প্রবন্ধ রচনা
প্রবন্ধ রচনা :- আমাদের মাতৃভাষা হল ‘ বাংলা ‘। সুতরাং এই ভাষাতে আমরা যেমন অনর্গল কথা বলতে পারি, যেমন এই ভাষার অনেক লেখা সহজেই আমরা পড়তে পারি, তর্কবিতর্ক করতে পারি, কথার পিঠে কথা বলে এই ভাষাতে। যখন রসিকতাও করতে পারি , তখন নিশ্চয়ই কিছু লিখতেও পারি। কেননা , এটাই হল স্বাভাবিক , প্রত্যাশিত। আমরা হামেশাই চিঠি লিখি। আবেদন করি। প্রধানশিক্ষক মহাশয়ের কাছে নানা কারণে দরখাস্ত লিখি। আবার গোপনে আমাদের ভেতর কেউ কেউ কবিতাও লেখে। কারও কারও হাত থেকে এক – আধটি গল্পও পাওয়া যায়। ইস্কুল ম্যাগাজিনে তা আবার ছাপাও হয়, সুতরাং লেখালেখির বিদ্যেটা কারও অজানা নয়। তবে কেউ বেশ গুছিয়ে লিখতে পারে , কেউ পারে না। এইটুকু যা তফাত। এই তফাতটা যাতে না থাকে , সেইজন্য গোড়াতেই আমরা একটু আলোচনা করে নিতে চাই। কেননা, সবাইকে লিখতে হবে। গুছিয়ে লিখতে হবে। তাই বুঝতে হবে লেখার রহস্য। প্রবন্ধ লেখবার আগে তাই বুঝে নিতে হবে , প্রবন্ধ কীভাবে লিখতে হবে এবং তার বিষয়টাকে কেমন করে পরিবেশন করতে হবে। নতুন লেখকদের দিকে তাকিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন , ‘ প্রাঞ্জলতা রচনার বড়ো গুণ । তুমি যাহা লিখিবে , লোকে পড়িবামাত্র যেন তাহা বুঝিতে পারে। যাহা লিখিলে , লোকে যদি তাহা না বুঝিতে পারিল , তবে লেখা বৃথা। বঙ্কিমচন্দ্রের এই কথাটি শিরোধার্য। আমরা যাই লিখি না কেন , তা যেন সহজ সরল ভাষায় লিখতে পারি । বক্তব্য সহজেই যেন বোধগম্য হয় । এই প্রসঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র আরও যা বলেছেন , তা হল , ‘ যিনি সোজা কথায় আপনার মনের ভাব সহজে পাঠককে বোঝাতে পারেন , তিনিই শ্রেষ্ঠ লেখক । কেননা , লেখার উদ্দেশ্য পাঠককে বোঝানো । ছাত্রদের বেলায় পাঠক হলেন পরীক্ষক , সুতরাং তাঁকে বোঝাতে হলে কেবল লেখার সরলতা বা প্রাঞ্জলতাই যথেষ্ট নয় , লেখার ভেতরে কিছু মালমশলাও থাকা দরকার । চাই প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপকরণ । ইংরেজিতে যাকে বলে , ‘ ফ্যাক্টস্ ’ , সেই বস্তুটি প্রবন্ধ রচনার বেলায় খুব জরুরি , বিশেষত প্রবন্ধটি যদি বিজ্ঞান বিষয়ক হয় , বা ইতিহাসের কোনো বিষয়কে অবলম্বন করে লিখতে হয় । সমকালীন কোনো ঘটনাকে বিশ্লেষণ করতে হলে , কিংবা লেখক ও মনীষীদের জীবন , তাঁদের আদর্শ ইত্যাকার বিষয়ে লিখতে হলে অবশ্যই ‘ তথ্য ‘ থাকা দরকার । সুতরাং কোনো বিশেষ প্রবন্ধ লেখবার আগে প্রয়োজনীয় তথ্য আগেই সংগ্রহ করতে হয় । তবে যে প্রবন্ধগুলি ব্যক্তিগত আবেগ – অনুভূতির ওপর নির্ভরশীল , সেগুলি লেখার জন্য তথ্যের খুব একটা প্রয়োজন হয় না , প্রয়োজন হয় কল্পনাপ্রবণ মন এবং উপযুক্ত রচনাশৈলীর । শীতের সকাল ’ , ‘ বর্ষার দিন ’ কিংবা ‘ বিদ্যালয়ের স্মৃতি ’ ইত্যাদি প্রবন্ধ লিখতে হলে ব্যক্তি – অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় , সন – তারিখের পরিসংখ্যান লাগে না । অথচ , ‘ ভ্রমণকাহিনি ‘ , ‘ জাতীয় সংহতি ’ ও ‘ মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা ‘ ইত্যাদি প্রসঙ্গে তথ্যের পরিসংখ্যানকে উপেক্ষা করা যায় না । তবে এখানেও নিজের কথা বলবার অবকাশ আছে । এমনকি নিজের মন্তব্য এবং তও দেওয়া চলবে , তবে সে – মতামতের সমর্থনে বড়ো বড়ো মনীষীদের মতামত একই রকম হওয়া দরকার । এমনকি অন্যদেশের অনুরূপ অভিজ্ঞতার বিবরণ জানা থাকলে অবশ্যই তা পরিবেশিত হওয়া দরকার । এখন এই নানা ধরনের লেখার কথা আলোচিত হতে দেখে , কৌতূহল দেখা দিতে পারে , আমাদের প্রবন্ধের বিষয়কে কি কোনোভাবে নির্দিষ্ট করা যায় ? – না কি সবরকম লেখার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে ? এ জিজ্ঞাসার সোজাসুজি কোনো জবাব নেই । সবরকম লেখার জন্য ছাত্রছাত্রীদের প্রস্তুত করাই হল শিক্ষকদের