হ্যালো visitors আজ আমরা হাজির আবার আমাদের নতুন বিষয়বস্তুর সাথে। আজকে আমাদের মূল বিষয় হল “বায়ুপ্রবাহ”। সুতরাং বেশি দেরি না করে শুরু করা যাক।
বায়ুপ্রবাহ বলতে কি বোঝায়?
বায়ুপ্রবাহ আবহাওয়া ও জলবায়ুর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে অনুভূমিকভাবে যখন বায়ু চলাচল করে তখন তাকে বায়ুপ্রবাহ বলে।
বায়ুপ্রবাহের কারণগুলি কি কি?
বায়ুপ্রবাহের প্রধান কারণগুলো হল
1) বায়ুচাপের পার্থক্য, বায়ুর উষ্ণতার পার্থক্য
2) পৃথিবীর আবর্তন গতি
3) বায়ুতে জলীয় বাষ্পের তারতম্যের জন্য বায়ু চাপের তারতম্য।
বায়ুপ্রবাহের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য:
1) ফেরেলের সূত্র: পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য বায়ু সোজা পথে প্রবাবিত না হয়ে উত্তর গোলার্ধের ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়। বায়ু প্রবাহের দিক পরিবর্তন সম্বন্ধীয় এই নিয়ম ফেরেলের সূত্র নামে পরিচিত।
2) বাইস ব্যালট সূত্র: উত্তর গোলার্ধে বায়ু প্রবাহের দিকে পিছন ফিরে দাঁড়ালে ডান দিকের তুলনায় বামদিকে বায়ুর চাপ কম অনুভূত হয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঠিক বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি হয়। বায়ু প্রবাহ সংক্রান্ত এই বৈশিষ্ট্যটি বাইস ব্যালট সূত্র নামে পরিচিত।
3) বায়ু যে দিক থেকে প্রবাহিত হয় সেইদিক অনুসারে বায়ুর নাম করণ করা হয়।
4) বায়ুচাপের পার্থক্যের উপর বায়ুর গতিবেগ নির্ভর করে।
**বাত পতাকার সাহায্যে বায়ুর দিক নির্ণয় করা হয় এবং অ্যানিমোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে বায়ু প্রবাহের গতি পরিমাপ করা হয়।
বায়ুপ্রবাহের শ্রেণীবিভাগ :
বায়ুপ্রবাহের প্রকৃতি ও উৎপত্তি পার্থক্য অনুসারে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন বায়ু প্রবাহকে চার ভাগে ভাগ করা হয়-
1) নিয়ত বায়ু।
2) সাময়িক বায়ু।
3) আকস্মিক বায়ু ও
3) স্থানীয় বায়ু।
নিয়ত বায়ু কাকে বলে?
সারা বছর ধরে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট দিকে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে নিয়ত বায়ু বলে। ভূপৃষ্ঠে সাধারণত আয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু, স্থানীয় বায়ু ও মেরু বায়ু এই নিয়ত বায়ু প্রবাহিত হয়।
আয়নবায়ু= যে বায়ু নির্দিষ্ট পথে সারা বছর একই দিকে প্রবাহিত হয় তাকে আয়ন বায়ু বলে।
কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে সারা বছর নিয়মিত নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। উত্তর গোলার্ধে এই বায়ু উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ গোলার্ধে এই বায়ু দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু নামে পরিচিত।
আয়ন বায়ুর বৈশিষ্ট্য=
1) উত্তর পূর্ব আয়ন বায়ু ঘন্টায় 16 কিলোমিটার ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু ঘন্টায় 22.4 কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হয়।
2) এই বায়ুকে বাণিজ্য বায়ু নামে অভিহিত করা হয়।
3) এই বায়ু অপেক্ষাকৃত শীতল অঞ্চল হতে উষ্ণ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় বলে এই বায়ুর প্রভাব যুক্ত অঞ্চলে অবস্থিত মহাদেশসমূহের পশ্চিম দিকে সাধারণত বৃষ্টিপাত হয় না। ফলে এ অঞ্চলের মহাদেশসমূহের পশ্চিমদিকে প্রধান প্রধান উষ্ণ মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে। মহাদেশসমূহের পূর্বদিকে স্বল্প বৃষ্টিপাত হয়।
