প্লবতা কাকে বলে?
প্লবতা (Buoyancy) : স্থির তরল বা গ্যাসীয় পদার্থে কোনাে বস্তুকে আংশিক বা সম্পূর্ণ নিমজ্জিত করলে ওই বস্তুর ওপর সংশ্লিষ্ট তরল একটি খাড়া ঊর্ধ্বমুখী বল প্রয়ােগ করে, যা নিমজ্জিত বস্তুর ওজনকে আংশিক বা সম্পূর্ণ প্রতিমিত (balance) করতে চায়। তরলের দেওয়া এই খাড়া ঊর্ধ্বমুখী বলকেই প্লবতা বলে।
Table of contents
প্লবতার বৈশিষ্ট্য:
1) প্লবতা বল সর্বদা ওজনের বিপরীতে অর্থাৎ , খাড়া ঊর্ধ্বাভিমুখে ক্রিয়া করে।
2) প্লবতার মান বস্তু দ্বারা অপসারিত তরলের ওজনের সমান। তরলে নিমজ্জিত বস্তুর আয়তনের ওপর প্লবতার মান নির্ভর করে।
3) বস্তুর নিমজ্জিত অংশের আয়তন বেশি হলে বস্তু দ্বারা অপসারিত প্রবাহীর ( তরল,গ্যাস ) ওজনও বেশি হয়। ফলে , প্লবতার মানও বাড়ে।
4) তরলের ঘনত্ব বেশি হলে প্লবতার মানও বাড়ে, কারণ— ঘনত্ব বেশি হলে বস্তুর নিমজ্জিত অংশ দ্বারা অপসারিত প্রবাহীর ওজনও বাড়ে । ফলে , প্লবতার মানও বেড়ে যায়।
5) প্লবতার মান তরলের মধ্যে নিমজ্জিত বস্তুর নিমজ্জনের গভীরতার ওপর নির্ভর করে না। স্থির তরলে বা গ্যাসে আংশিক বা সম্পূর্ণ নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসমান কোনাে বস্তুর ওজন তার ওপর ক্রিয়াশীল প্লবতা বলের সমান হয় ।
- আর্কিমিডিসের নীতি ব্যাখা | আর্কিমিডিসের সূত্রের প্রয়োগ
- জলের ব্যতিক্রান্ত প্রসারণ কি? (Anomalous Expansion of water)
- তাপ সঞ্চালন কাকে বলে? | তাপ সঞ্চালনের কয়টি প্রক্রিয়া ও কি কি
প্লবতা রাশিমালা : আংশিক বা পূর্ণ নিমজ্জিত বস্তুর উপর তরল বা গ্যাস দ্বারা প্রযুক্ত উর্ধ্বমুখী ঘাতকেই বলা হয় উধ্বঘাত বা প্লবতা।
ধরা যাক , একটি নিরেট আয়তাকার ঘনক লম্বভাবে কোনাে তরলে পূর্ণ নিমজ্জিত অবস্থায় আছে । ঘনকটির AB ও CD প্রান্ত দুটি তরলের মুক্ত তলের সঙ্গে সমান্তরাল এবং তারা যথাক্রমে h1 , ও h2 , গভীরতায় অবস্থান করে। ঘনকটির প্রত্যেক প্রান্তের উপর তরল লম্ব অভিমুখে ঘাত প্রয়ােগ করে।
AD ও BC- এর উপর অনুভূমিক দিকে প্রযুক্ত পার্শ্বঘাত পরস্পর সমান ও বিপরীত হওয়ায় পরস্পরকে প্রতিমিত করে, কিন্তু ABFE এবং DCGH তলের গভীরতা ভিন্ন হওয়ায় তাদের উপর প্রযুক্ত ঘাত সমান হয় না।
ঘনকটির প্রত্যেক তলের ক্ষেত্রফল a হলে, ABFE তলের উপর যে – কোনাে বিন্দুতে তরলের দেওয়া নিম্নচাপ = hdg , l যেখানে , d= তরলের ঘনত্ব।
ABFE তলে প্রযুক্ত নিম্নঘাত = h1dg×a
একইভাবে ঘনকের DCGH তলের প্রত্যেক বিন্দুতে তরল দ্বারা প্রযুক্ত উর্ধ্বচাপ h2dg এবং ওই তলে প্রযুক্ত উধ্বঘাত h2dg×a ৷
h2 > h1 ; সুতরাং , ঊধ্বর্ঘাতের মান নিম্নঘাত অপেক্ষা বেশি , ফলকটির উপর প্রযুক্ত মােট ঊর্ধ্বমুখী ঘাত : ( h2 – h1 ) dg×a = ldg×a [ ( h – h৭ ) = ঘনকের বাহুর দৈর্ঘ্য = l]
আবার , ঘনকের প্রত্যেক তলের ক্ষেত্রফল a = L^2 উধ্বমুখী ঘাত বা প্লবতা = ldg×a= ldg×l^2 = pgl^3 = ঘনক দ্বারা অপসারিত সমআয়তন জলের ওজন।
