ইমালসন কাকে বলে? (What is Emulsion)
কোনো তরল বিস্তার মাধ্যমে অপর একটি অমিশ্রণীয় তরল পদার্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দুর আকারে (ব্যাস 10-5-10-4cm) বিস্তৃত থেকে যে কোলয়েডীয় দ্রবণ গঠন করে, তাকে ইমালসন বা অবদ্রব বলে।
কোলয়েড দ্রবণ (Emulsion) = বিস্তার মাধ্যম (তরল) + বিস্তৃত দশা (তরল)। উদাহরণ–দুধ কোল্ড ক্রিম, ভ্যানিশিং ক্রিম, মাখন ইত্যাদি।
ইমালসনের প্রকারভেদ
ইমালসনের প্রকারভেদ : দু-ধরনের।
জলে-তেলজাতীয় (Oil in water) ইমালসন : অতিরিক্ত পরিমাণ জলের (বিস্তার মাধ্যম ) মধ্যে অল্প পরিমাণ তেল (বিস্তৃত দশা) মিশিয়ে ঝাঁকালে জলে-তেলজাতীয় ইমালসন উৎপন্ন হয়। যেমন–দুধ (জলের মধ্যে তরল সূক্ষ্ম চর্বিকণা বিস্তৃত)।
তেলে-জলজাতীয় (Water in oil) : অতিরিক্ত পরিমাণ তেলের (বিস্তার মাধ্যম) মধ্যে অল্প পরিমাণ জল (বিস্তৃত দশা) মিশিয়ে ঝাকালে তেলে-জলজাতীয় ইমালসন উৎপন্ন হয়। যেমন–মাখন (চর্বির মধ্যে জলের সূক্ষ্ম কণা বিস্তৃত)।
অবদ্রবকারক বা ইমালসিফায়িং এজেন্ট (Emulsifier) কি?
অবদ্রবকারক বা ইমালসিফায়িং এজেন্ট (Emulsifier) : ইমালসন প্রস্তুতকারী তরল দুটি অমিশ্রণীয় হওয়ায় ইমালসন খুব অস্থায়ী হয়। বেশ কিছু সময় ধরে ইমালসন রেখে দিলে উপাদান তরল দুটি পৃথক স্তর গঠন করে। ইমালসনের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য ইমালসন তৈরির সময় উপাদান তরল দুটি ছাড়াও তৃতীয় একটি পদার্থ (রাসায়নিক / প্রাকৃতিক) যোগ করা হয়। ইমালসনের স্থায়িত্ববর্ধক এই তৃতীয় পদার্থটিকেই অবদ্রবকারক বা ইমালসিফায়িং এজেন্ট বা বলে। উদাহরণ – সাবান ও ডিটারজেন্ট জাতীয় পদার্থ, জিলেটিন, অ্যালবুমিন।
আরও পড়ুন :-
- টিন্ডাল প্রভাব কি? | টিন্ডাল প্রভাব দেখা যায় কোন দ্রবণে
- জলের ব্যতিক্রান্ত প্রসারণ কি? (Anomalous Expansion of water)
- শব্দবিজ্ঞান কি? | শব্দের বেগ কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে?
- অনুঘটক কি? | ক্যাটালিস্ট কি | অনুঘটকের বৈশিষ্ট্য
দৈনন্দিন জীবনে যে বিভিন্ন অবদ্রবকারকগুলি ব্যবহৃত হয় সেগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করা হল –
- খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে : (a) কেসিন–দুধে বর্তমান, দুধের মধ্যে ভাসমান ক্ষুদ্র ফ্যাট কণিকাগুলি জলের মধ্যে কেসিনের মাধ্যমে স্থায়ী ইমালসন গঠন করে। (b) লেসিথিন ডিমের কুসুমের ইমালসনকারক , এছাড়া চকোলেট শিল্পে ব্যবহৃত হয়। (c) DATEM (ডাই অ্যাসিটাইল টারটারিক [অ্যাসিড] এস্টার অফ মনোগ্লিসারাইড)-এই অবদ্রবকারক বিভিন্ন কেক ও পেস্ট্রির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। (d) জিলেটিন – আইসক্রিমের অবদ্রবকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- প্রসাধনী শিল্পে : বেসওয়াক্স (Basewax), কার্বোমার (Carbomer) ইত্যাদি অবদ্রবকারকগুলি বিভিন্ন ক্রিম, লোশন, প্রসাধনী জেল প্রভৃতিতে ব্যবহৃত হয়।
- সাবান ও ডিটারজেন্ট : সিলিকোন যৌগ ( Silicone ) সোডিয়াম ওলিয়েট, সোডিয়াম স্টিয়ারেট প্রভৃতি সাবান ও ডিটারজেন্টে উপস্থিত থেকে সাবান ও ডিটারজেন্টের পরিষ্কারক ক্রিয়ার ক্ষেত্রে অবদ্রবকারক রূপে কাজ করে।
- ঔষধশিল্পে : বিভিন্ন স্টেরয়েড, উচ্চ আণবিক গুরুত্বযুক্ত প্রোটিন, গাম অ্যারাবিক প্রভৃতি বিভিন্ন ঔষধ প্রস্তুতিকালে অবদ্রবকারকরূপে ব্যবহৃত হয়।
image source- sciencenotes.org
Pingback: হুকের সুত্র বিবৃতি ও ব্যাখ্যা কর | ইয়ং গুণাঙ্ক কি – Studious