হ্যালো বন্ধুরা, আজ আপনাদের আলোচ্য বিষয় তাপ অধ্যায়ে তাপ সঞ্চালনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া, তাপ কি কি উপায়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত হয়? তাপ পরিবহন কাকে বলে? তাপ পরিচলন কাকে বলে? তাপ বিকিরণ কাকে বলে? তার আগে জেনে নিই, তাপ সঞ্চালন কাকে বলে? তাপ সঞ্চালন কিভাবে হয় ? তাপ
তাপ সঞ্চালন কাকে বলে?
পরস্পরের সংস্পর্শে থাকা দুটি বস্তুর মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য থাকলে উষ্ণতর বস্তু থেকে শীতলতর বস্তুর দিকে তাপ প্রবাহিত হয়। আবার একই বস্তুর বিভিন্ন অংশের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য থাকলে উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশেও তাপের প্রবাহ হয়। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তাপের চলাচলকে তাপ সঞ্চালন বলা হয়।
তাপ সঞ্চালনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া
তাপ সঞ্চালন হয় বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তাপ সঞ্চালনের এই প্রক্রিয়া গুলি হল
(ক) পরিবহণ (conduction)
(খ) পরিচলন (convection)
(গ) বিকিরণ (Radiation) ।
তাপ পরিবহণ কাকে বলে?
যে পদ্ধতিতে কোনাে পদার্থের উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে তাপ সঞ্চালন হয়, কিন্তু পদার্থের অণুগুলি স্থান পরিবর্তন করে না, তাকে তাপ পরিবহণ বলা হয়।
সাধারণত কঠিন পদার্থে তাপ সঞ্চালন পরিবহণ পদ্ধতিতে হয়। একটি লােহার দণ্ডের এক প্রান্ত হাত দিয়ে ধরে অন্য প্রান্তটিকে আগুনের মধ্যে রাখলে কিছুক্ষণ পরে দেখা যাবে, গরমের জন্য দণ্ডটিকে আর হাতে ধরে রাখা যাচ্ছে না। কারণ এক্ষেত্রে , তাপ আগুনে রাখা প্রান্ত থেকে দণ্ডের মধ্য দিয়ে অপর প্রান্তে যাচ্ছে একেই বলে তাপের পরিবহণ।
[maxbutton id=”1″]
তাপ পরিচলন কাকে বলে?
যে পদ্ধতিতে পদার্থের উত্তপ্ত অণুগুলি নিজেরাই উন্নতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে তাপ নিয়ে যায়, তাকে পরিচলন বলা হয়।
সাধারণত তরল ও গ্যাসীয় পদার্থে পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন হয়। একটি পাত্রে কিছু তরল নিয়ে নীচের দিকে তাপ দিলে তরলের ওপরের অংশ মুখ্যত পরিচলন পদ্ধতিতেই উত্তপ্ত হয়।
তাপ বিকিরণ কাকে বলে?
যে পদ্ধতিতে তাপ কোনাে জড় মাধ্যমের সাহায্য ছাড়া, অথবা জড় মাধ্যমের মধ্য দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালিত হয় তাকে বিকিরণ বলা হয়। এই বিকিরণ পদ্ধতিতেই সূর্য থেকে তাপ পৃথিবীতে আসে।
- স্থিতি ও গতি
- অনুঘটক কি? অনুঘটকের বৈশিষ্ট্য
- জলের ব্যতিক্রান্ত প্রসারণ কি? জলের ব্যতিক্রান্ত প্রসারণ কেন দেখা যায়?
