Skip to content

ভঙ্গিল পর্বত কাকে বলে, বৈশিষ্ট্য ও ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির কারণ

ভঙ্গিল পর্বত কাকে বলে

হ্যালো বন্ধুরা, ভূগোলের এই পর্বে আমরা আলোচনা করবো বিভিন্ন ভূমিরূপ সম্পর্কে যেমন পর্বত, পাহাড়, মালভূমি, সমভূমি ইত্যাদি। আজ আমার শুরু করবো পর্বতের শ্রেনীবিভাগের একটি ভাগ দিয়ে, সেটি হলো “ভঙ্গিল পর্বত”। আজ আপনাদের আলোচনার মধ্যে থাকবে ” ভঙ্গিল পর্বত কাকে বলে, ভঙ্গিল পর্বতের বৈশিষ্ট্য, ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টির কারণ, হিমালয় পর্বতের সৃষ্টির কারণ” ইত্যাদি।

ভঙ্গিল পর্বত (Fold Mountain) কাকে বলে ?

ভঙ্গ বা ভাঁজ (fold) থেকে ভঙ্গিল শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। কোমল পাললিক শিলায় ভাঁজ পড়ে যে সব পর্বত গঠিত হয়েছে তাদের ভঙ্গিল পর্বত বলে। উদাহরণ— এশিয়ার হিমালয় , ইউরােপের আল্পস , উত্তর আমেরিকার রকি , দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ প্রভৃতি।

ভঙ্গিল পর্বতের বৈশিষ্ট্য

1) প্রধানত পাললিক শিলাস্তর দ্বারা এই পর্বত গঠিত হয়।

2) ভঙ্গিল পর্বতে আগ্নেয়শিলারও প্রাধান্য দেখা যায়।

3) ভাঁজের ফলে এই পর্বতে ঊধ্বর্ভাজ ও অপােভজ দেখা যায়।

4) ভঙ্গিল পর্বতে জীবাশ্ম দেখা যায়।

5) ভঙ্গিল পর্বতগুলি বহু শৃঙ্গবিশিষ্ট ও সূচাল হয়।

6) ভঙ্গিল এর বিস্তার ও উচ্চতা খুব বেশি।

7) ভঙ্গিল পর্বতগুলি সাধারণত ভূমিকম্পপ্রবণ।

ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির কারণ

ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে। এদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল— মহীখাত তত্ত্ব ও পাতভূগাঠনিক তত্ত্ব।

মহীখাত তত্ত্ব (Geosyncline Theory)

মহীখাতের অবস্থান: বর্তমানে যে স্থানে বিশালাকার ভঙ্গিল পর্বতগুলি অবস্থান করছে, সেই স্থানে পর্বত সৃষ্টির পূর্বে ছিল এক বিশাল অগভীর সমুদ্র বা মহীখাত (geosyncline) (মহীখাত হল ভূত্বকে অবস্থিত এক দীর্ঘায়িত অবনমিত অঞল)।

মহীখাতের তলদেশের অবনমন : হাজার হাজার বছর ধরে ওইসব মহীখাতে উভয়দিকের স্থলভাগের ক্ষয়প্রাপ্ত পলি সঞ্চিত হলে মহীখাতের তলদেশ ক্রমশ বসে যায়।

পার্শ্ববর্তী ভূখণ্ডের চলন : মহীখাতের তলদেশ ক্রমশ বসে গেলে পার্শ্ববর্তী ভূখণ্ড ক্রমশ মহীখাতের দিকে সরে আসতে থাকে এবং প্রবল চাপের ফলে মহীখাত ক্রমশ সরু ও গভীর হতে থাকে।

অনুভূমিক ভূ – আলােড়ন : অনেক সময় গতিশীল ভূখণ্ডের প্রবল চাপের সঙ্গে সঙ্গে ভূপৃষ্ঠে অনুভূমিকভাবে ভূ – আলােড়ন শুরু হয়। এর প্রভাবে কোথাও প্রবল চাপের ফলে সংকোচন এবং কোথাও প্রবল টানের ফলে প্রসারণের সৃষ্টি হয়। এর ফলে মহীখাতে সঞ্জিত পাললিক শিলাস্তর সঙ্কুচিত হয় ও ভাঁজ যুক্ত হয়ে উপরে উঠে পড়ে। এইভাবে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়।

