নমস্কার প্রিয় পাঠকেরা, ইতিহাসের আগের পোস্ট গুলিতে আমরা আলোচনা করেছি বিভিন্ন বিদ্রোহ সম্পর্কে, আজও আমাদের সেই পর্বই চলছে, এবং আজ আমরা আলোচনা করবো সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ সম্পর্কে, সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ, সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ কেন হয়েছিল, সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের বিস্তার, সন্ন্যাসী ও ফকির, সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের অবসান ইত্যাদি সম্পর্কে
১৭৬৩ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে বাংলা ও বিহারে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী গিরি ও দশনামী সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসী এবং মাদারি সম্প্রদায়ভুক্ত ফকিরদের নেতৃত্বে যে কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল, তা সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ:
1) রাজস্বের চাপ: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উচ্চহারে রাজস্ব বৃদ্ধি করায় কৃষিজীবী সন্ন্যাসী ও ফকিররা করভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে। তা ছাড়া কোম্পানির কর্মচারীরা প্রায়ই ব্যবসায়ী সন্ন্যাসী ও ফকিরদের কাছ থেকে রেশম বা রেশমজাত পণ্য বলপূর্বক ছিনিয়ে নিত।
2) ইজারাদারি শোষণ: সন্ন্যাসী – ফকিরদের অধিকাংশই ছিল কৃষিজীবী। অধিক খাজনা আদায়ের জন্য কোম্পানির ইজারাদারদের শোষণ কৃষকদের ক্ষিপ্ত করে তুলেছিল।
3) তীর্থকর আরোপ: সন্ন্যাসীরা মাঝেমধ্যেই দলবদ্ধভাবে তীর্থে যেত। কোম্পানি সরকার তাদের উপর তীর্থকর ধার্য করে এবং ফকিরদেরও দরগায় যেতে বাধা দেয়।
আরও পড়ুন:
- চুয়াড় বিদ্রোহ ১৭৯৮ – Chuar Rebellion 1798
- কোল বিদ্রোহ | কোল বিদ্রোহের কারণ | কোল বিদ্রোহের গুরুত্ব ও ফলাফল
- নীল বিদ্রোহ (Indigo Revolt) | নীল বিদ্রোহের কারণ, গুরুত্ব, ফলাফল
- মুন্ডা বিদ্রোহ | মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ | মুন্ডা বিদ্রোহের ফলাফল
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের সূচনা : ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় সন্ন্যাসীরা প্রথম ইংরেজ কুঠির উপর আঘাত করে। ওই বছরেরই ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে ক্যাপটেন গ্রান্টের নেতৃত্বে একদল ইংরেজ সেনা এই কুঠি পুনরায় দখল করে নেয়। ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে দিনহাটার সন্ন্যাসীনায়ক রামানন্দ গোঁসাই -এর বাহিনীর সঙ্গে লেফটেন্যান্ট মরিসনের বাহিনীর প্রচণ্ড যুদ্ধে বিদ্রোহীরা পরাস্ত হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সন্ন্যাসীরা ইংরেজদের উপর আক্রমণ করে এবং মরিসনের সৈন্যবাহিনী সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত হয়।
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের বিস্তার: ঢাকা থেকে এই বিদ্রোহ শুরু হয় এবং এরপর রাজশাহির রামপুর কুঠি আক্রান্ত হয়। ক্রমে বিদ্রোহ দাবানলের মতো বগুড়া , মালদহ , রংপুর , দিনাজপুর , কোচবিহার , ময়মনসিংহ , ফরিদপুর প্রভৃতি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে সন্ন্যাসী – ফকিরদের মধ্যে আত্মকলহের ফলে বিদ্রোহীরা দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপর সন্ন্যাসী – ফকিরেরা পৃথক পৃথকভাবে ইংরেজদের বাধা দেয়। ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে বগুড়া জেলায় মঞ্জরার যুদ্ধে ইংরেজ সেনার গুলিতে আহত হয়ে মজনু শাহ প্রাণত্যাগ করেন। মজনু শাহের পর মুসা শাহ পরাজিত হলে ভবানী পাঠক সন্ন্যাসীদের নেতৃত্ব দেন। ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে এক জলযুদ্ধে ভবানী পাঠক পরাজিত ও নিহত হন। তাঁর শিষ্যা দেবী চৌধুরাণী কিছু সময় ধরে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু তিনিও ইংরেজদের হাতে পরাজিত হয়েছিলেন।
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের অবসান : অবশেষে নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক দুর্বলতা, যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, ইংরেজদের দমননীতি এবং সন্ন্যাসী ও ফকিরদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদের ফলেই এই বিদ্রোহ শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ইংরেজি সরকারি নথিপত্রে এর আর কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। এইভাবে ভারতের প্রথম কৃষক বিদ্রোহের অবসান ঘটে।
মূল্যায়ন : বড়োলাট ওয়ারেন হেস্টিংস প্রমুখ রাজপুরুষরা এই বিদ্রোহকে হিন্দুস্তানের যাযাবর, পেশাদার ডাকাতদের উপদ্রব বলে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই মত সত্য নয়। কারণ -অনেকক্ষেত্রেই শোষিত কৃষকগণ বিদ্রোহীদের সাহায্য করেছিল। কেবল লুণ্ঠনকারী হলে তারা এই সাহায্য পেত না।
Covered Topics: সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ, সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ কেন হয়েছিল, সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের বিস্তার, সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ, সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের অবসান,
good post
ধন্যবাদ স্যার
ধন্যবাদ স্যার