তড়িৎ চালক বল ( Electromotive force ) বা EMF :
তড়িৎ চালক বল (Electromotive force) : প্রত্যেক পরিবাহী পদার্থে অসংখ্য ইলেকট্রন মুক্ত অবস্থায় থাকে। এই মুক্ত ইলেকট্রনগুলি পরিবাহীর মধ্যে বিভিন্ন দিকে চলাচল করে। যদি বাহ্যিক কোন বলের সাহায্যে ঐ মুক্ত ইলেকট্রনগুলিকে পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে একটি নির্দিষ্ট অভিমুখে চলতে বাধ্য করা হয়, তবে পরিবাহীতে তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। এই বাহ্যিক বলকে তড়িৎ চালক বল (Electromotive force) বলে।
কার্যের ধারণা থেকে তড়িৎ চালক বলের সংজ্ঞা
কোনো তড়িৎ উৎসের ভিতর দিয়ে নিম্নবিভব থেকে উচ্চবিভবে একক পরিমাণ ধনাত্মক আধান স্থানান্তরিত করতে যে পরিমাণ কার্য সম্পাদন করতে হয় , সেই পরিমাণ কার্যকে ওই তড়িৎ উৎসের তড়িৎ চালক বল বা EMF বলে।
অর্থাৎ, তড়িৎচালক বল = সম্পাদিত কার্যের পরিমাণ /স্থানান্তরিত তড়িদাধান
তড়িৎ চালক বলের একক
তড়িৎচালক বলের ব্যাবহারিক একক ভোল্ট।
SI- তে তড়িৎচালক বলের একক জুল / কুলম্ব বা ভোল্ট।
1C ধনাত্মক আধানকে কোনো তড়িৎ উৎসের ভিতর দিয়ে নিম্নবিভব থেকে উচ্চবিভবে স্থানান্তরিত করতে যদি 1J কার্য করতে হয়, তবে ওই তড়িৎ উৎসটির তড়িৎচালক বলের মান হয় 1J / C বা 1V।
তড়িৎচালক বলের একক ও মাত্রীয় সংকেত বিভবপ্রভেদের সঙ্গে অভিন্ন।
তড়িৎ চালক বলের উৎস
কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন তড়িৎপ্রবাহ পাঠাতে হলে পরিবাহীর দুই প্রান্তে স্থায়ী বিভবপ্রভেদ বজায় রাখতে হয় । যে নির্দিষ্ট ব্যবস্থা বা উপকরণের সাহায্যে এটি করা সম্ভব হয়, তাকে তড়িৎচালক বলের উৎস বা সংক্ষেপে তড়িৎ উৎস বলে। ডায়ানামো, তাপযুগ্ম, তড়িৎকোশ, আলোক তড়িৎকোশ প্রভৃতি হল তড়িৎ চালক বলের উৎস।
তড়িৎ চালক বলের উৎসের কার্যনীতি
তড়িৎচালক বলের উৎসের কার্যনীতি শক্তির রূপান্তরের ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত। তড়িৎবর্তনীতে স্থির-তাড়িতিক নয় এমন ( Non – electrostatic agent ) সংস্থার দ্বারা সম্পাদিত কার্যের বিনিময়ে বা শক্তির রূপান্তর ঘটার ফলে দুটি নির্দিষ্ট বিন্দুর মধ্যে বিভবপ্রভেদ সৃষ্টি হয়। এই বিভবপ্রভেদই আধান বাহক কণা, যেমন — মুক্ত ইলেকট্রন, আয়ন ইত্যাদিকে নির্দিষ্ট অভিমুখে পরিচালিত করে ও তড়িৎপ্রবাহ সৃষ্টি পরিমাণ বা তড়িৎ চালক বলের পরিমাপ দেয়।
তড়িৎ চালক বলের মানের নির্ভরতা
কোনো তড়িৎকোশের তড়িৎচালক বল শুধুমাত্র কোশে ব্যবহৃত সক্রিয় তরল ও ও তড়িদ্দ্বারগুলির প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। কোনো ব্যবহৃত তরলের পরিমাণ বা তড়িদ্বারগুলির আকারের ওপর তড়িৎচালক বল একেবারেই নির্ভরশীল নয়।
আরও পড়ুন:-
- ওহমের সূত্র ও ওহমের সূত্রের গাণিতিক রূপ | Definition of Ohm’s Law in bengali
- তড়িৎ বিভব কাকে বলে | তড়িৎ বিভব ও বিভব প্রভেদ এর পার্থক্য
তড়িৎ চালক বল ও বিভব প্রভেদ এর মধ্যে পার্থক্য ( difference between electromotive force and potential difference )
১) তড়িৎচালক বল : মুক্ত বর্তনীতে তড়িৎ কোষের দুই মেরুর মধ্যে বিভব পার্থক্যকে কোষের তড়িৎচালক বল বলে।
বিভব প্রভেদ : বদ্ধ বর্তনীতে কোষের দুই মেরুর তড়িৎ বিভবের মান এর পার্থক্যকে বিভব প্রভেদ বলে।
২) তড়িৎচালক বল : তড়িৎচালক বল হলে ৷ বিভব প্রভেদ এর কারণ।
বিভব প্রভেদ : বিভব প্রভেদ হলো তড়িৎচালক বলের ফল।
৩) তড়িৎচালক বল : তড়িৎচালক বলের মান বিভব প্রভেদ এর মান অপেক্ষা বেশি হয় ।
বিভব প্রভেদ : বিভব প্রভেদ এর মান তড়িৎচালক বলের মান অপেক্ষ কম হয়।
৪) তড়িৎ চালক বল : বর্তনীর যে অংশে তড়িৎচালক বল উৎপন্ন হয়, সেই অংশে অন্য শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
বিভব প্রভেদ : বর্তনীর যে অংশে বিভব প্রভেদ এর অস্তিত্ব থাকে, সেখানে তড়িৎ শক্তি অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
৫ ) তড়িৎ চালক বল : পোটেনশিওমিটার যন্ত্র দিয়ে তড়িৎ চালক বল মাপা হয়।
বিভব প্রভেদ : ভোল্ট মিটার দিয়ে বিভব প্রভেদ মাপা হয়।
Pingback: তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ফল কাকে বলে | তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ফলের ব্যবহার | জুলের সূত্র Class10 – Studious
Pingback: বার্লোচক্রের কার্যনীতি ব্যাখ্যা কর | বার্লোচক্র কি? – Studious
Lallantop