Skip to content

জৈনধর্ম কি? | মহাবীর ও জৈনধর্মের ইতিহাস

জৈনধর্ম কি মহাবীর ও জৈনধর্মের ইতিহাস

আজ আমরা জানবো “মহাবীর ও জৈনধর্ম” এর ইতিহাস সম্পর্কে

তীর্থঙ্কর

এই শব্দের অর্থ হলো মুক্তির পথ নির্মাতা (সংসারে দুঃখ পার হওয়ার ঘাট )। প্রথম তীর্থঙ্কর ছিলেন ঋষভনাথ বি ঋষভদেব। 23 তম তীর্থঙ্কর হলেন পরেশনাথ বা পাশ্বনাথ। তিনি ছিলেন কাশীর রাজপুত্র এবং জৈন ধর্মের প্রথম ঐতিহাসিক ব্যক্তি। জৈন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহাবীর। মহাবীর 24 তম তীর্থঙ্কর তীর্থঙ্কর ছিলেন।

বর্ধমান মহাবীর

540 খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিহারের মোজাফফরপুর জেলার কুন্দ গ্রামে মহাবীর বর্ধমান জন্মগ্রহণ করে। তাঁর পিতা সিদ্ধার্থ ছিলেন জ্ঞাত্রিতা প্রধান। তার মাতা ত্রিশলা দেবী ছিলেন বৈশালী ও লিচ্ছবি বংশের রাজকুমার চেতকের বোন। বিম্বিসারের আত্মীয় ছিলেন। তিনি যশোদাকে বিয়ে করেছিলেন। প্রিয়দর্শনা নামে এক কন্যা ছিল। যার স্বামী জামালী বর্ধমান মহাবীরের প্রথম শিষ্য হয়েছিলেন।

মহাবীর এর পিতা মাতার মৃত্যুর পর 30 বছর বয়সে তিনি সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। সন্ন্যাস গ্রহণের ত্রয়োদশতম বছরে বৈশাখ মাসের 10 তারিখে জিম্ভিকাগ্রাম শহরের বাইরে কৈবল্য অর্থাৎ জ্ঞান লাভ করেন। তখন থেকে তিনি জৈন বা জিতেন্দ্রিয় এবং মহাবীর নামে পরিচিত হলেন এবং তার অনুগামীদের নাম হলো জৈন সম্প্রদায়।

আনুমানিক 527 খ্রীষ্টপূর্বাব্দে 72 বছর বয়সে মগধের অন্তর্গত রাজগীরের নিকটে পাবাপুরীতে স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরণ করেন।

ধর্ম প্রচার : মহাবীর নিজে মিথিলা, মগধ, অঙ্গ কোশল এ ধর্ম প্রচার করেন।

রাজন্যবর্গ : বিম্বিসার, অজাত শত্রু, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, কলিঙ্গরাজ খারবেল।

জৈনধর্মের বিভাজন

মহাবীরের মৃত্যুর পর চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজত্বকালে গঙ্গা উপত্যকা থেকে দাক্ষিণাত্য পর্যন্ত এক ভয়ঙ্কর আকার এর দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। যেখানে তাদের ধর্মীয় মঠগুলি ছিল। পুনর্বাসনের জন্য জৈনদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়। তখন থেকে জৈনদের মধ্যে দুটি বিভাগ সৃষ্টি হয় দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর।

দিগম্বর কি? ভদ্রবাহুর নেতৃত্বে যে সকল জৈন সন্ন্যাসী নগ্নতাকে গ্রহণ করেন অর্থাৎ বস্ত্রত্যাগের কথা দক্ষিণ ভারতে প্রচার করেন তাদের দিগম্বর বলে।

শ্বেতাম্বর কি? স্থুলভদ্র এর নেতৃত্বে যেসকল জৈন সন্ন্যাসী শ্বেতবস্ত্র পরিধান কে গ্রহণ করে উত্তর ভারতে এই আদর্শ প্রচার করেন তাদের শ্বেতাম্বর বলে।

জৈনধর্ম চতুর্যাম কী?

23 তম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ প্রবর্তিত চতুর্যাম নীতিগুলি মহাবীর গ্রহণ করেছিলেন এগুলি হল অহিংসা
সত্যবাদিতা
অচৌর্য
অপরিগ্রহ
বা কোন বস্তুর প্রতি মায়া বা শক্তি না থাকায় আসক্তি না থাকা।

জৈনধর্ম পঞ্চমহাব্রত কি?

পার্শ্বনাথ প্রবর্তিত এই চারটি নীতির সঙ্গে মহাবীর পঞ্চম নীতি হিসেবে “ব্রহ্মচর্য” পালনের আদর্শ কে তুলে ধরেছিলেন। জৈন ধর্মে এই পাঁচ টি আদর্শ পঞ্চমহাব্রত নামে পরিচিত।

জৈনধর্ম ত্রিরত্ন কি?

