হ্যালো বন্ধুরা ভূগোলের আগের পর্বগুলিতে আমরা আলোচনা করেছি ভঙ্গিল পর্বত ও স্তূপ পর্বত সম্পর্কে। আজ আমরা আলোচনা করবো “আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত” সম্পর্কে। আজ আমরা জন্য আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত কাকে বলে? আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বতের বৈশিষ্ট্য, আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত কিভাবে সৃষ্টি হয় ইত্যাদি।
আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত কাকে বলে?(Volcanic Mountain)
ভূ-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত তরল ম্যাগমা ভূত্বকের কোনাে দুর্বল স্থান বা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে ক্রমাগত লাভারূপে নির্গত হয়ে ঠান্ডা ও কঠিন হয়ে যে পর্বত গঠন করে তাকে আগ্নেয় পর্বত বলে।
আগ্নেয় পর্বতের বৈশিষ্ট্য :
1) আগ্নেয় ভস্ম, লাভা সিন্ডার, পাইরােক্লাস্ট ধীরে ধীরে সঞ্চিত হয়ে আগ্নেয় পর্বতের সৃষ্টি হয় বলে একে সঞয়জাত পর্বতও বলে।
2) আগ্নেয় পর্বতে একটি মুখ্য এবং অসংখ্য গৌণ জ্বালামুখ থাকে।
3) পর্বতগুলি শঙ্কু আকৃতির হয়।
উদাহরণ— ভারতের ব্যারেন , জাপানের ফুজিয়ামা, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মৌনালােয়া ইত্যাদি।
আগ্নেয় পর্বতের উৎপত্তি / সৃষ্টির কারণ
(1) পাতসংস্থান তত্ত্ব : এই তত্ত্ব অনুসারে, দুটি মহাদেশীয় মহাসাগরীয় পাত মুখােমুখি অগ্রসর হলে তাদের মধ্যে প্রবল। সংঘর্ষ ঘটে এবং ভারী নিমজ্জিত পাতটি গলে গিয়ে ম্যাগমা শিলাস্তরের ফাটল পথে ভূপৃষ্ঠে চলে এসে সঞ্চিত হয়ে আগ্নেয় পর্বতের সৃষ্টি করে। উদাহরণ – জাপানের ফুজিয়ামা।
(2) ম্যাডােনাল্ডের মত: বিখ্যাত ভূবিজ্ঞানী ম্যাকডােনাল্ডের মতে, প্রবল। ভূ – আলােড়নের ফলে ভূত্বকে ফাটলের মধ্য দিয়ে ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত ম্যাগমা , কাদা, ছাই, গ্যাস, বাষ্প প্রভৃতি প্রবল বেগে বেরিয়ে। এসে ফাটলের চারপাশে সঞ্চিত হয়ে আগ্নেয় পর্বত সৃষ্টি হয়। উদাহরণ ভারতের ব্যারেন।
(3) হটস্পট ধারণা : ভূত্বকের গভীরে তেজস্ক্রিয়তাজনিত উত্তাপ বৃদ্ধির ফলে হটস্পট তৈরি হয়। এখান থেকে তাপের ঊর্ধ্বমুখী পরিচলন স্রোতের মাধ্যমে ম্যাগমার উদগিরণ ঘটে এবং তা কালক্রমে সঞ্চিত হয়ে আগ্নেয় পর্বত সৃষ্টি হয়। উদাহরণ হাওয়াই দ্বীপের মৌনালােয়া।
অর্থাৎ , দীর্ঘকাল ধরে লাভার সঞ্জয়ের ফলে আগ্নেয় পর্বত সৃষ্টি হওয়ায় একে সঞ্চয়জাত পর্বত বলে।
আগ্নেয় পর্বতের শ্রেণীবিভাগ
আগ্নেয়গিরির প্রকৃতি ও অগ্ন্যুৎপাতের সময়কালের ব্যাপ্তি অনুসারে আগ্নেয়গিরিকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল—
জীবন্ত / সক্রিয় আগ্নেয়গিরি (Active Volcano),
সুপ্ত আগ্নেয়গিরি (Dormant Volcano),
মৃত আগ্নেয়গিরি ( Extinct Volcano )
1 ) জীবন্ত / সক্রিয় আগ্নেয়গিরি (Active Volcano) :
সংজ্ঞা : পৃথিবীপৃষ্ঠের যেসব আগ্নেয়গিরিতে উৎপত্তির সময়কাল থেকে আজও পর্যন্ত অগ্ন্যুৎপাত হয়ে চলেছে, অথবা ঘন ঘন অগ্ন্যুৎপাত হয়, তাকে জীবন্ত বা সক্রিয় আগ্নেয়গিরি বলে।
এই জীবন্ত আগ্নেয়গিরি আবার দুই প্রকার, সেগুলি হল—
(i) অবিরাম আগ্নেয়গিরি (Incessant Volcano) : পৃথিবীর যেসব আগ্নেয়গিরি থেকে প্রতিনিয়ত বা অনবরত অগ্ন্যুৎপাত হতে থাকে, সেগুলিকে অবিরাম আগ্নেয়গিরি বলে। উদাহরণ : ইটালির ভিসুভিয়াস ।
(ii) সবিরাম আগ্নেয়গিরি (Intermittent Volcano) : যেসব জীবন্ত আগ্নেয়গিরি থেকে কিছুদিনের ব্যবধানে বা কয়েক বছর পরে পরে আগ্নেয় পদার্থ নির্গত হয় , সেগুলিকে সবিরাম আগ্নেয়গিরি বলে । উদাহরণ : ইটালির স্ট্রম্বােলি , হাওয়াই দ্বীপের মৌনালােয়া, ভারতের ব্যারেন , নারকোন্ডাম প্রভৃতি ।
2 ) সুপ্ত আগ্নেয়গিরি (Dormant Volcano) :
সংজ্ঞা : পৃথিবীপৃষ্ঠের যেসব আগ্নেয়গিরি অতীতে জীবন্ত ছিল , বর্তমানে অগ্ন্যুৎপাত আপাতত বন্ধ আছে , কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে যে – কোনাে সময় অগ্ন্যুৎপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাকে সুপ্ত বা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি বলে।
উদাহরণ : জাপানের ফুজিয়ামা বা মাউন্ট ফুজি , ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাতােয়া।
3) মৃত আগ্নেয়গিরি (Extinct Volcano):
সংজ্ঞা: যে সব আগ্নেয়গিরি থেকে ভবিষ্যতে অগ্ন্যুৎপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাদের মৃত আগ্নেয়গিরি বলে, যেমন — মায়ানমার – এর পােপাে , মেক্সিকোর কোটোপাক্সি প্রভৃতি।
***প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা কী?**
মেখলা শব্দের অর্থ কোমর বন্ধন। পৃথিবীর অধিকাংশ আগ্নেয়গিরি যখন কোনাে কোমর বন্ধনী বা বলয়ের মতাে অবস্থান করে তখন তাকে বলা হয় “ আগ্নেয় মেখলা”। পৃথিবীর অধিকাংশ আগ্নেয়গিরি ( প্রায় 80 % ) প্রশান্ত মহাসাগরকে বেষ্টন করে মালার আকারে দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণে হর্ন অন্তরীপ থেকে শুরু করে আন্দিজ ও রকি পর্বতমালা হয়ে আলাস্কার মধ্য দিয়ে কামচাটকা , শাখালিন , জাপান , ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ হয়ে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে বলয় বা মেখলার মতাে আগ্নেয়গিরিগুলির অবস্থানকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা বলে।