মানব হৃৎপিন্ডের সম্পূর্ণ বিবরণ ও হৃৎপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি বর্ণনা। (Blood circulation of heart)
হৃৎপিন্ডের গঠন ও অবস্থান
👉মানুষের হৃৎপিণ্ড বক্ষগহ্বরে ফুসফুসদ্বয়ের এর মাঝখানে ঈষৎ বাম দিকে ঘেঁষে অবস্থিত একপ্রকার পাম্পযন্ত্রবিশেষ, যা ছান্দিক গতিতে স্পন্দিত হয় সারা দেহে রক্ত সঞ্চালন করে।
হৃদপিন্ডের বাইরের দ্বিস্তরবিশিষ্ট আবরণকে পেরিকার্ডিয়াম বলে।
পেরিকার্ডিয়াম এর হৃৎপিণ্ডকে সংলগ্ন স্তরকে ভিসেরাল স্তর বলে এবং বাইরের স্তরকে প্যারাইটাল স্তর বলে।
এই দুই স্তরের মাঝখানে থাকে পেরিকার্ডিয়াল তরল যা হৃৎপিণ্ডকে ঘর্ষণজনিত আঘাতের হাত থেকে রক্ষা করে।
হৃৎপিন্ডের পেশিকে মায়োকার্ডিয়াম বলে। যা এন্ডোকার্ডিয়াম এর নিচে থাকে। হৃদপেশী সরেখ, অনৈচ্ছিক পেশি।
হৃৎপিন্ডের মায়োকার্ডিয়াম এর অন্তঃপ্রাচীর সংলগ্ন স্তর বা পর্দাকে বলে এন্ডোকার্ডিয়াম এতে অসংখ্য মাইট্রোকন্ডিয়া থাকে যার জন্য হৃদপেশী কখনোই ক্লান্ত হয় না।
হৃৎপিন্ডের সংযোগী কলা কোষ।
SA Node (Sinoatrial Node)
👉ডান অলিন্দের ঊর্ধ্ব মহাশিরা নিকটে অবস্থিত। মিনিটে 70-80 বার স্পন্দন প্রবাহ সৃষ্টি করে। হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক স্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে বলে একে স্বাভাবিক পেসমেকার বলে।
AV Node (Atrioventricular Node)
👉করোনারি সাইনাস এর নিকট আন্ত অলিন্দ প্রাচীর এর পিছনে অবস্থিত। মিনিটে 60 থেকে 80 বার স্পন্দন প্রবাহ সৃষ্টি করে
হিজের বান্ডিল (Bundle of His)
👉SA Node থেকে উৎপন্ন হয়ে আন্ত নিলয় প্রাচীরের প্রবেশ করেছে। মিনিটে 36 বার স্পন্দন প্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে।
পারকিনজি তন্তু (Parkinje Fibre)
👉হিজের বান্ডিল থেকে উৎপন্ন হয়ে নিলয়ের প্যাপিলারি পেশিতে এবং নিলয় এর প্রাচীর বিন্যস্ত থাকে। মিনিটে 30 থেকে 35 বার স্পন্দন প্রবাহিত করতে পারে।
হৃৎপিন্ডের প্রকোষ্ঠ
হৃৎপিন্ডের চারটি প্রকোষ্ঠ-
ডান অলিন্দ (Right Atrium)
বাম অলিন্দ (Left Atrium)
ডান নিলয় (Right Ventricle
বাম নিলয় (Left Ventricle)
অলিন্দদ্বয়ের মধ্যবর্তী প্রাচীরকে আন্তঃঅলিন্দ প্রাচীর (Interauricular septum) বলে।
নিলয়দ্বয়ের মধ্যবর্তী প্রাচীর কে আন্তঃনিলয় প্রাচীর (Interventricle septum) বলে।
হৃদপিন্ডের সঙ্গে যুক্ত শিরা ও ধমনী
হৃদপিন্ডের ডান অলিন্দের ঊর্ধ্ব প্রান্তের সাথে উত্তরা বা ঊর্ধ্ব মহাশিরা (Superior venacava) যুক্ত থাকে এবং নিম্ন প্রান্তের সাথে নিম্ন মহাশিরা (Inferior venacava) যুক্ত থাকে।
ডান নিলয় এর সঙ্গে ফুসফুসীয় ধমনী (Pulmonary artery) যুক্ত থাকে।
