নমস্কার প্রিয় পাঠকগণ, আজ আমরা এসেছি জীবন বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাদের কাছে সুন্দর ভাবে তুলে ধরার জন্য। আজ আমরা আলোচনা করবো মানুষের রেচনতন্ত্র (Human excretory system) সম্পর্কে, জানবো মানুষের রেচনতন্ত্র এর বিভিন্ন অংশ এবং সেই রেচন তন্ত্রের কাজ গুলি সম্পর্কে, আরও জানবো মানুষের প্রধান রেচন তন্ত্র বৃক্ক এর গঠন ও কাজ সম্পর্কে।
মানুষের রেচনতন্ত্র একজোড়া বৃক্ক, গবিনী, একটি মূত্রাশয় ও মূত্রনালি নিয়ে গঠিত
A) বৃক্ক (Kidney):
বৃক্কের অবস্থান : একজোড়া বৃক্ক মানুষের প্রধান রেচন অঙ্গ। বৃক্ক দুটি উদর গহ্বরের কর্টি অঞ্চলের মেরুদণ্ডের দু-পাশে পেরিটোনিয়াম পর্দার নীচে অবস্থিত। বৃক্কের ঊর্ধ্বপ্রান্ত দ্বাদশ থোরাসিক কশেরুকার নীচে এবং নিম্ন প্রান্ত তৃতীয় লাম্বার কশেরুকার ওপরে অবস্থিত।
বৃক্কের গঠন : বৃক্ক দুটি দেখতে অনেকটা সিম বীজের মতো। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ মানুষের প্রতিটি বৃক্কের গড় ওজন 150 গ্রাম এবং স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রে 135 গ্রাম হয়। বৃক্কের অবতল অংশের খাঁজটিকে হাইলাম (hilum) বলে, যেখানে গবিনী, বৃক্কীয় শিরা ও ধমনি সংলগ্ন থাকে। প্রতিটি বৃক্ক বৃক্কীয় ক্যাপসুল দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে।
অন্তর্গঠনে বৃক্কের দুটি স্তর থাকে। বাইরের স্তরটিকে কর্টেক্স (cortex ) এবং ভেতরের স্তরকে মেডালা (medulla)বলে। বৃক্কের মেডালায় কয়েকটি ( 10-15 ) পিরামিডাকার স্থান থাকে, তাদের বৃক্কীয় পিরামিড বলে।
বৃক্কের পেলভিস অঞ্চলের সংকীর্ণ গহ্বরকে রেনাল সাইনাস বলে। এর মধ্যে গবিনী উন্মুক্ত থাকে। এই অঞ্চলে গবিনীর মুক্ত প্রান্ত মেজর ক্যালিক্স এবং মাইনর ক্যালিক্স -এ বিভেদিত।
বৃক্কের কাজ (Functions of kidney) :
বৃক্কের প্রধান কাজগুলি হল –
1. জল সাম্যতা: বৃক্কের সাহায্যে দেহের অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যায়, ফলে দেহে জলের সমতা বজায় থাকে।
2. নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য পদার্থ দূরীকরণঃ বৃক্ক রক্ত থেকে নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য বস্তুগুলিকে ( ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া, ইউরিক অ্যাসিড) দেহ থেকে দূরীভূত করে
3. রক্তের উপাদানের পরিমাণ নির্দিষ্ট রাখা: বৃক্ক পুনঃশোষণ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় পদার্থগুলিকে রক্তে ফিরিয়ে দিয়ে রক্তের উপাদানগুলির সাম্যতা বজায় রাখে।
4. লবণের সাম্যতা: বৃক্ক রক্তের সোডিয়াম , পটাশিয়াম ইত্যাদি খনিজ লবণের সমতা বজায় রাখে।
আরও পড়ুন:
- উদ্ভিদের রেচন পদ্ধতি (Process of Excretion in Plants) | উদ্ভিদের রেচন ত্যাগের কৌশল
- উদ্ভিদের রেচন পদার্থ (Excretory products of Plant)
- জনন কাকে বলে | জননের প্রয়োজনীয়তা কি | জননের প্রকারভেদ
- অযৌন জনন কাকে বলে | অযৌন জননের পদ্ধতি আলোচনা করো
B) গবিনী (Ureter) :
প্রতিটি বৃক্কের হাইলাম অঞ্চল থেকে যে নালি মূত্রাশয় পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে, তাকে গবিনী বলে। প্রতিটি গবিনী দৈর্ঘ্যে 25-30 cm হয়। গবিনী বৃক্কের মধ্যে প্রবেশ করে যে ফানেল সদৃশ গঠন প্রস্তুত করে তাকে পেলভিস (Pelvis) বলে। গবিনীদ্বয় মেরুদণ্ডের উভয় পাশে অবস্থান করে।
গবিনীর কাজ (Functions) : বৃক্কে উৎপন্ন মূত্র গবিনীর মাধ্যমে বাহিত হয়ে মুত্রাশয়ে আসে।
C) মূত্রাশয় (Urinary bladder) :
এটি শ্রোণিগহ্বরে অবস্থিত পেশিময় থলি বিশেষ, এর দুপাশে গবিনী সংযুক্ত থাকে। এর শেষ ভাগ থেকে মূত্রনালি নির্গত হয়েছে। মূত্রাশয় ও মূত্রনালির সংযোগস্থলে চক্রাকার পেশি দিয়ে গঠিত অন্তঃস্ফিংটার এবং তার নীচের দিকে ঐচ্ছিক পেশি দিয়ে গঠিত বহিঃস্ফিংটার থাকে।
মূত্রাশয়ের কাজ ( Functions ) : মূত্রাশয়ের মধ্যে মূত্র সাময়িকভাবে জমা থাকে। মূত্রাশয়ে 400-500ml মূত্র সজ্জিত হলে মূত্রত্যাগের প্রবল বেগ উপস্থিত হয়। তখন স্ফিংটার পেশি সংকুচিত হয়ে মূত্র দেহের বাইরে নির্গত করে।
Covered Topics: মানুষের রেচনতন্ত্র, মানুষের রেচনতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ও তাদের কাজ, বৃক্কের গঠন ও কাজ, গবিনীর গঠন ও কাজ, মূত্রাশয়ের গঠন ও কাজ, মানুষের বিভিন্ন রেচন অঙ্গ ও তাদের কাজ ইত্যাদি।
Pingback: মায়োপিয়া | হাইপারমেট্রোপিয়া | মায়োপিয়া ও হাইপারমেট্রোপিয়া কারণ ও প্রতিকার – Studious