প্রিয় পাঠকগণ, আজ আমরা এই পোস্টটি তে নিউটনের গতিসূত্র সম্পর্কে আলোচনা করবো, আমরা জানি নিউটনের তিনটি গতি সূত্র আছে। আজ আমরা এই তিনটি গতি সূত্রই খুবই সহজ ভাবে জানবো এবং শিখবো।
নিউটনের প্রথম গতিসূত্র (Newton’s first law of motion)
নিউটনের প্রথম গতিসূত্র : বাইরে থেকে প্রযুক্ত বল দ্বারা অবস্থার পরিবর্তনে বাধ্য না করলে, স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সমদ্ৰুতিতে সরলরেখা বরাবর অর্থাৎ চিরকাল সমবেগে গতিশীল থাকবে।
নিউটনের প্রথম গতিসূত্র থেকে আমরা কি কি জানতে পারি????
নিউটনের প্রথম গতিসূত্র থেকে
i) বলের সংজ্ঞা ও
ii) পদার্থের জাড্য ধর্ম সম্পর্কে জানা যায়।
নিউটনের প্রথম গতিসূত্র থেকে বস্তুর জাড্য ধর্মের ধারণা পাওয়া যায়, তাই এই সূত্রকে জাড্যের সূত্র বলা হয়।
বলের সংজ্ঞা : কোনো স্থির বস্তুকে গতিশীল করতে বা গতিশীল করার চেষ্টা করতে কিংবা কোনো গতিশীল বস্তুকে স্থির অবস্থায় আনতে বা আনার চেষ্টা করতে বাইরে থেকে বস্তুর ওপর যা প্রয়োগ করতে হয়, তাকেই বল (force) বলে।
জাড্যের সংজ্ঞা : জড় পদার্থের যে ধর্মের জন্য পদার্থটি স্থিতি বা গতির যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থাটিকে ধরে রাখার চেষ্টা করে, তাকেই ওই পদার্থের জাড্য বলে। জাড্য দুই প্রকার—
(i) স্থিতিজাড্য : স্থির বস্তুর স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখার প্রবণতাকেই স্থিতিজাড্য বলে।
(ii) গতিজাড্য : গতিশীল বস্তুর গতীয় অবস্থা বজায় রাখার প্রবণতাকেই গতিজাড্য বলে।
স্থিতি জাড্যের কয়েকটি দৃষ্টান্ত
(i) একটি গাড়ি হঠাৎ চলতে শুরু করলে সিটে বসা যাত্রী বা দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী পিছন দিকে হেলে পড়ে। গাড়ি যখন স্থির ছিল তখন যাত্রীর দেহও স্থির ছিল। গাড়ি চলতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে তার দেহের নীচের অংশ গাড়ির সংলগ্ন বলে গতিশীল হয়; ওপরের অংশ তখনও স্থির অবস্থায় থাকতে চেষ্টা করে। ফলে যাত্রী পিছন দিকে অর্থাৎ গাড়ির গতির বিপরীত দিকে হেলে পড়ে।
গতিজাড্যের কয়েকটি দৃষ্টান্ত :
i ) কোনো চলন্ত গাড়ি হঠাৎ থামলে আরোহী সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে বা হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। গাড়ি যখন চলমান ছিল তখন গাড়ির সঙ্গে আরোহীর সম্পূর্ণ দেহই গতিশীল ছিল। গাড়িটি থামার সঙ্গে সঙ্গে আরোহীর দেহের নীচের অংশ স্থির অবস্থায় আসে কিন্তু গতিজাড্যের জন্য দেহের ওপরের অংশ এগিয়ে যেতে চায়। ফলে আরোহী সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে বা হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়।
(ii) সমবেগে চলন্ত ট্রেনের কামরায় কোনো যাত্রী একটি বলকে সোজা ওপরের দিকে ছুড়ে দিলে কিছুক্ষণ পর বলটি আবার তার হাতে এসে পড়ে, যদিও যাত্রীটি সামনের দিকে কিছুটা এগিয়ে যায়। গতিজাড্যের জন্য বলটির সামনের দিকের গতি বজায় থাকে। ফলে একই সময়ে বল এবং যাত্রী সামনের দিকে একই দূরত্ব যায়। তাই বলটি যাত্রীর হাতে এসে পড়ে। গতিজাড্য না থাকলে বলটি যাত্রীর পিছনে পড়ত।
নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্র (Newton’s second law of motion)
নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্র : কোনো বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার বস্তুর ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে, ভরবেগের পরিবর্তনও সেই দিকে ঘটে।
আরও পড়ুন:
- গতির সমীকরণ (Equations of Motion) | গতির সমীকরণ প্রতিপাদন
- রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল বর্ণনা করো | রাদারফোর্ডের মডেল
- ক্যালোরিমিতির মূলনীতি (Principles of Calorimetry) | ক্যালোরিমিটার কি?