তাপ সঞ্চালনের তিনটি পদ্ধতির পার্থক্য :
(1) পরিবহণ ও পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের জন্য জড় মাধ্যমের প্রয়ােজন, কিন্তু বিকিরণ পদ্ধতিতে জড় মাধ্যমের প্রয়ােজন নেই। এই পদ্ধতিতে মাধ্যম ছাড়াও তাপ সঞ্চালিত হতে পারে।
(2) পরিবহণ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন এর সময় মাধ্যমের অণুগুলির কোনাে স্থানচ্যুতি ঘটে না । পরিচলন পদ্ধতিতে মাধ্যমের অণুগুলির স্থান পরিবর্তনের সাহায্যে তাপের সঞ্চালন হয়। বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্জলনের জন্য যেহেতু জড় মাধ্যমের প্রয়ােজন হয় না তাই মাধ্যমের অণুগুলির স্থানচ্যুতির কোনাে প্রশ্ন ওঠে না।
(3) পরিবহণ ও পরিচলন মন্থর পদ্ধতি। কিন্তু বিকিরণ খুব দ্রুত পদ্ধতি, বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ আলাের বেগ নিয়ে চলে ( 3 x 10^10 cm/s)।
(4) পরিবহণ ও পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ সােজা বা বাঁকা পথে চলাচল করতে পারে। কিন্তু বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ সর্বদা সরলরেখায় চলে।
(5) পরিবহণ ও পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ যে মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে চলে তাকে উত্তপ্ত করলেও বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ মাধ্যমকে উত্তপ্ত করে না।
**তাপ পরিবহনে কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় কেন? (ব্যতিক্রম – বিকিরণ)
পদার্থের গতিতত্ত্ব থেকে পরিবহণ প্রক্রিয়াকে সহজেই ব্যাখ্যা করা যায়। কোনাে কঠিন বস্তুর যে অংশে তাপ দেওয়া হয় সেখানকার অণুগুলির কম্পন বেড়ে যায়। অণুগুলি তাদের সাম্যাবস্থার চারপাশে বেশি বিস্তার নিয়ে কাঁপতে থাকে। ফলে তারা পাশের অণুগুলির সঙ্গে আরও বেশি সংঘর্ষ ঘটায় এবং সংঘর্ষের সময় তাদের কম্পনজনিত গতিশক্তির কিছু অংশ পাশের অণুগুলিকে দেয়। এই অণুগুলি আবার তাদের পাশের অণুগুলিকে কিছুটা শক্তি সঞ্চালিত করে। এভাবে তাপজনিত গতিশক্তি বা তাপ এক অণু থেকে অন্য অণুতে, অর্থাৎ একস্তর থেকে অন্যস্তরে প্রবাহিত হয়, কিন্তু অণুগুলির কোনাে স্থানচ্যুতি ঘটে না। স্পষ্টতই এই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন হতে একটি জড় মাধ্যমের প্রয়ােজন।
তাপ পরিবাহিতা কাকে বলে?
তাপ পরিবাহিতা : পদার্থের তাপ পরিবহণের ক্ষমতাকে পদার্থের তাপ পরিবাহিতা বলা হয়। বিভিন্ন পদার্থের তাপ পরিবহণের ক্ষমতা বিভিন্ন। সাধারণত ধাতব পদার্থের তাপ পরিবহণের ক্ষমতা অধাতু ও অন্যান্য পদার্থের চেয়ে বেশি। একটি কাঠের এক প্রান্ত উনুনে রেখে অন্য প্রান্ত দীর্ঘক্ষণ হাতে ধরে রাখা যায। কিন্তু একটি লােহার দণ্ডের এক প্রান্ত উনুনে রেখে অন্য প্রান্ত বেশিক্ষণ হাতে ধরে রাখা যায় না। লােহা কাঠের চেয়ে সহজে তাপ পরিবহণ করতে পারে। তাই লােহার তাপ পরিবাহিতা কাঠের চেয়ে বেশি।
যেসব পদার্থ খুব সহজে তাপ পরিবহণ করতে পারে তাদের তাপ পরিবাহী ( thermal conductor ) বলা হয়। প্রায় সব ধাতুই তাপ পরিবাহী। রুপার তাপ পরিবহণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। এরপরেই তামা ও অ্যালুমিনিয়ামের স্থান। ধাতুর মধ্যে বহু সংখ্যক মুক্ত ইলেকট্রন (free electron) থাকে। এই মুক্ত ইলেকট্রনগুলি ধাতুর মধ্যে আদর্শ গ্যাসের অণুর মতাে এলোেমলােভাবে ঘুরে বেড়ায় । ধাতব পদার্থের অণুগুলির সঙ্গে এই মুক্ত ইলেকট্রনগুলিও তাপ পরিবহণে অংশগ্রহণ করে বলে ধাতব পদার্থ তাপের সুপরিবাহী হয়।