পশ্চিমা বায়ু= 30°থেকে 60° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যে কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে সারাবছর সুমেরু ও কুমেরু বৃত্তের নিম্নচাপ দিকে নিয়মিতভাবে পশ্চিম থেকে বায়ু প্রবাহিত হয় একে পশ্চিমা বায়ু বলে। উত্তর গোলার্ধে এই বায়ুপ্রবাহ দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু এবং দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু নামে পরিচিত।
পশ্চিমা বায়ুর বৈশিষ্ট্য:
1) পশ্চিমা বায়ু প্রবাহের ফলে মহাদেশসমূহের পশ্চিম উপকূলের শীতকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। মহাদেশসমূহের পূর্ব উপকূলে বৃষ্টিপাত কম হয় বলে অধিকাংশ নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
2) দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগ বেশি থাকায় 40° থেকে 60° দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যে পশ্চিমা বায়ু সারাবছরই প্রবল বেগে প্রবাহিত হয় এজন্য একে প্রবল পশ্চিমা বায়ু বলে।
3) পশ্চিমা বায়ু অনুযায়ী দক্ষিণ গোলার্ধের বিভিন্ন অক্ষরেখাগুলি বিভিন্ন নামে পরিচিত। 40° দক্ষিণ অক্ষরেখা “গর্জনশীল চল্লিশা”, 50° দক্ষিণ অক্ষরেখা “ভয়ঙ্কর পঞ্চশিয়া”, 60° দক্ষিণ অক্ষরেখা “ঝোড়ো ষেটো’ নামে পরিচিত।
মেরুবায়ু= সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে সুমেরু ও কুমেরু বৃত্ত নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে সারাবছর নিয়মিতভাবে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে মেরু বায়ু বলে। উত্তর গোলার্ধে এই বায়ু উত্তর-পূর্ব মেরু বায়ু এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব মেরু বায়ু নামে পরিচিত।
মেরুবায়ুর বৈশিষ্ট্য:
1) এই বায়ু শীতল।
2) এই বায়ুর প্রভাবে মহাদেশ সমূহের পূর্বাংশে তুষারপাত সামান্য বৃষ্টিপাত হয়।
সাময়িক বায়ু কী?
দিনের বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন ঋতুতে সাময়িকভাবে যে বায়ুপ্রবাহ হয় তাকে সাময়িক বায়ু বলে। স্থলবায়ু, সমুদ্র বায়ু ও মৌসুমী বায়ু এরূপ বায়ুর উদাহরণ।
স্থলবায়ু= স্থলভাগ থেকে সমুদ্র বা বিস্তৃত জলভাগের দিকে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে স্থলবায়ু বলে।
স্থলভাগের বায়ু রাত্রিবেলায় মেঘমুক্ত আকাশে তাপ বিকিরণ করে শীতল হলে ভারী ও উচ্চচাপ যুক্ত হয়। এইসময় জলভাগ অপেক্ষাকৃত উষ্ণ থাকে বলে বায়ু হালকা ও নিম্নচাপ যুক্ত হয়। ফলে স্থলভাগ থেকে শীতল বাতাস জলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়। সাধারণত মধ্যরাত্রি থেকে ভোররাত্রের মধ্যে স্থলবায়ু প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়।
সমুদ্রবায়ু= সমুদ্র বা বিস্তৃত জলভাগ থেকে যে বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয় তাকে সমুদ্র বায়ু বলে।
দিনের বেলায় স্থলভাগের বায়ু অধিক উত্তপ্ত হয়ে হালকা ও নিম্নচাপ যুক্ত হয়। কিন্তু জলভাগ ওই সময় অপেক্ষাকৃত শীতল থাকে বলে বায়ু ভারী ও উচ্চচাপ যুক্ত হয়। ফলে জলভাগ থেকে শীতল বাতাস স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়। সাধারণত অপরাহ্ণের সময় সমুদ্র বায়ু প্রবাহিত হয়।
মৌসুমী বায়ু= বছরের কোন নির্দিষ্ট ঋতুতে উষ্ণতা ও চাপের পার্থক্যে ফলে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে মৌসুমী বায়ু বলে।
ক্রান্তীয় অঞ্চলে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব বেশি দেখা যায়। গ্রীষ্ম ও শীত ঋতুতে জলভাগ স্থলভাগের বায়ুর উষ্ণতা ও চাপের পার্থক্যের ফলে
গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন মৌসুমী বায়ু সৃষ্টি হয়।
গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ু উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নামে পরিচিত।
শীতকালীন মৌসুমী বায়ু উত্তর গোলার্ধে উত্তর পূর্ব মৌসুমি বায়ু এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ পূর্ব মৌসুমি বায়ু নামে পরিচিত
আকস্মিক বায়ু কী?