জৈন ধর্মের অনুরাগীরা,
1) জন্মান্তরবাদ ও কর্মফলবাদে বিশ্বাসী।
2) জীবনের এই আবর্ত থেকে মুক্তি লাভের উপায় হল সিদ্ধলাভ হওয়া যা
এই তিনটি নীতি অনুসরণে দ্বারা সম্ভব- সৎ বিশ্বাস, সৎ জ্ঞান, সৎ আচরণ জৈন ধর্মের ত্রিরত্ন বলা হয়।

মহাবীরের উপদেশ

1) বেদের কর্তৃত্ব বর্জন করা এবং বলিদান প্রথার কাজে লিপ্ত না থাকা।
2) তিনি বিশ্বাস করতেন যে প্রত্যেক বস্তু এমনকি ক্ষুদ্রতম বস্তুর প্রাণ আছে এবং তাদের চেতনা আছে সেই কারণে অহিংসাকে কঠোরভাবে মানতে হবে।
3) ভগবানের অস্তিত্বকে অর্থাৎ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা বলে কাউকে মানতেন না
4) বিশ্বভ্রাতৃত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। (জাতির ভেদ প্রতি অবিশ্বাস ছিল)

জৈনধর্ম সম্মেলন

1) প্রথম সম্মেলন= তৃতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দের শুরুতেই স্থুলভদ্র এর সভাপতিত্বে পাটুলিপুত্র অনুষ্ঠিত হয়েছিল। শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর দুটি সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়।
2) দ্বিতীয় সম্মেলন= পঞ্চম শতাব্দীতে দেবৠষিগানির নেতৃত্বে  গুজরাটের বলভী তে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জৈনদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ “দ্বাদশ অঙ্গ” এর পুনর্মূল্যায়ন করে “দ্বাদশ উপাঙ্গ” নামে আরও 12 টি অনুশাসন যোগ করা হয়।

জৈনধর্মের স্থাপত্য/ভাস্কর্য

হাতিগুম্ফা, বাঘগুম্ফা, উদয়গিরি, খণ্ডগিরি-উড়িষ্যা।
মাউন্ট আবুর দিলওয়ারা মন্দির, তেজপাল মন্দির।
গিরনার ও পালিটানা মন্দির- গুজরাত।
পাবাপুরী ও রাজগৃহ মন্দির- বিহার।
গোমতেশ্বর/বাহুবলী মূর্তি- শ্রাবণবেলগোলা (মহীশূর/কর্ণাটক)

জৈন দর্শন

অনেকান্তবাদ : এই তত্ত্বের মূল বক্তব্য হলো- “বাস্তবের সত্যের প্রকৃত স্বরূপ হলো অনন্ত”।
ন্যায়বাদ : শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে বাস্তব সত্যকে বিচার করা।
স্যাদবাদ : জৈন ধর্মের সাতটি দৃষ্টিকোণের কথা বলা হয়েছে। তা একসাথে “সপ্তভঙ্গি নায়া” নামে পরিচিত। “স্যাদ” শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল “হতে পারে“। 

ভারতের জৈন ধর্মে অবলুপ্তির কারণ

ভারতের জৈন ধর্মে অবলুপ্তির কারণ হিসাবে বিভিন্ন বিষয় দায়ী ছিল।
তারা অহিংসার ধারণাকে অতিরিক্তভাবে গ্রহণ করেছিল। তারা উপদেশ দিয়েছিল যে অসুখ করলে ওষুধপত্র খাওয়া উচিত নয় কারণ ওষুধ খেলে জীবানুগুলি মারা যায়।
বিশ্বাস করতো যে উদ্ভিদের এবং শাকসবজিও প্রাণ আছে তাদের আঘাত করা থেকে দূরে থাকা উচিত।
সাধারণ লোকের কাছে এগুলি গ্রহণযোগ্য হয়নি। পরবর্তী রাজাগণ এর কাছ থেকে কোন পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেনি।

জৈন ধর্মের ইতিহাস থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্তর

মহাবীর কোন নদীর তীরে কৈবল্য লাভ করেন?- ঋজুপালিকা।

দিগম্বর পন্থীদের নেতা কে ছিলেন?- ভদ্রবাহু।

শ্বেতাম্বর গোষ্ঠীর নেতা কে ছিলেন?- স্থুলভদ্র।

প্রথম জৈন সম্মেলন কত সালে সংঘটিত হয়েছিল?- 300 খ্রিস্টপূর্বাব্দে।

“নির্গ্রন্থ নটপুএ” নামে পরিচিত- বর্ধমান মহাবীর।

তীর্থঙ্কর কথার অর্থ কি?- মুক্তির পথ প্রদর্শক।

শেষ জৈন তীর্থঙ্কর এর নাম কি?- বর্ধমান মহাবীর।

চতুর্যামের প্রবর্তক কে ছিলেন?- পার্শ্বনাথ।

জৈনদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের নাম কি?- দ্বাদশ অঙ্গ।

জৈন ধর্মের দুটি পন্থা কি কি?- শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর।

কোন রাজা গৌতম বুদ্ধ এবং মহাবীর জৈন সমসাময়িক ছিলেন?-বিম্বিসার 

Share this

Related Posts

Comment us

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook Page