পাতভূগাঠনিক তত্ত্ব (Plate Tectonic theory)

ভূবিজ্ঞানী উইলসন , ম্যাকেঞ্জি , হােমস , পিচো প্রভৃতির মতে শিলামণ্ডলের নীচের অংশ অনেকগুলি খণ্ড বা পাতে বিভক্ত। ভূ-অভ্যন্তরের উত্তাপ ও পরিচলন স্রোতের জন্য এই পাতগুলি সব সময়ই গতিশীল। ভূবিজ্ঞানীরা মনে করেন, পাতগুলির এই গতিশীলতার ফলে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি দুটি পাতের অনুভূমিক চলনের ফলে উভয়ের মধ্যে প্রবল সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। তার ফলে উভয়ের সংযােগস্থলে মহীখাত বরাবর সঞ্চিত পলিতে প্রচণ্ড চাপ পড়ে এবং সংঘর্ষরেখা বরাবর ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুন:

বায়ুচাপ বলয় বলতে কি বোঝায়? বিভিন্ন বায়ুচাপ বলয়ের ব্যাখা।

বায়ুপ্রবাহ (Wind) কি? | বায়ুপ্রবাহ কয় প্রকার ও কি কি?

জোয়ার ভাটা কি? কেন জোয়ার ভাটা হয় ?

**হিমালয় পর্বত কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে?**

বর্তমানে হিমালয় পর্বত যে স্থানে অবস্থান করছে, প্রায় দশ কোটি বছর আগে ওই স্থানে ছিল টেথিস মহীখাত। এই টেথিস খাতের উত্তরে ছিল অ্যাগারাল্যান্ড (এশীয় পাতের অংশ) ও দক্ষিণে ছিল গন্ডােয়ানাল্যান্ড (ভারত, আফ্রিকা প্রভৃতি পাতের অংশ) নামে দুটি। প্রাচীন ভূমিভাগের এই দুই প্রাচীন ভূখণ্ডের ক্ষয়জাত পলি টেথিস মহীখাতে ক্রমান্বয়ে সঞ্জয়ের ফলে টেথিসের তলদেশ ক্রমশ বসে যেতে থাকে। গন্ডােয়ানাল্যান্ড ও অ্যাঙ্গরাল্যান্ড – এর অংশ ভারতীয় পাত ও এশীয় পাত উত্তর – পূর্ব দিকে গতিশীল হওয়ায় এবং ভারতীয় পাতের গতিবেগ বেশি হওয়ায় তা এশীয় পাতের দক্ষিণে প্রবল আঘাত করে। এই আঘাতের ফলে গিরিজনি আলােড়নের প্রভাবে টেথিস মহীখাতে সঞ্চিত পলিরাশি ভাজের আকারে উপরে উঠে হিমালয় পর্বতের সৃষ্টি করেছে।

ভঙ্গিল পর্বতের শ্রেণিবিভাগ:

দীর্ঘ সময় ধরে একাধিক ভূ-আলােড়নের প্রভাবে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়। ভূ আলােড়নের প্রকৃতি ও বয়সের বিচারে ভঙ্গিল পর্বতকে দুভাগে ভাগ করা হয় প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত ও নবীন ভঙ্গিল পর্বত।

প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত: ভারতের আরাবল্লী, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপালাচিয়ান, ইউরােপের ক্যালিডােনিয়ান পর্বতশ্রেণি প্রভৃতি প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বতগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বতগুলির মধ্যে আরাবল্লী অন্যতম।

নবীন ভঙ্গিল পর্বত : ভারতের হিমালয়, ইউরােপের আল্পস, উত্তর আমেরিকার রকি, দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ প্রভৃতি অন্যতম।

Image source- www.discoveringgalapagos.org.uk