যে সব পদার্থ সহজে তাপ পরিবহণ করতে পারে না তাদের তাপ অন্তরক বা অপরিবাহী বা কুপরিবাহী ( thermal insulator ) বলা হয়। পলিস্টাইরিন ( polystyrene ) , তুলাে , ফাইবারগ্লাস ( fibreglass ) , কাগজ , কর্ক , জল , কাঠ , রবার , অ্যাজবেসটস ( asbestos ) ইত্যাদি পদার্থ হল তাপ অন্তরক। পারদ ছাড়া সকল তরলই সাধারণভাবে তাপের কুপরিবাহী। গ্যাস মাত্রই তাপ অন্তরক। শূন্যস্থানের মধ্য দিয়ে তাপের পরিবহণ হয় না। তাই শূন্যস্থান আদর্শ তাপ অন্তরক।
তাপ পরিবাহিতার ব্যাবহারিক দৃষ্টান্ত
তামা বা অ্যালুমিনিয়াম তাপের সুপরিবাহী বলে রান্নার বাসনপত্র এগুলি দিয়ে তৈরি করা হয়। এদের মধ্য দিয়ে তাপ দ্রুত পরিবাহিত হতে পারে। একই কারণে বয়লার সাধারণত তামা দিয়ে তৈরি হয় ।
ডেভির নিরাপত্তা বাতি ( Davy’s safety lamp ) : তামার তারজালির সুপরিবাহিতাকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানী স্যার হামফ্রে ডেভি ( Sir Humphry Davy ) 1815 খ্রিস্টাব্দে এই বাতিটি উদ্ভাবন করেন। এই বাতিতে একটি সাধারণ তৈল প্রদীপকে একটি সূক্ষ্মসূক্ষ্ম ছিদ্রবিশিষ্ট তামার তারজালির বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। কয়লাখনিতে কোনাে দাহ্য গ্যাস থাকলে তা তারজালি ভেদ করে বাতির ভিতরে প্রবেশ করে এবং প্রদীপ শিখার সংস্পর্শে এসে জোরে জ্বলতে থাকে ও শিখার রং বদলে যায়। তারজালির ছিদ্র সূক্ষ্ম হওয়ার জন্য শিখা তারজালির বাইরে বেরােতে পারে না এবং শিখার তাপ তামার তারজালিতে দ্রুত পরিবাহিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে কোনাে বিস্ফোরণ হয় না। এই ধরনের তারজালি শিখা – রােধক ( flame arrestor ) নামে পরিচিত। এখন এই ধরনের বাতির বদলে অন্য ধরনের বাতি ব্যবহৃত হয়।
শীতকালে আমরা সাধারণ জামাকাপড়ের ওপর উল বা পশমের তৈরি জামাকাপড় পরি। এধরনের জামাকাপড় পরলে আমাদের ঠান্ডা বােধ হয় না। উল বা পশমের পােশাক পরলে গরম লাগে বলে এদের গরম পােশাকও বলা হয়। উল বা পশমের তৈরি জামাকাপড়ের ফাকে ফাকে বেশি পরিমাণ বায়ু থাকে। বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে এই বায়ুস্তর দেহের তাপকে বাইরে আসতে দেয় না। ফলে দেহ গরম থাকে। সাধারণ জামাকাপড়ের ফাঁকে ফাঁকে অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণ বায়ু থাকে। তাই এধরনের জামাকাপড় পরলে ততটা গরম বােধ হয় না।
আবার, একখানি মােটা জামার পরিবর্তে দুখানা অপেক্ষাকৃত পাতলা জামা পরলে বেশি গরম বােধ হয়। কারণ দুটি জামার মধ্যে বাতাসের একটি স্তর থাকে। বায়ু তাপের কুপরিবাহী, তাই দেহের তাপ বাইরে যেতে পারে না ফলে গরম বােধ হয়। একই কারণে শীতপ্রধান দেশে ঘরের জানালায় জোড়া কাচের শার্সি লাগানাে থাকে। দুটি কাচের শার্সির মধ্যে বায়ুস্তর থাকে। বায়ুস্তর তাপের কুপরিবাহী বলে ঘরের তাপ বাইরে যেতে পারে না। ফলে ঘর গরম থাকে।
কেটলির হাতলে বেত জড়ানাে থাকে । কেটলি সাধারণত অ্যালুমিনিয়ামে তৈরি হয় এবং অ্যালুমিনিয়াম তাপের সুপরিবাহী । ফলে তাপ দিলে কেটলির জল তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায় । সেই সঙ্গে কেটলির হাতলও গরম হয় এবং হাত দিয়ে হাতলটিকে ধরা যায় না। বেত তাপের কুপরিবাহী। তাই বেতের মধ্য দিয়ে তাপ হাতে এসে পৌছােয় না । সেজন্য হাতলে বেত জড়ানাে থাকে।
সুতরাং তাপ সঞ্চালন সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন উত্তরের পর্ব এখানেই শেষ করলাম, আশা করি বন্ধুরা খুব ভালই লাগলো post টি পড়ে। কোনো কিছু প্রশ্নের জন্য comment করতে ভুলবেন না।
image credit- Quizlet.com
Pingback: অনুঘটক কি? | ক্যাটালিস্ট কি | অনুঘটকের বৈশিষ্ট্য – Studious
Pingback: আর্কিমিডিসের নীতি ব্যাখা | আর্কিমিডিসের সূত্রের প্রয়োগ – Studious
Pingback: প্লবতা (Buoyancy) কাকে বলে | প্লবতার বৈশিষ্ট্য | প্লবতার সূত্র – Studious
Pingback: লীনতাপ কাকে বলে? | লীন তাপের একক – Studious