হৃৎপিন্ডের বাম অলিন্দ সঙ্গে চারটি ফুসফুসীয় শিরা (Pulmonary vein)যুক্ত থাকে এবং বাম নিলয়ের সঙ্গে মহাধমনী যুক্ত থাকে।
হৃৎপিন্ডের ডান অলিন্দের করোনারি সাইনাস উন্মুক্ত থাকে।
মহাধমনীর মূলদেশ থেকে উৎপন্ন হয়ে ডান ও বাম করোনারি ধমনী যথাক্রমে হৃৎপিন্ডের ডান ও বাম দিকে বিস্তৃত থাকে।
রক্ত সংবহন পথ
অধিক কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত রক্ত দেহ থেকে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় এর মাধ্যমে ফুসফুসীয় ধমনী দ্বারা ফুসফুসে পৌঁছায়।
ফুসফুস থেকে অধিক অক্সিজেনযুক্ত রক্ত ফুসফুসীয় শিরা মাধ্যমে বাম অলিন্দে প্রবেশ করে যা বাম নিলয় ও মহাধমনীর মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
হৃদপিন্ডের কপাটিকা নাম, তাদের অবস্থান ও কাজ।
- বাইকাসপিড বা দ্বিপত্র কপাটিকা বা মাইট্রাল কপাটিকা।
অবস্থান : বাম অলিন্দ ও বাম নিলয়ের সংযোগস্থলে বাইকাসপিড বা দ্বিপত্র কপাটিকা বা মাইট্রাল কপাটিকা অবস্থিত।
কাজ : রক্তকে বাম অলিন্দ থেকে বাম নিলয় যেতে সাহায্য করে এবং বিপরীত দিকে যেতে বাধা দেয়
- ট্রাইকাসপিড বা ত্রিপত্র কপাটিকা
অবস্থান : ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের সংযোগস্থলে ট্রাইকাসপিড কপাটিকার অবস্থান করে
কাজ : এটি রক্তকে ডান অলিন্দ থেকে ডান নিলয় যেতে সাহায্য করে এবং বিপরীত দিকে যেতে বাধা দেয়।
- অর্ধচন্দ্রাকার মহাধমনীয় বা অ্যার্টক কপাটিকা
অবস্থান: বাম নিলয় ও মহাধমনীর সংযোগস্থলে।
কাজ : রক্তকে বাম নিলয় থেকে মহাধমনী যেতে সাহায্য করে কিন্তু বিপরীত পথে ফিরে আসতে বাধা দেয়।
- অর্ধচন্দ্রাকার ফুসফুসীয় বা পালমোনারি কপাটিকা
অবস্থান : ডান নিলয় ও ফুসফুসীয় ধমনী সংযোগস্থলে ।
কাজ : রক্তকে ডান নিলয় থেকে ফুসফুসের দিকে পরিচালিত করে এবং বিপরীতমুখী সম্মোহনে বাধা দেয়।
এছাড়া করোনারি সাইনাসের মুখে থিবেশিয়ান কপাটিকা এবং অধরা মহাশিরা ডান অলিন্দের সংযোগপথে ইউষ্টাচিয়ান কপাটিকা থাকে।
প্রাণীদের বিভিন্ন প্রকার হৃৎপিণ্ড
ভেনাস হৃৎপিণ্ড = মাছের হৃদপিন্ডে সর্বদা দূষিত রক্ত প্রবাহিত হয় বলে এদের হৃৎপিণ্ডকে ভেনাস হৃৎপিণ্ড বলে।
একচক্রী হৃৎপিণ্ড = হৃৎপিন্ডে রক্ত একবার আবর্তিত হয় বলে এই প্রকার হৃৎপিণ্ড কে একচক্রী হৃৎপিণ্ড বলে। যেমন মাছের হৃৎপিণ্ড।
দ্বিচক্রী হৃৎপিণ্ড = এই প্রকার হৃদপিন্ডে রক্ত চক্রাকারে দুবার আবর্তিত হয় বলে এই প্রকার হৃৎপিণ্ডকে দ্বিচক্রী হৃৎপিণ্ড বলা হয়। যেমন মানুষের হৃদপিণ্ড।
Pingback: স্থিতি ও গতি ( Rest and Motion ) । নিউটন এর গতিসূত্র – Studious
Pingback: ভিটামিনের উৎস, তাদের কাজ এবং অভাবজনিত ফল – Studious
Pingback: ইন সিটু সংরক্ষণ কাকে বলে ? | এক্স সিটু সংরক্ষণ কাকে বলে? – Studious