Skip to content

রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি | রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি (DPSP) ব্যাখ্যা কর

রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি

ভারতীয় সংবিধানের চতুর্থ অংশে বর্ণিত অনুচ্ছেদ 36-51-এ রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি গুলি (Directive Principle of State Policy) নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এইগুলি আয়ারল্যান্ডের সংবিধান থেকে নেওয়া হয়েছে। এই পোস্ট টিতে কেবল রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতিগুলি, ভারতীয় সংবিধানে এর গুরুত্ব এবং মৌলিক অধিকারগুলির সাথে এর পার্থক্য আলোচনা করব

রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি সমূহ

সংবিধানের অংশ IV- এর 36-51 অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতিসমূহ বর্ণিত হয়েছে।

ড . আম্বেদকর এই নীতিগুলিকে সংবিধানের মহান বৈশিষ্ট্য বলে বর্ণনা করেছেন।

রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি সমূহ আয়ারল্যান্ডের সংবিধান থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগুলি হল আইনবিভাগ ও শাসনবিভাগের প্রতি শাসনতান্ত্রিক নির্দেশাবলি ।

1935 খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের নির্দেশগুলির সঙ্গে এগুলির সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

1) এগুলি একটি আধুনিক রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক , সামাজিক এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমকে নির্দেশিত করে । এগুলি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের প্রসার ঘটায় । এগুলি একটি জনকল্যাণকর রাষ্ট্রের ধারণা গড়ে তোলে।

2) এগুলি দেশের শাসনকার্যের মূল ভিত্তি। এগুলি আদালতে বলবৎযোগ্য নয়।

3) এগুলি কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার উভয়ের ক্ষেত্রে এবং রাষ্ট্রের সংজ্ঞাধীন অন্যান্য সমস্ত কর্তৃপক্ষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিসমূহের কোনো শ্রেণি বিভাজন করা হয়নি । তবে এগুলির বিষয়বস্তু ও লক্ষ্যের নিরিখে এগুলিকে মোটামুটি তিনটি বিভাগে ভাগ করা যায়—

1) সমাজতান্ত্রিক ,

2) গান্ধিবাদী এবং

3) উদারপন্থী।

সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি

এই নীতিগুলি সমাজতান্ত্রিক আদর্শকে প্রতিফলিত করে।

1) অনুচ্ছেদ 38 : জনগণের মঙ্গলের জন্য রাষ্ট্র এমন একটি সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলবে যেখানে সামাজিক , অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে এবং যেখানে মানুষের রোজগার , মর্যাদা ও সুযোগসুবিধার ক্ষেত্রে ন্যূনতম বৈষম্য থাকবে।

2) অনুচ্ছেদ 39 :

  • [ i ] প্রত্যেক নাগরিকের জন্য পর্যাপ্ত জীবিকা অর্জনের সুযোগ ,
  • [ ii ] দেশের সম্পদের মালিকানা সর্বসাধারণের জন্য ব্যবহারের সুযোগ ,
  • [ iii] উৎপাদনের উপায়গুলি মুষ্টিমেয়র হাতে কেন্দ্রীভূত না হওয়া ,
  • [ iv ] একই কাজের জন্য নারীপুরুষের একই মজুরি ,
  • [ v ] শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও কর্মশক্তির সংরক্ষণ এবং শিশুদের বলপূর্বক শ্রমদানে বাধ্য না করা ,
  • [ vi ] শিশুদের স্বাস্থ্যকর বিকাশের সুযোগ প্রভৃতি অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে।

 

3) অনুচ্ছেদ 39A : ন্যায়বিচার ও সাম্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় আইন বলবৎ এবং দরিদ্র ব্যক্তিদের জন্য বিনাখরচে আইনি সাহায্যের ব্যবস্থা করতে হবে ।

4) অনুচ্ছেদ 41 : রাষ্ট্র তার সামর্থ্য অনুযায়ী সকল নাগরিকের কর্মের ও শিক্ষার ব্যবস্থা করবে এবং বেকার , বৃদ্ধ , অসুস্থ ও অক্ষমদের জন্য সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা করতে হবে।

5) অনুচ্ছেদ 42 : কর্মক্ষেত্রে মানবিক ও ন্যায়সংগত পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে এবং প্রসূতিদের স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।

6) অনুচ্ছেদ 43 : সমস্ত শ্রমিকদের জন্য জীবনধারণের উপযোগী মজুরি , ভদ্র মানের সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।

7) অনুচ্ছেদ 43A : শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিকদের ম্যানেজমেন্টে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে ।

8) অনুচ্ছেদ 47 : মানুষের জীবনযাত্রার ও পুষ্টির মানোন্নয়ন এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন।

গান্ধিবাদী রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি

গান্ধিজির আদর্শের উপর ভিত্তি করে এই নীতিগুলি নির্ধারণ করা হয়েছে।

1) অনুচ্ছেদ 40 : গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে স্বায়ত্তশাসন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

2) অনুচ্ছেদ 43 : গ্রামাঞ্চলগুলিতে ব্যক্তিগতভাবে এবং সমবায়ের ভিত্তিতে কুটির শিল্পের প্রসার ঘটাতে হবে ।

3) অনুচ্ছেদ 46 : তপশিলি জাতি , উপজাতি ও সমাজের অন্যান্য দুর্বল অংশের শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক বিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদের সামাজিক অবিচার ও শোষণের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে ।

4) অনুচ্ছেদ 47 স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক মাদক সেবন নিষিদ্ধ করতে হবে ।

5) অনুচ্ছেদ 48 : গোরু , বাছুর ও অন্যান্য দুগ্ধপ্রদায়ী ও ভারবাহী পশুহত্যা নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তাদের আরও উন্নত প্রজনন করাতে হবে।

 

আরও পড়ুন:- 

উদারপন্থী রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি

এই নীতিগুলির মূলে রয়েছে উদারনীতিবাদী আদর্শ ।

1) অনুচ্ছেদ 44 : সমস্ত নাগরিকের জন্য সারা দেশে অভিন্ন , দেওয়ানি বিধি চালু করতে হবে ।

2) অনুচ্ছেদ 45 : ছ – বছর বয়স পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি শিশুর শৈশব এবং তাদের শিক্ষার বিষয়ে যত্নশীল হতে হবে ।

4) অনুচ্ছেদ 48 : আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে কৃষি ও পশুপালনের ব্যবস্থা করতে হবে।

5) অনুচ্ছেদ 48A : পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ এবং বন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে ।

5) অনুচ্ছেদ 49 : গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ঘোষিত জিনিসপুত্র , জায়গা ও স্মারকচিহ্নের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে ।

6) অনুচ্ছেদ 50 : রাষ্ট্রের বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে পৃথক করতে হবে ।

7) অনুচ্ছেদ 51 : রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রসার এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে ন্যায়সংগত ও শ্রদ্ধাজনক সম্পর্কস্থাপন , আন্তর্জাতিক আইন , সন্ধি প্রভৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন , সালিশির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তি প্রভৃতিতে সচেষ্ট হবে।

Covered Topics: রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি গুলি (Directive Principle of State Policy), ভারতীয় সংবিধানের নির্দেশমূলক নীতি গুলি কি কি, নির্দেশমূলক নীতির বৈশিষ্ট্য, ভারতীয় সংবিধানের নির্দেশমূলক নীতি কত নম্বর অধ্যায় আছে।

Share this

Related Posts

Comment us

1 thought on “রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি | রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি (DPSP) ব্যাখ্যা কর”

  1. Pingback: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল কি? ( International Monetary Fund ) – Studious

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook Page