প্রিয় পাঠকগণ, আমরা এই পোষ্ট টিতে আলোচনা করবো জলের তড়িৎ বিশ্লেষণ সম্পর্কে, জানবো তড়িৎ বিশ্লেষণ কাকে বলে, জলের তড়িৎ বিশ্লেষণ কিভাবে হয়, কেন হয়?, সবার প্রথম জেনে নেওয়া যাক তড়িৎ বিশ্লেষণ বলতে কি বোঝায়?
তড়িৎ বিশ্লেষণ কাকে বলে?
তড়িৎ বিশ্লেষণ (Electrolysis) : যে প্রক্রিয়ায় গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে পদার্থটির রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয়, সেই প্রক্রিয়াকে তড়িৎ বিশ্লেষণ বলে।
তড়িৎ বিশ্লেষনে ব্যবহৃত তড়িৎ শক্তি আয়নগুলি থেকে নিস্তড়িৎ পরমাণু বা মূলক তৈরি করে। আয়নের তুলনায় পরমাণু অস্থায়ী অর্থাৎ, বেশি শক্তিসম্পন্ন। তড়িৎ বিশ্লেষণে ব্যবহৃত তড়িৎশক্তি উৎপন্ন পদার্থে রাসায়নিক শক্তি হিসেবে সঞ্চিত হয়, অর্থাৎ, তড়িৎশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
তড়িৎ বিশ্লেষনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
১) তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থে একইসঙ্গে তড়িৎ পরিবহণ ও রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে।
২) আয়নগুলি দ্বারা ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জন ঘটিত রাসায়নিক বিক্রিয়া তড়িৎপ্রবাহ চালনা করার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ হলে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
৩) কোনো তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোডে যায় ও অ্যানায়নগুলি অ্যানোডে যায়।
৪) তড়িৎ বিশ্লেষণ জাত পদার্থ শুধুমাত্র তড়িদ্দ্বারেই সঞ্চিত, নির্গত বা দ্রবীভূত হয়। তাই তড়িদ্বারের প্রকৃতি তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে অনেকাংশে প্রভাবিত করে। তড়িৎ বিশ্লেষণে ক্যাথোডে যতগুলি ইলেকট্রন গৃহীত হয়, অ্যানোডে ঠিক ততগুলি ইলেকট্রন বর্জিত হয়। অর্থাৎ, ক্যাথোডে বিজারণ ও অ্যানোডে জারণ ক্রিয়া ঘটে।
সুতরাং , তড়িৎ বিশ্লেষণে তড়িদ্বারের বিক্রিয়া হল একটি জারণ – বিজারণ বিক্রিয়া। তড়িৎ বিশ্লেষ্যের তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ ইলেকট্রন প্রবাহের বিপরীত অভিমুখে হয়।
আরও পড়ুন:-
- আয়নিক বন্ধন বা তড়িৎযোজী বন্ধন কাকে বলে | আয়নিক বন্ধনের বৈশিষ্ট্য
- সোডিয়াম ক্লোরাইড এর কেলাস গঠন | NaCl এর গঠন ব্যাখ্যা
- সমযোজী বন্ধন কাকে বলে | সমযোজী বন্ধন কয় প্রকার ও কি কি | সমযোজী বন্ধনের বৈশিষ্ট্য
জলের তড়িৎ বিশ্লেষণ (Electrolysis of water)
বিশুদ্ধ জলে খুব অল্প সংখ্যক জলের অণু আয়নিত হয়ে H+ এবং OH– অবস্থায় থাকে। ফলে বিশুদ্ধ জলের তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা খুবই কম।
জলে সামান্য পরিমাণ কোনো তড়িৎ বিশ্লেষ্য (অ্যাসিড, ক্ষার বা লবণ ) যোগ করলে জলের বেশির ভাগ অণু আয়নিত হয়ে বেশি সংখ্যক H+ ও OH– আয়ন উৎপন্ন করে। ফলে সামান্য তড়িৎ বিশ্লেষ্য যুক্ত জল বিশুদ্ধ জল অপেক্ষা বেশি তড়িৎ পরিবাহী।