অসম আকৃতির যে – কোনাে বস্তুকেও এরূপ অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘনকের সমষ্টি বলে কল্পনা করা যায় । সুষম বা অসম আকৃতির যে – কোনাে ঘনবস্তুর উপর ক্রিয়াশীল প্লবতা বলের মান বস্তুটি দ্বারা অপসারিত সমআয়তন তরলের ওজনের সমান ।
প্লবতা কেন্দ্র (Centre of buoyancy) : কোনাে তরলে নিমজ্জিত বস্তুর উপর তরলের প্লবতা যে বিন্দুতে ক্রিয়া করে , তাকে প্লবতা কেন্দ্র বা ভাসন কেন্দ্র বলে।
ভাসন ও নিমজ্জন কাকে বলে? ভাসন ও নিমজ্জনের শর্তগুলি বিবৃত করাে।
ভাসন (Floatation) : তরলে অদ্রবণীয় কোনাে বস্তু তরলের মধ্যে পাত্রের তলদেশে না পৌছে যে – কোনাে অবস্থানে। স্থির হয়ে থাকার ঘটনাকে বলা হয় ভাসন।
ভাসন দুভাবে হতে পারে-
1) তরলের মধ্যে বস্তুর কিছু অংশ ও বাকি অংশ তরলের বাইরে রেখে ভাসন অর্থাৎ , আংশিক নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসন ( যেমন- বরফ , কর্ক , শুকনাে নারকেল ইত্যাদির জলে ভাসমান অবস্থা ) এবং
2) জলের মধ্যে বা তরলের মধ্যে না ডুবে পূর্ণ নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসন ( যেমন- ভেজা কাঠ , ডাব ইত্যাদির জলে ভাসমান থাকার ঘটনা )।
নিমজ্জন (Immersion) : তরলের মধ্যে প্রবেশ করে কোনাে বস্তুর ওই তরলের তলদেশে পৌছে যাওয়ার এবং সেই অবস্থানে স্থির হয়ে থাকার ঘটনাকে বলা হয় নিমজ্জন।
ভাসনের শর্ত : বস্তুকে স্থির তরলে আংশিক বা সম্পূর্ণ নিমজ্জিত করলে বস্তুটির ওপর দুটি বল কাজ করে। একটি, বস্তুর ওজন ( W ) , যার অভিমুখ খাড়া নীচের দিকে ও অন্যটি , বস্তুর ওপর তরলের দেওয়া উধ্বঘাত বা প্লবতা (W1), যা খাড়া উপরের দিকে ক্রিয়াশীল। এই দুই বলের মানের ওপর নির্ভর করে দুটি অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।
আংশিক নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসন : প্লবতার মান বস্তুর ওজন অপেক্ষা বেশি ( W1 > W ) হলে বস্তু তার আয়তনের কিছু অংশ বাইরে রেখে ভাসে।
পূর্ণ নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসন : প্লবতার মান বস্তুর ওজনের সমান অর্থাৎ , W1, = W ,।
বস্তু তরলের মধ্যে ডুবে থেকে এ নিমজ্জলের শর্ত : প্লবতার মান বস্তুর ওজন অপেক্ষা কম ( W1 , < W )। এই অবস্থায় বস্তু তরলের মধ্যে সম্পূর্ণ ডুবে যাবে ।
Pingback: তরলের চাপ (Pressure of liquid) কাকে বলে? কোনো বিন্দুতে তরলের চাপ কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে – Studious
Pingback: ক্যালোরিমিতির মূলনীতি (Principles of Calorimetry) | ক্যালোরিমিটার কি? – Studious
Pingback: টিন্ডাল প্রভাব কি? | টিন্ডাল প্রভাব দেখা যায় কোন দ্রবণে – Studious
Pingback: রাসায়নিক ধর্ম (Chemical properties) কাকে বলে – Studious
Very good articke