হ্যালো বন্ধুরা, আমরা সকলের জানি ভারতীয় সংবিধানের কথা। ভারতীয় সংবিধান হলো বিশ্বে সব থেকে বড় লিখিত সংবিধান। আজ আমরা আলোচনা করবো এই ভারতীয় সংবিধান সম্পর্কে, জানবো ভারতীয় সংবিধানের ইতিহাস, কিভাবে রচনা হলো ভারতীয় সংবিধান? কে করলো এই রচনা? কতদিন ই বা সময় লাগলো ভারতীয় সংবিধান রচনায়।
ভারতীয় সংবিধান (Constitution of India)
স্বাধীনতা লাভের বহু পূর্বে ভারতবাসী ‘গণপরিষদ’ বা ‘সংবিধান সভা’ গঠন করে নিজেদের শাসনতন্ত্র রচনার দাবি জানিয়ে আসছিল। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের মন্ত্রী-মিশন ’ বা ‘ ক্যাবিনেট মিশন ’-এর পরিকল্পনায় গণপরিষদ গঠনের কথা বলা হয়।
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে প্রাদেশিক আইন সভাগুলির সদস্যদের দ্বারা পরােক্ষভাবে গণপরিষদ বা সংবিধান সভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভারতীয় গণপরিষদের মােট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৮৫। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ ই ডিসেম্বর নতুন দিল্লিতে গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে। ড . রাজেন্দ্র প্রসাদ গণপরিষদের স্থায়ী সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া, এই সভায় অন্যান্য বিশিষ্ট সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু , সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ , বি . আর . আম্বেদকর , রাধাকৃষাণ , কে . এম . মুন্সি এবং আবদুল গফফ খান – এর মতাে নেতৃবর্গ।
♦ গণপরিষদের লক্ষ্য♦
কেবলমাত্রস্বাধীনতা অর্জন কখনই একটি জাতির একমাত্র লক্ষ্য হতে পারে না। আর্থ – সামাজিক ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাই জাতির মূল লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য প্রয়ােজন বহিঃশত্রুর নিয়ন্ত্রণমুক্ত পূর্ণ স্বাধীনতা।
আরও পড়ুন:
♦ ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাল, তাদের প্রতিষ্ঠাতা pdf
♦ ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ (Anglo-Maratha War) | ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের কারন
♦ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ ( Anglo-Mysore War ) | ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের কারণ
ভারতীয় গণ-পরিষদের লক্ষ্য ছিল স্বাধীন ভারতের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামাের রূপরেখা অঙ্কন করা। এই লক্ষ্য নির্ধারণে সংবিধান রচয়িতাগণ গান্ধিজির চিন্তাধারা এবং পাশ্চাত্যের উদারনৈতিক মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। জওহরলাল নেহরু বলেন যে, গণপরিষদের প্রধান কাজ হবে প্রতিটি ভারতবাসীকে তার যােগ্যতা অনুযায়ী আত্মবিকাশের সর্বাধিক সুযােগ প্রদান করা। ড . রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেন যে, দুঃখ – দারিদ্রের অবসান ঘটানাে , বৈষম্য ও শােষণের বিলােপসাধন এবং সুন্দর জীবনযাত্রার উপযােগী পরিবেশ সৃষ্টি করাই হবে গণপরিষদের লক্ষ্য। ড . সর্বপল্লী রাধাকৃষাণ -মতে একটি সামাজিক – অর্থনৈতিক বিপ্লবসাধনই গণপরিষদের মূল লক্ষ্য।
ভারতীয় সংবিধান বিশেষজ্ঞ গ্রেনভিল অস্টিন বলেন যে, গণপরিষদের প্রধান কাজ ছিল এমন একটি খসড়া সংবিধান রচনা করা, যা সামাজিক বিপ্লবের চূড়ান্ত লক্ষ্য পূরণ করবে।
♦ সংবিধান রচনা♦
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ ই ডিসেম্বর নতুন দিল্লির ‘ কনস্টিটিউশন হল’- এ বেলা ১১ টায় গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে। মুসলিম লিগের প্রতিনিধিরা এই অধিবেশনে যােগদান করেননি। তাদের অনুপস্থিতিতে ২০৭ জন প্রতিনিধি নিয়ে সভার কাজ শুরু হয়। ১১ ই ডিসেম্বর ড . রাজেন্দ্র প্রসাদ গণপরিষদের স্থায়ী সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ভারত স্বাধীন হয়।
স্বাধীন ভারত – রাষ্ট্রের সংবিধান রচনার জন্য ১৯৪৭ সালের ২৯ শে আগস্ট নবগঠিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার আইনমন্ত্রী ড . ভীমরাও রামজি আম্বেদকর – এর নেতৃত্বে পাঁচজন সদস্যকে নিয়ে একটি সংবিধান খসড়া প্রস্তুত কমিটি ( Drafting Committee ) গঠিত হয়। তাঁর নেতৃত্বে দীর্ঘ তিন বছরের চেষ্টায় যে সংবিধান রচিত হয় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে নভেম্বর তা পূর্ণাঙ্গ ভারতীয় সংবিধান হিসেবে গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয় এবং ২৮৪ জন সদস্য এই সংবিধানে স্বাক্ষর করেন।
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে জানুয়ারি গণ – পরিষদের শেষ অধিবেশন বসে এবং ঐ অধিবেশনেই ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে জানুয়ারি এই নতুন সংবিধান কার্যকরী হয়। এই সংবিধান অনুসারে ভারত একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে — অর্থাৎ এই দিনে ভারতে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। ২৬ শে জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস ’ ( Republic Day ) হিসেবে চিহ্নিত।
post টি বন্ধুরা ভালো লাগলে অবশ্যই share করুন এবং latest post পেতে
Pingback: ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Indian constitution – Studious