- ঘর্ষণ কাকে বলে? ঘর্ষনের প্রকারভেদ | ঘর্ষণের সুবিধা ও অসুবিধা
নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্র থেকে আমরা কি কি জানতে পারি????
নিউটনের দ্বিতীয় থেকে —
1) ভরবেগের ধারণা
2) বলের পরিমাপ ,
3) বলের একক সম্পর্কে জানা যায়
ভরবেগ : ভর ও বেগের সমন্বয়ে কোনো গতিশীল বস্তুতে যে পরিমাণ গতির সৃষ্টি হয়, তাকে ওই বস্তুর ভরবেগ বলে। সুতরাং , বস্তুর ভর m ও বেগ v হলে ভরবেগ p = mv হয়। ওপরের সূত্র থেকে বলা যায়, নির্দিষ্ট বস্তুর বেগ বাড়লে ভরবেগ বাড়ে ও বেশি ভরবেগসম্পন্ন বস্তুকে থামাতে বেশি বল প্রয়োগ করতে হয়।
নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র (Newton’s third law of motion)
নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র : প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান এবং বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে।
এখানে আমরা জানলাম দুটি শব্দ ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া, এবার জানা যাক ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া কি
ক্রিয়া বল ও প্রতিক্রিয়া বল কাকে বলে?
সংস্পর্শ বা পরস্পর বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকা দুটি বস্তুর প্রত্যেকেই অন্যটির ওপর যুগপৎ সমান ও বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করে থাকে। এই বল দুটির যে – কোনো একটিকে ক্রিয়া ( Action force ) বলা হলে, অন্যটিকে প্রতিক্রিয়া (Reaction force) বলে। * উদাহরণ : নৌকা থেকে নামার সময় ব্যক্তি নৌকার ওপর পা দিয়ে যে ক্রিয়া বল প্রয়োগ করে নৌকাও তেমনি ব্যক্তির ওপর সমমানের প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে।
প্রতিক্রিয়া বলের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: প্রতিক্রিয়া বলের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
1) প্রতিক্রিয়া বল ক্রিয়া বলের মানের সমান ও বিপরীতমুখী। ও ক্রিয়া ছাড়া প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া ছাড়া ক্রিয়া সম্ভব নয়।
2) ক্রিয়া যতক্ষণ থাকে , প্রতিক্রিয়াও ঠিক ততক্ষণ থাকে। ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া দুটি ভিন্ন বস্তুর ওপর ক্রিয়াশীল হয়, তার জন্য এরা একে অপরকে প্রতিমিত (Balance) করে, কিন্তু সাম্য সৃষ্টি করতে পারে না।
3) দুটি বস্তুর মধ্যে সৃষ্ট ক্রিয়া – প্রতিক্রিয়া বল ওই বস্তু দুটির সংযোগকারী রেখা বরাবর ক্রিয়া করে।
রকেট বা জেটপ্লেনের কার্যনীতি এই গতিসূত্রের ওপরই প্রতিষ্ঠিত। নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র থেকে আমরা জানতে পারি একক বিচ্ছিন্ন বল বলে কিছু নেই। বল সর্বদা দ্বৈতভাবে অবস্থান করে একটি ক্রিয়া বল অপরটি প্রতিক্রিয়া বল। ক্রিয়া – প্রতিক্রিয়া সমান ও বিপরীতমুখী হলেও পরস্পরকে প্রতিমিত করতে পারে না। কারণ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া একযোগে একই বস্তুর ওপর প্রযুক্ত হয় না।
Covered Topics: নিউটনের গতিসূত্র গুলি লেখ ও ব্যাখ্যা কর, নিউটনের প্রথম গতিসূত্র, নিউটনের দ্বিতীয় গতি সূত্র, স্থিতিজাড্য কাকে বলে?, গতিজাড্য কাকে বলে?, নিউটনের প্রথম গতিসূত্র থেকে কি কি জানা যায়?, নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্র থেকে কি কি জানা যায়, ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল কাকে বলে?, প্রতিক্রিয়া বলের বৈশিষ্ট্য। f=ma প্রতিষ্ঠা করো, জেট বিমান এর কার্যনীতি ব্যাখা করো। ইত্যাদি।
Pingback: এক্স রশ্মি কাকে বলে | এক্স রশ্মির ধর্ম ও এক্স রশ্মির একটি ব্যবহার লেখ – Studious