বিশুদ্ধ জলে সামান্য অ্যাসিড মিশিয়ে প্ল্যাটিনাম তড়িদ্বারের মাধ্যমে এতে তড়িৎ চালনা করলে জল বিশ্লিষ্ট হয় এবং ক্যাথোডে হাইড্রোজেন ও অ্যানোডে অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। ক্যাথোডে উৎপন্ন গ্যাসের আয়তন অ্যানোডে উৎপন্ন গ্যাসের আয়তনের দ্বিগুণ হয়।
ব্যাখ্যা : সামান্য অ্যাসিড মিশ্রিত জলের অণুগুলি বেশির ভাগ বিয়োজিত হয়ে H+ এবং OH– আয়নে পরিণত হয়।
H2O ( I ) → H+( aq ) + OH– ( aq)
H+ আয়নগুলি ক্যাথোডে যায় এবং প্রত্যেকটি H+ আয়ন ক্যাথোড থেকে একটি করে ইলেকট্রন গ্রহণ করে H পরমাণুতে পরিণত হয়। পরে দুটি H পরমাণু যুক্ত হয়ে H2 অণু গঠন করে এবং ক্যাথোডে সঞ্চিত হয়।
OH– আয়নগুলি অ্যানোডে যায় এবং প্রত্যেক OH আয়ন একটি করে ইলেকট্রন বর্জন করে OH মূলকে পরিণত হয়। দুটি OH মূলক যুক্ত হয়ে এক অণু জল এবং একটি O পরমাণু উৎপন্ন করে। দুটি O পরমাণু যুক্ত হয়ে , O2 অণু গঠন করে ও অ্যানোডে সঞ্চিত হয়।
ক্যাথোড বিক্রিয়া : 4H+ (aq) + 4e- = 2H2(g)
অ্যানোড বিক্রিয়া : 4OH–(aq)- 4e-= 2H2O (I) + O2
ক্যাথোড ও অ্যানোডে উৎপন্ন গ্যাসের শনাক্তকরণ : ক্যাথোডে উৎপন্ন গ্যাসের মধ্যে একটি জ্বলন্ত পাটকাঠি ধরলে কাঠিটি নিভে গ্যাসটি নীল শিখায় জ্বলতে দেখা যায়, অর্থাৎ গ্যাসটি হাইড্রোজেন।
অ্যানোডে উৎপন্ন গ্যাসটিকে বর্ণহীন নাইট্রিক অক্সাইড গ্যাসের সংস্পর্শে আনলে বাদামি বর্ণের নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়, অর্থাৎ গ্যাসটি অক্সিজেন।
সিদ্ধান্ত : জলের তড়িবিশ্লেষণে একই উষ্ণতা ও চাপে 2 আয়তন হাইড্রোজেন ও 1 আয়তন অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়।
এই অধ্যায়ের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
১) জলের তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় অল্প পরিমাণে অ্যাসিড বা ক্ষার যুক্ত করা হয় কেন?
উত্তর:- জলের তড়িৎবিশ্লেষনের সময় সামান্য পরিমাণে অ্যাসিড বা ক্ষার যোগ করা হয় কেন বিশুদ্ধ জল হল মৃদু তড়িৎ বিশ্লেশ্য পদার্থ, তাই জলের খুব কম সংখ্যক আয়নের উপস্থিতির কারণে বিশুদ্ধ জল তড়িৎ এর কুপরিবাহী।ফলে, জলের তড়িৎবিশ্লেষণ ঘটে ন।কিন্তু জলের মধ্যে সামান্য পরিমাণ অ্যাসিড বা ক্ষার যোগ করলে জলের বিয়োজন মাত্রা বৃদ্ধি পায়।ফলে, জলের বেশিরভাগ অনুই আয়নিত হয়ে বেশি সংখ্যক H+ এবং OH- আয়ন উৎপন্ন করে।জলে উপস্থিত আয়নের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় জলের তড়িৎ পরিবাহিতাও বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।তখন জল তড়িতের সুপরিবাহী হয়ে ওঠায় তড়িৎবিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়।
২) জলের তড়িৎ বিশ্লেষণে উৎপন্ন গ্যাস দুটির নাম কি?
উত্তর:- হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন।
৩) জলের তড়িৎ বিশ্লেষণ করলে ক্যাথোড ও অ্যানোড কি কি গ্যাস উৎপন্ন হয়?
উত্তর:- ক্যাথোড হাইড্রোজেন ও অ্যানোডে অক্সিজেন।
তামার আপেক্ষিক তাপ 0.09 বলতে কী বোঝায় ?