আজ আমরা এই পর্বে আলোচনা করবো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় “পৃষ্ঠটান ও সান্দ্রতা”। সুতরাং শুরু করা যাক আজকের বিষয়।
পৃষ্ঠটান কাকে বলে?
তরলের মুক্ত পৃষ্ঠ যে ধর্মের কারণে টানটান পর্দার মতো আচরণ করে সেই ধর্মকে বলে পৃষ্ঠটান।
পৃষ্ঠটান = প্রযুক্ত বল(F)/দৈর্ঘ্য(l)
পৃষ্ঠটানের একক = c.g.s একক dyne/cm এবং s.i একক Newtow/m
প্রতি একক ক্ষেত্রফলের পৃষ্ঠশক্তি সংখ্যাগতভাবে তরলের পৃষ্ঠটানের সমান।
পৃষ্ঠটানের মাত্রা = MLT-2
তরলের পৃষ্ঠটান কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল?
1) তরলের পৃষ্ঠটান উষ্ণতা বৃদ্ধিতে কমে যায়।
2) পরমশূন্য ছাড়া যে কোন উষ্ণতায় মোট পৃষ্ঠশক্তি সর্বদা পৃষ্ঠটান এর থেকে বেশি হয় যে কোন ধরনের স্বাভাবিক প্রবণতা হলো তার পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল কমানো তাই জল বৃষ্টির ফোটা গোলাকার হয়
3) তরল উপরের পৃষ্ঠ কোন অপদ্রব্য দ্বারা দূষিত হলে পৃষ্ঠটান কমে যায় তাই জলের উপর তেলজাতীয় পদার্থ ফেললে জলের পৃষ্ঠটান কমে।
4) অজৈব পদার্থ থাকলে পৃষ্ঠটান বাড়ে এবং জৈব পদার্থ দ্রবীভূত থাকলে পৃষ্ঠটান কমে।
5) জলের ওপর জলের ভূপৃষ্ঠের উপর বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বাড়লে পৃষ্ঠটান কমে
পৃষ্ঠটান সম্পর্কিত কয়েকটি ঘটনা
জলে একখণ্ড কর্পূর ফেললে তাকে ইতস্তত নড়াচড়া করতে দেখা যায়। কর্পূর জলে দ্রবণীয়। জলের সংস্পর্শে এলে কর্পূরের খন্ডের কোন কোন জায়গা অপর জায়গায় চেয়ে বেশি দ্রবীভূত হয় যে জায়গায় কর্পূর বেশি দ্রবীভূত হয়। সেখানকার জল কর্পূর দ্বারা বেশি দূষিত হওয়ায় সেখানকার পৃষ্ঠটান অন্য জায়গায় বেশি কমে যায়। পৃষ্ঠটানের পার্থক্য জন্য একটি অসম বল কর্পূরের উপর ক্রিয়া করে। তাই কর্পূরের খণ্ডটি এলোমেলোভাবে ইতস্তত নাড়াচাড়া করে।
উত্তাল সমুদ্রের উপর তেল ছড়িয়ে দিলে বড় বড় ঢেউ থেমে যায়, বিশুদ্ধ জলের পৃষ্ঠটান তৈলাক্ত জলের পৃষ্ঠটান অপেক্ষা অনেক বেশি। সমুদ্রে তেল ছড়িয়ে দিলে ঢেউয়ের সঙ্গে হাওয়ায় গতির অভিমুখে তেল ছড়িয়ে পড়ে। পিছনে বিশুদ্ধ জল থেকে যায়। তাই ঢেউয়ের সামনের দিকে জলের পৃষ্ঠটান পিছনে জলের পৃষ্ঠটান অপেক্ষা কম হয়। পিছনে উচ্চ পৃষ্ঠটান যুক্ত জল সামনে নিন্ম পৃষ্ঠটান যুক্ত জলের উচ্চতা কমে যায়।
[আরও পড়ুন : স্থিতি ও গতি ( Rest and Motion ) কি?]
সান্দ্রতা কাকে বলে?
