী কাকে বলে? (What is Impure Spectrum)
অশুদ্ধ বর্ণালী ( Impure Spectrum ) : যে বর্ণালীতে এক বর্ণের আলো অন্য বর্ণের আলোর সঙ্গে অভিলেপিত হওয়ার ফলে প্রত্যেকটি বর্ণ স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা যায় না, তাকে অশুদ্ধ বর্ণালি বলে। যেমন–প্রিজ্ম দ্বারা গঠিত বর্ণালি, রামধনু ইত্যাদি।
অশুদ্ধ বর্ণালী গঠন : প্রিজ্ম বা যে -কোনো বিচ্ছুরক মাধ্যমের মধ্য দিয়ে সাদা আলো পাঠিয়ে যে বর্ণালী সৃষ্টি করা যায় , সেটি হল অশুদ্ধ বর্ণালি। এক্ষেত্রে বিন্দু আলোক উৎস থেকে আগত বিভিন্ন সাদা প্রিজমের রশ্মি প্রতিসারক তলের ভিন্ন বিন্দুতে আপতিত হয় এবং বিচ্ছুরণের ফলে পর্দায় পৃথক পৃথক বর্ণালি গঠন করে। একটি বর্ণালির কিছু অংশ অপর একটি বর্ণালির ওপর আপতিত হয়ে অভিলেপন অঞ্চল সৃষ্টি করে। ফলে , কোনো বর্ণের পটির প্রান্ত বা কিনারা স্পষ্ট হয় না। একারণেই পর্দায় অশুদ্ধ বর্ণালী গঠিত হয়।
আমাদের বল্গ এ পোস্ট লিখতে যোগাযোগ করুন আমাদের দেওয়া নিচেই email বা ফোন নম্বর এ