1841 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী জেমস প্রেসকট জুল সর্বপ্রথম পরিবাহীতে তড়িৎপ্রবাহের ফলে তাপের সৃষ্টি (তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ফল) সম্পর্কে তিনটি সূত্র প্রকাশ করেন, এই সূত্রগুলিকে জুলের সূত্র বলা হয়।
তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ফল কাকে বলে? (Heating effect of Electric Current)
একটি পরিবাহীতে তড়িৎপ্রবাহ হলে সেটি উত্তপ্ত হয়। একে তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ফল বলে।
তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ফলের কারণ
যখন একটি পরিবাহীতে তড়িৎপ্রবাহ হয় তখন পরিবাহীতে মুক্ত ইলেকট্রনের প্রবাহ হয়। এই মুক্ত ইলেকট্রনগুলি পরিবাহীর মধ্যে থাকা অণুগুলির সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং ওদের গতিশক্তি প্রদান করে অণুগুলির গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পরিবাহীতে তাপের উদ্ভব ঘটে।
জুলের সূত্র ( Joule’s Law of Heating effect)
তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ফল সংক্রান্ত জুলের সূত্র : কোনো পরিবাহীতে তড়িৎপ্রবাহের ফলে উৎপন্ন তাপ- তড়িৎ প্রবাহমাত্রা, পরিবাহীর রোধ এবং প্রবাহের সময়ের ওপর নির্ভর করে।
উৎপন্ন তাপ ওই বিষয়গুলির ওপর কীভাবে নির্ভর করে তা বিজ্ঞানী জেমস্ প্রেস্কট জুল সূত্রের আকারে প্রকাশ করেন। সূত্রটি নিম্নরূপ —
(i) পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ ( H ) পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহমাত্রা (I) – এর বর্গের সমানুপাতি হয় যখন পরিবাহীর রোধ (R) এবং তড়িৎপ্রবাহের সময় (t) অপরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ H ∞ I2 যখন R এবং t ধ্রুবক।
(ii) পরিবাহীতে উৎপন্ন তাপ (H) পরিবাহীর রোধ (R) – এর সমানুপাতি হয় যখন তড়িৎপ্রবাহমাত্রা (I) এবং তড়িৎপ্রবাহের সময় ( t ) অপরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ H∞ R যখন I এবং t ধ্রুবক।
p তড়িৎপ্রবাহের সময় (t) – এর সমানুপাতি হয় যখন তড়িৎপ্রবাহমাত্রা (I) এবং পরিবাহীর রোধ ( R ) অপরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ H∞ t যেখানে I এবং R ধ্রুবক ,
ওপরের তিনটি সূত্র একত্রে সংযুক্ত করে পাওয়া যায়,
H=I²Rt/J ……. যখন । যখন I , R এবং t পরিবর্তনশীল যেখানে J = হল সমানুপাতিক ধ্রুবক এবং তাপের যান্ত্রিক তুল্যাঙ্ক।
I, R এবং t যথাক্রমে অ্যাম্পিয়ার , ওহম এবং সেকেন্ড এককে প্রকাশিত হলে H = I²Rt/ 4.2 ক্যালোরি হয়। অথবা H = I²Rt জুল হয়।
কোনো পরিবাহীতে তড়িৎপ্রবাহের ফলে উৎপন্ন তাপ তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখের ওপর নির্ভর করে না। সুতরাং নির্দিষ্ট রোধের পরিবাহীতে একই সময় ধরে সমমানের সমপ্রবাহ বা পরিবর্তী প্রবাহের তড়িৎ পাঠালে সমান পরিমাণ তাপের উদ্ভব হয়।
আরও পড়ুন:-
- তড়িৎ চালক বল কাকে বলে ? এর একক কী? তড়িৎচালক বল ও বিভব প্রভেদের পার্থক্য
- তড়িৎ বিভব কাকে বলে | তড়িৎ বিভব ও বিভব প্রভেদ এর পার্থক্য
- ওহমের সূত্র ও ওহমের সূত্রের গাণিতিক রূপ | Definition of Ohm’s Law in bengali
গৃহস্থালির কাজে তড়িৎ প্রবাহের ফলে উৎপন্ন তাপের ব্যবহার।
(i) ইলেকট্রিক ইস্ত্রি : ইলেকট্রিক ইস্ত্রি হল একটি ভারী, সমতল তলাযুক্ত স্টিলের আবরণ (Casing ) যার মধ্যে নাইক্রোম তারের কুণ্ডলী থাকে। কুণ্ডলীটি অভ্রের ( mica ) প্লেটে জড়ানো থাকে। কুণ্ডলীটিকে অভ্রের চাদর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। নাইক্রোম তারের কুণ্ডলীর রোধ অনেক বেশি হওয়ায় ওর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ হলে সেটি উত্তপ্ত হয় এবং আবরণীর তলদেশ খুব উত্তপ্ত হয়। এর সাহায্যে জামাকাপড় ইস্ত্রি করা যায়।
(ii) ইলেকট্রিক হিটার : ইলেকট্রিক হিটারে তাপসহনশীল এবং তড়িৎঅপরিবাহী পদার্থ যেমন , অভ্র বা ফায়ার – ক্লে দিয়ে তৈরি একটি গোল চাকতির মধ্যে খাঁজ কাটা থাকে। যার মধ্যে নাইক্লোম তারের কুণ্ডলী রাখা থাকে। নাইক্রম তারের রোধ অনেক বেশি হয়। ওই তারে কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ হলে সেটি খুব উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই তাপ বিভিন্ন ব্যাবহারিক কার্য যেমন , জল গরম করা , খাবার গরম করা ইত্যাদিতে কাজে লাগানো হয়। বৈদ্যুতিক তাপ – উৎপাদক যন্ত্র ইস্ত্রি , হিটার ইত্যাদিতে।
Covered Topics: তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ফল, তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ফলের দুটি প্রয়োগ, তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ফল সংক্রান্ত জুলের সূত্র, তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ক্রিয়া বলতে কি বোঝ?
Pingback: সমগোত্রীয় শ্রেণী কাকে বলে? | সমগোত্রীয় শ্রেণীর তালিকা | সমগোত্রীয় শ্রেণীর বৈশিষ্ট্য – Studious