প্রবাহী যে ধর্মের জন্য, দুটি সন্নিহিত প্রবাহী স্তরের মধ্যে ক্রিয়াশীল আপেক্ষিক বেগের জন্য একটি স্তর অপর স্তরকে প্রবাহিত হতে বাধা দেয়। তাকেই সন্দ্রতা বলা হয়। তরলের উষ্ণতা উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে তরলের সান্দ্রতা কমে যায়। এটি সান্দ্রতাঙ্ক দ্বারা নির্ণীত হয়।
সান্দ্রতাঙ্কের মাত্রা = ML-1T-1
সান্দ্রতাঙ্কের একক = cgs একক ডাইন.সেকেন্ড.সেমি-2 বা পয়েজ। si একক নিউটন.সেকেন্ড.মিটার-2 বা ডেকাপয়েজ
তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের প্রবাহ দু’রকমের-
1) ধারারেখ প্রবাহ ও 2) বিক্ষুব্ধ প্রবাহ।
ধারারেখ প্রবাহ কি ? =
1) এর ক্ষেত্রে প্রবাহী কতকগুলি স্তরে প্রবাহিত হয়। এবং কণা গুলির মধ্যে সংঘর্ষ হয় না।
2) প্রবাহ পথের প্রত্যেক বিন্দুতে প্রবাহের বেগের মান ও অভিমুখ অপরিবর্তিত থাকে।
3) প্রত্যেকটি তার পূর্ববর্তী একই পথে চলে। যে পথে চলে তাকে ধারা রেখা বলে।
4) দুটি ধারা রেখা কখনো পরস্পরকে ছেদ করে না।
5) ধারা রেখাগুলি ঘন সন্নিবিষ্ট হলে প্রবাহীর বেগ বাড়ে।
6) ধারা রেখার যে কোন বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শক প্রবাহীর ওই বিন্দুতে প্রবাহী গতীর দিক নির্দেশ করে।
বিক্ষুব্ধ প্রবাহের ক্ষেত্রে প্রবাহ স্থগিত নয়। কোন একটি বিন্দু কনার বেগের মান ও অভিমুখ পরিবর্তিত হয়।
সন্ধিবেগ ও রেনল্ডস সংখ্যা কী?
সন্ধি বেগ= প্রবাহের বেগ একটি নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে না যাওয়া পর্যন্ত প্রবাহ ধারারেখ থাকে। ওই সীমা অতিক্রম হলে প্রবাহ অশান্ত হয়ে পড়ে ওই সর্বোচ্চ সীমা কে সন্ধিবেগ বলা হয়।
পৃষ্ঠটান ও সান্দ্রতা সম্পর্কিত স্টোকসের সূত্র
সান্দ্র মাধ্যমের মধ্য দিয়ে পতনশীল বস্তুর উপর কার্যকর বল শূন্য বস্তু স্থির ভেঙে পড়তে থাকে থাকে। এই স্থির বেগ হল সীমান্ত বেগ বা প্রান্তীয় বেগ।
অসীম বিস্তৃত সান্দ্র মাধ্যমে গোলাক পতনশীল হলে স্টোকসের সূত্র প্রযোজ্য।
সূত্রানুসারে প্রান্তীয় বেগ,
1) গোলকের ব্যাসার্ধের বর্গের সমানুপাতিক।
2) গোলক মাধ্যমের মাধ্যমের ঘনত্বের পার্থক্যের সমানুপাতিক।
3) মাধ্যমের সান্দ্রতাঙ্কের ব্যস্তানুপাতিক।
বার্নৌলির উপপাদ্য
বার্নৌলির উপপাদ্য অনুসারে, প্রবাহীর প্রবাহ ধারারেখ হলে প্রবাহীর যে কোন বিন্দুতে প্রবাহের একক আয়তনের তরলের স্থিতিশক্তি, গতিশক্তি ও চাপশক্তি যোগফল সর্বদা ধ্রুবক হয়।
বার্নৌলির উপপাদ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হল, কোন প্রবাহীর বেগ বৃদ্ধি পেলে চাপ হ্রাস পায়।
এই জন্যই-
1) রাস্তায় বোমা ফাটলে জানালার কাচের ভাঙা টুকরো রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। ঘরের ভিতরে আসে না।
2) দ্রুতগামী যান বিশেষ করে রেলগাড়ির লাইনের কাছে দাঁড়ালে রেলগাড়ি তলায় ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
3) স্প্রেয়ার বা অটোমাইজার দিয়ে ওষুধ স্প্রে করা হয়।
4) ঘূর্ণিঝড়ে কাগজ পাতা ইত্যাদি ঘূর্ণির ভেতরে ঢুকে যায় ঘুরতে ঘুরতে উপরে উঠে যায়।
দারুন
Pingback: ওহমের সূত্র ও ওহমের সূত্রের গাণিতিক রূপ | Definition of Ohm's Law in bengali – Studious