অনিয়মিত ভাবে হঠাৎ খুব প্রবল বেগে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে আকস্মিক বায়ু বলে। ঘূর্ণিঝড় ও প্রতীপ ঘূর্ণিঝড় হল আকস্মিক বায়ুর উদাহরণ।
ঘূর্ণিঝড়= কোন স্থানে আকস্মিকভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বায়ুচাপ কমে গেলে গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। এই নিম্নচাপ কেন্দ্রের শূন্যস্থান পূরণের জন্য আশপাশের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বাতাস প্রবল বেগে ঘূর্ণির আকারে ওই নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে এবং উষ্ণ হয়ে ঘূর্ণি আকারে উপরে উঠে যায় এরূপ নিম্নচাপ কেন্দ্রমুখী ঘূর্ণি বাতাসকে ঘূর্ণিঝড় বলে।
ঘূর্ণিঝড় ক্যারিবিয়ান উপসাগর উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে হ্যারিকেন, চিন ও জাপানের উপকূল অঞ্চলে টাইফুন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ অংশে টর্নেডো, ভারত মহাসাগরে সাইক্লোন, উত্তর-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় উইলি উইলি নামে পরিচিত।
প্রতীপ ঘূর্ণবাত= নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল ও হিমমন্ডলের অন্তর্গত কোন স্থানে প্রচন্ড ঠান্ডার জন্য প্রবল উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। এই উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে শীতল ও বাতাসে ভারী বাতাস বাইরে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবল বেগে কুণ্ডলী আকারে প্রবাহিত হয়। একে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে। প্রতীপ ঘূর্ণবাত উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাটার দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটা বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। এরূপ ঘূর্ণিঝড়ের আকাশ পরিষ্কার থাকে।
স্থানীয় বায়ু কী?
ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি ও পরিবেশের পার্থক্যে চাপ ও তাপ এর পার্থক্য ঘটে নানারকম বায়ু প্রবাহ সৃষ্টি হয় একে স্থানীয় বায়ু বলে। স্থানীয় বায়ু শীতল ও উষ্ণ হতে পারে
কালবৈশাখী = পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে গ্রীষ্মের প্রারম্ভে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের অপরাহ্ণে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হয় তাকে কালবৈশাখী বলে।
লু= গ্রীষ্মকালে মে, জুন মাসে উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর ভারতে একপ্রকার উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু দুপুরের পর থেকে পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হতে দেখা যায়। এই লু অত্যন্ত উষ্ণ ও অসহ্য তাপপ্রবাহ। এই বায়ুর উষ্ণতা 45°-50° সেন্টিগ্রেড।
আধীঁ= আধীঁ হল একপ্রকার ধূলিঝড়। গ্রীষ্মকালে পাঞ্জাব ও রাজস্থানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এরূপ ধূলিঝড় দেখা যায়। পরিচলন প্রক্রিয়ায় বাতাস প্রচুর পরিমাণে সূক্ষ্ম ধূলিকণা সংগ্রহ করে প্রতি ঘণ্টায় 70 থেকে 100 কিমি বেগে ধূলিরাশি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে উড়িয়ে নিয়ে যায়।
চিনুক= উত্তর আমেরিকার প্রেইরি অঞ্চল পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চল থেকে একপ্রকার উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু শীতকালে প্রবাহিত হয় একে চিনুক বলে।
ফন= ইউরোপের রাইন নদীর উপত্যকায় ও শীতকালে আল্পস পার্বত্য অঞ্চল থেকে একপ্রকার উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়। এরূপ বায়ুকে ফন বলে। এই বায়ুর প্রভাবে রাইন উপত্যকায় ও আল্পসের উত্তর ঢালে শীতকালে বরফ গলে যায় ও কৃষি কাজের সুবিধা হয়।
সিরোক্কো= আফ্রিকা মহাদেশের লিবিয়ার মরুভূমি থেকে এই বায়ুর উৎপত্তি হয়। এই বায়ু অত্যন্ত উষ্ণ শুষ্ক ও ধূলিকণা পূর্ণ। উত্তরে প্রবাহিত হয়ে এই বায়ু ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করে পীড়াদায়ক উষ্ণ ও আদ্র বায়ুতে পরিণত হয়।
খামসিন= উত্তর আফ্রিকার উষ্ণ ও শুষ্ক ধূলিকণা পূর্ণ বায়ু মিশরের খামসিন নামে পরিচিত। স্পেনে এরূপ বায়ুকে লেভেস বলে।
আজ এই পর্যন্তই আবার ফিরে আসব নতুন post এর সাথে। ধন্যবাদ।
Pingback: সমুদ্রস্রোত কী? | সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ কি? – Studious
Pingback: ভঙ্গিল পর্বত কাকে বলে, বৈশিষ্ট্য ও ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির কারণ – Studious
Pingback: আবহবিকার কাকে বলে? যান্ত্রিক আবহবিকার ও রাসায়নিক আবহবিকার – Studious