হ্যালো ভিজিটর, আজ আমরা আলোচনা করবো ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় “অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি”। আজ আমরা জানবো ” অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি কি?, অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি কে প্রয়োগ করেন?, অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি কে কবে প্রবর্তন করেন? কে স্বেচ্ছায় এই নীতি মেনে নেন? সর্বপ্রথম অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণ করেন কে? আরও যাবতীয় প্রশ্ন ও তাদের উত্তর।
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি কি?
লর্ড ওয়েলেসলি ছিলেন ঘোর সাম্রাজ্যবাদী। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে দেশীয় রাজ্যগুলিকে বিদেশি আক্রমণ থেকে হাত থেকে রক্ষা করার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি তে যে নীতির প্রয়ােগ ঘটিয়ে কোম্পানির অধীনে আসার জন্য বাধ্য করেন, সেই নীতিই অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ( Policy of Subsidiary Alliance ) নামে পরিচিত।
এই নীতিটি প্রসঙ্গে লর্ড ওয়েলেসলি নিজেই বলেছেন— দেওয়ানি লাভের পর অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ছিল সবথেকে স্বতন্ত্র ও উপযােগী ব্যবস্থা ( ..the most solitary and useful measure after the diwani ‘) I
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির উদ্ভাবক
অধীনতামূলক মিত্ৰতা নীতি র প্রকৃত উদ্ভাবক ছিলেন লর্ড ওয়েলেসলি। তার অনেক আগেই লর্ড ক্লাইভ ও ওয়ারেন হেস্টিংস প্রায় একই ধরনেরই নীতির প্রচলন ঘটিয়ে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আওতায় আনার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছিলেন।
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির শর্তাবলী কি কি
অধীনতামূলক মিত্ৰতা নীতি র উল্লেখযােগ্য শর্তগুলি হল—
১) স্বাক্ষরকারী দেশীয় রাজ্যগুলি কোম্পানির অনুমতি গ্রহন না করে না অন্য কোনাে রাজ্যের সঙ্গে চুক্তি বা মিত্রতা স্থাপন করতে পারবে না।
২) এই চুক্তি তে স্বাক্ষরকারী দেশীয় রাজ্যগুলিকে সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে এক ব্রিটিশ রেসিডেন্ট বা প্রতিনিধিসহ একদল ব্রিটিশ সৈন্য রাখতে হবে।
৩) কোম্পানির বিনা অনুমতিতে কোন যুদ্ধ ঘোষণা বাসন্তী স্থাপন করা যাবে না
৪) এইসব রাজ্যে একদল ইংরেজ সৌন্য থাকবে এবং তাদের ব্যয় নির্বাহের জন্য রাজ্যের কিছু অংশ ইংরেজদের ছেড়ে দিতে হবে।
৫) এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী রাজ্যগুলি কোম্পানির অনুমতি গ্রহন না করে অন্য কোনাে বিদেশী কোম্পানির ব্যক্তিকে নিজের সেনাবাহিনীতে বা সরকারি চাকরির পদে নিযুক্ত করতে পারবে না।
- [maxbutton id=”2″ url=”https://bit.ly/2OZlK2g” ]
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির প্রয়োগ
লর্ড ওয়েলেসলি এই নীতির দ্বারা বেশ কিছু দেশীয় রাজ্যকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি সর্বপ্রথম হায়দ্রাবাদের নিজাম গ্রহন করেন ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে। তারপর কয়েকটি রাজ্য ছিল তাঞ্জোর, সুরাট, কর্নাটক। এ ছাড়াও তিনি একে একে অযােধ্যার নবাব , পেশােয়া দ্বিতীয় বাজিরাওকে এই চুক্তি গ্রহন বাধ্য করেন। মালব , উদয়পুর , যােধপুর , জয়পুর , গায়কোয়াড় , বুন্দেলখণ্ড প্রভৃতি রাজ্যেও কোম্পানি অধীনতামূলক মিত্ৰতা নীতি প্রয়ােগ করে।
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির গুরত্ব
ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অধীনতামূলক মিত্ৰতা নীতি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১) কোম্পানি কর্তৃক নিয়ােজিত ব্রিটিশ রেসিডেন্ট দেশীয় রাজ্যগুলির অভ্যন্তরীণ শাসননীতিতে হস্তক্ষেপ করলে সেই রাজ্যে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা চরমে পৌঁছায়।
২) দেশীয় রাজাদের অর্থে ইংরেজরা এক বিশাল সেনাবাহিনী মােতায়েন রাখার সুযােগ পেলে এদেশে কোম্পানির নিরাপত্তার জন্য সামরিক খরচ অনেকটাই কমে যায়।
৩) অধীনতামূলক মিত্ৰতা নীতিতে আবদ্ধ করে বহু দেশীয় রাজ্যের সঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্ক গড়ে উঠলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কোম্পানি তার ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটায়।
৪) ব্রিটিশ নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়ায় দেশীয় রাজ্যগুলি নিজেদের সেনাবাহিনী ভেঙে দেয় । দেশীয় রাজ্যগুলির সামরিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়লে ব্রিটিশ শর্ত অমান্যের অজুহাত এনে যে – কোনাে সময় দেশীয় ও মিত্র রাজ্যগুলিকে গ্রাস করার পথ খােলা রাখে।
৫) এই নীতিতে আবদ্ধ হয়ে দেশীয় রাজ্যগুলি কার্যত নিজেদের স্বাধীন সত্তা বিসর্জন দেয় এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তােলার অধিকার হারায়।
উপসংহার : প্রকৃতপক্ষে, এই চুক্তি ছিল একটি ফাঁদ এবং এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করা ছিল পরাধীনতার চুক্তিতে স্বাক্ষরের নামান্তর । দেশীয় রাজন্যবর্গের মধ্যে সর্বাপেক্ষা দুর্বলচিত্ত , নীতিহীন , ভীরু ও আত্মমর্যাদাহীন হায়দ্রাবাদের নিজাম সর্বপ্রথম এই দাসত্বের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন ( ১৭৯৮ খ্রিঃ ) । তারপর একে একে তাঞ্জোর , ভূপাল , উদয়পুর , মালব , বুন্দেলখন্ড , যােধপুর , কর্ণাটক , সুরাট এবং পেশােয়া এই নীতি মেনে নেন।
Pingback: ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ ( Anglo-Mysore War ) | ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের কারণ – Studious
Pingback: চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি? | চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফল ও সুফল – Studious
Good
Ai question ans ta khub valo. Pora valo laglo.