উদ্দেশ্য । তবে একটু খতিয়ে দেখলে , বিষয়গুলির মোটামুটি একটা ছক ও তালিকা করা যায় । বিষয়বৈচিত্র্যে প্রবন্ধের প্রকার অবশ্যই অঙ্গুলিমেয় । এবং তা বারো – চোদ্দটার ভেতর ধরে রাখা যায় । কিন্তু সূক্ষ্মতার বিচারে এরা অনেক । যাই হোক , মোটামুটিভাবে প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় হল এইরকম : ছাত্রজীবনের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষামূলক বিষয় , প্রকৃতি বিষয়ক , বিজ্ঞান বিষয়ক , খেলাধুলার কথা , স্মৃতি ও আত্মস্মৃতিমূলক , স্বদেশ ভাবনা , মহাজীবনের কথা , সমাজ ও সংস্কৃতিমূলক , মানবিক সত্য সম্পর্কিত , বর্ণনামূলক বিষয় ও ভ্রমণকাহিনি । এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা ও বিভিন্ন সংকটের কথা এবং সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ । এ প্রসঙ্গে খেলাধুলাও অনিবার্যভাবে আসে। বিষয় বিভাগ থেকে নিশ্চয় অনুমান করা যায় , প্রবন্ধগুলি কী ধরনের হতে পারে । —প্রবন্ধ লেখার জন্য এইভাবেই তৈরি হতে হয় । আগেভাগে এইসব প্রবন্ধ লেখার জন্য মশলা সংগ্রহ করে রাখতে হবে । সংগ্রহ করে রাখতে হবে পরিসংখ্যানসহ তথ্য । নানা ধরনের প্রবন্ধ রচনার জন্য নানা ধরনের তথ্য । তবে অনেক সময় বিষয়টা একই থাকে , কিন্তু নামটা থাকে একটু ঘুরিয়ে । নামটি ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য বিষয়ের উপস্থাপনা করতে হয় ‘ নামে’র বিষয়ের সঙ্গে সাজিয়ে । নইলে তথ্যগুলি একই থাকতে পারে । যথা , আমার প্রিয় মনীষী ’ , ‘ নবযুগের আচার্য স্বামী বিবেকানন্দ ’ , ‘ আমাদের আদর্শ পুরুষ বিবেকানন্দ ‘ । —এখানে একই সংগৃহীত তথ্যে তিনটি রচনাই লেখা যেতে পারে । পার্থক্য থাকবে কেবল উপস্থাপনায় । এবারে তথ্যকে কীভাবে পরিবেশন করতে হবে , সেই আলোচনায় আসা যাক । প্রবন্ধগুলিকে সর্বদাই তিনটি ভাগে ভাগ করতে হয় , –এর প্রথমটি হল ভূমিকা । ভূমিকার পরে আলোচ্য বিষয়টি মাঝখানে রাখতে হবে । এখানে আলোচ্য বিষয়টির বিচার – বিশ্লেষণের দরকার । বিতর্কিত বিষয় হলে বিতর্কে দু’পক্ষের কথাই সমানভাবে তুলে ধরতে হবে , নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ এই প্রসঙ্গে খুবই জরুরি । তবে শেষ অংশে একটি যুক্তিগ্রাহ্য মতামত যাতে উপস্থাপিত করা যায় , তা দেখতে হবে । প্রবন্ধের সেটাই হবে উপসংহার । যে – কোনো প্রবন্ধেই এই তিনটি অংশ থাকা বাঞ্ছনীয় । প্রথমে ‘ ভূমিকা ‘ , শেষে ‘ উপসংহার এবং মাঝে আলোচনার ‘ বিষয়গত উপস্থাপন ‘ । ‘ প্রবন্ধ ‘ নামটি আমাদের আর একটি ইঙ্গিত দেয় , সে ইঙ্গিত হল এর আকার এবং সংহতি সম্পর্কে । আলোচনাকে সংহত করতে হলে অকারণ বিস্তৃতি যাতে না হয় , তা অবশ্যই দেখতে হয় । ‘ প্রকৃষ্ট ’ রূপে ‘ বন্ধন ’ না থাকলে প্রবন্ধের মর্যাদা কোনো লেখাই পায় না । তাই প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে একটি আলগা কথাও যেন তার ভেতর আমরা না ঢোকাই । কেবল আলগা কথা নয় , আলগা ও অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ও সমানভাবে পরিহার করতে হবে । ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীত যেন কখনও না হয় । ভুল বানান , ভুল তথ্য বা ভুল পরিসংখ্যান পরিবেশন যেন কোনোরকমেই প্রবন্ধে না করা হয় । আর প্রবন্ধের আকার যেন সহজে চারশো শব্দের চৌহদ্দি না পেরিয়ে যায় । —এই আকার বন্ধনটাও খুব জরুরি । না , আলোচনা বাড়িয়ে আর লাভ নেই । এবার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এক – একটি ‘ প্রবন্ধের ’ উদাহরণ দেওয়া।
Covered Topics:- মাধ্যমিক প্রবন্ধ রচনা, প্রবন্ধ রচনা, প্রবন্ধ রচনা কাকে বলে?, মাধ্যমিক প্রবন্ধ রচনা সাজেশন 2023, madhyamik prabandha Rachana suggestions 2023, প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম।