হ্যালো বন্ধুরা, আমরা ভূগোলের আগের পর্বে বর্ণনা করেছি ভঙ্গিল পর্বত সম্পর্কে। আজ আমাদের পর্ব শুরু হবে স্তূপ পর্বত সম্পর্কে বিভিন্ন আলোচনা নিয়ে। আজ আমরা আলোচনা করবো “স্তূপ পর্বত কাকে বলে?, স্তূপ পর্বতের বৈশিষ্ট্য, স্তূপ পর্বত সৃষ্টির কারণ, গ্রস্থ উপত্যকা কি? আরও অনেক কিছু।
স্তূপ পর্বত (Block Mountain) কাকে বলে ?
স্তূপের আকারে গঠিত পর্তকে স্তূপ পর্বত বলে। প্রসারণ বলের প্রভাবে দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ যখন পার্শ্ববর্তী অংশ থেকে চাপের ফলে হেলানােভাবে ওপরে উঠে যায় তখন উঁচু অংশকে স্তুপ পর্বত বলে।
উদাহরণ : ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বত, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট বেসিন অঞ্চল স্তুপ পর্বতের উল্লেখযােগ্য উদাহরণ। ইউরােপের রাইন গ্রম্ভ উপত্যকার পশ্চিমে ভােজ পর্বত উল্লেখযােগ্য উদাহরণ। এবং ব্ল্যাক ফরেস্ট মালভূমি, ভারতের সাতপুরা পর্বত, শিলং মালভূমি প্রভৃতি।
স্তূপ পর্বতের বৈশিষ্ট্য:
1) দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ হেলানােভাবে উথিত হলে ভূপ পর্বতের সৃষ্টি হয়।
2) স্তূপ পর্বতের একদিকের ঢাল খুব খাড়া হয় , অন্যদিক মৃদু ঢালযুক্ত হয়।
3) স্তূপ পর্বতের উপরিভাগ প্রায় সমতল হয়।
4) এই পর্বত ভঙ্গিল পর্বতের মতাে বেশিদূর বিস্তৃত হয় না।
স্তূপ পর্বতের সৃষ্টির কারণ:
গিরিজানি আলােড়নের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠ সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে শিলাস্তরের ওপর পীড়নের সৃষ্টি করে। একসময় প্রবল পীড়নের ফলে শিলাস্তর গভীর ও খাড়াভাবে ফেটে গিয়ে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়। পরে মহাভাবক আলােড়নের প্রভাবে শিলাস্তরের ফাটল বরাবর ফাটলের দু-পাশের শিলাস্তরের আপেক্ষিক সরণ ঘটে। এইভাবে চ্যুতির সৃষ্টি হয়। চ্যুতির ফলেই স্তূপ পর্বত ও হস্টের সৃষ্টি হয়। নানাভাবে এই পর্বত সৃষ্টি হতে পারে —
1) দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ খাড়াভাবে উথিত হলে স্তূপ পর্বত গঠিত হয়,
2) দুটি সমান্তরাল চ্যুতির দু – পাশের অংশ বসে গেলে মধ্যবর্তী অংশটি স্তূপ পর্বতরূপে অবস্থান করে,
3) দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশটি বসে গেলে পাশের দুটি অংশ স্তূপ পর্বতরূপে অবস্থান করে ,
4) দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ হেলানােভাবে উথিত হয়ে স্তূপ পর্বত গঠন করে।
**গ্রস্থ উপত্যকা কি? : দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ আপেক্ষিকভাবে পাশের অঞ্চল থেকে নীচে বসে গেলে ওই নীচু অংশকে গ্রম্ভ উপত্যকা বলে। জার্মান ভাষায় একে গ্র্যাবেন বলা হয়। উদাহরণ : পূর্ব আফ্রিকার বৃহৎ গ্রস্থ উপত্যকা পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রস্থ উপত্যকা। জার্মানির রাইন নদীর গ্রস্থ উপত্যকা , ভারতের নর্মদা নদীর গ্রস্থ উপত্যকা , দামােদর নদ উপত্যকা প্রভৃতি গ্রস্থ উপত্যকার উল্লেখযোগ্য উদাহরন।
**হর্স্ট কি?
হর্স্ট স্তূপ পর্বতের এক বিশেষ ধরন হল হর্স্ট, কিন্তু সব স্তূপ পর্বত ই হর্স্ট নয়। দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী কোনাে ভূখণ্ড উলম্বভাবে উথিত হলে যে পাহাড় বা পর্বতের সৃষ্টি হয় তাকে হস্ট বলে।
**হর্স্ট ও স্তূপ পর্বতের পার্থক্য
1) স্তূপ পর্বতের এক বিশেষ ধরন হল হর্স্ট , কিন্তু সব স্তুপ পর্বতই হর্স্ট নয়।
2) হর্স্ট এর ক্ষেত্রে দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ সাধারণভাবে উলম্ব দিকে উত্থিত হয়, কিন্তু অধিকাংশ স্তূপ পর্বতের ক্ষেত্রে দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ তির্যক বা হেলানােভাবে উত্থিত হয়।
3) স্তূপ – এর ক্ষেত্রে পর্বতের দু – দিকের ঢাল মােটামুটি খাড়া হয়, কিন্তু অনেক স্তূপ পর্বতের ক্ষেত্রে ভূখণ্ডের উখিত অংশ খাড়া তল যুক্ত ও অপর অংশ মৃদু ঢাল যুক্ত হয়।
image source- Wikipedia.org
Pingback: আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত কাকে বলে | আগ্নেয় পর্বতের বৈশিষ্ট্য – Studious
স্তুপ পর্ব তের ভূমিকা