কোনো যৌগের অণুতে সমযোজী বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ থাকা অবস্থায় কোনো মৌলের একটি পরমাণুর বন্ধন সৃষ্টিকারী ইলেকট্র -জোড়কে নিজের দিকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা বা প্রবণতাকে ওই মৌলের তড়িৎ ঋণাত্মকতা বলে।
তড়িৎ ঋণাত্মকতার কোনো একক নেই। এর মান মুলিকেন স্কেল, পাউলিং স্কেল ইত্যাদি দ্বারা পরিমাপ করা হয়।
তড়িৎ-ঋণাত্মকতা মৌলের নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ওপর নির্ভর করে –
1) পরমাণুর আকার : পরমাণুর আকার যত ছোটো হবে, তড়িৎ ঋণাত্মকতা তত বেশি হবে, কারণ পরমাণুর আকার ছোটো হলে পরমাণুর নিউক্লিয়াস ও সর্ববহিস্থ কক্ষের মধ্যে দূরত্ব কম হয়। ফলে, নিউক্লিয়াসের সর্ববহিস্থ কক্ষের ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করার প্রবণতা বাড়ে এবং তড়িৎ ঋণাত্মকতা বাড়ে।
2) নিউক্লিয়াসের আধান : পরমাণু মধ্যস্থ কক্ষ সংখ্যা একই থাকলে নিউক্লিয়াসের আধান যত বাড়বে পরমাণুর তড়িৎ – ঋণাত্মকতা তত বৃদ্ধি পাবে। কারণ — নিউক্লিয়াসের আধান বেশি হলে ইলেকট্রনগুলি বেশি মাত্রায় আকর্ষিত হয়।
আয়নের প্রকার : প্রশম পরমাণু অপেক্ষা পরমাণুর ক্যাটায়নের তড়িৎ-ঋণাত্মকতা বেশি। আবার , প্রশম পরমাণুর তুলনায় পরমাণুর অ্যানায়নের তড়িৎ ঋণাত্মকতা কম হয়।
আরও পড়ুন:
- ডোবেরাইনার ত্রয়ী সূত্র | ডোবেরাইনার ত্রয়ী সূত্র টি লেখ ও ব্যাখ্যা কর
- আয়োনাইজেশন শক্তি কাকে বলে?
- ক্যালোরিমিতির মূলনীতি (Principles of Calorimetry) | ক্যালোরিমিটার কি?
মৌলের তড়িৎ ঋণাত্মকতা ধর্মের পরিবর্তন
1) পর্যায় বরাবর তড়িৎ – ঋণাত্মকতার পরিবর্তন
পর্যায় সারণিতে পর্যায় বরাবর যত বামদিক থেকে ডানদিকে যাওয়া যায় তত পরমাণুর তড়িৎ-ঋণাত্মকতার মান ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। কারণ – পর্যায় বরাবর বামদিক থেকে ডানদিকে গেলে পরমাণু – ক্রমাঙ্ক তথা নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক আধান বৃদ্ধি পায় এবং পরমাণুর আকার ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। ফলে, সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ ইলেকট্রন-জোড়ের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। তাই পরমাণুর তড়িৎ – ঋণাত্মকতার মান ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। যেমন দ্বিতীয় পর্যায় বরাবর মৌলগুলির তড়িৎ – ঋণাত্মকতা বৃদ্ধির ক্রম Li< Be < B < C < N < O < F
2) শ্রেণি বরাবর তড়িৎ-ঋণাত্মকতার পরিবর্তন
পর্যায় সারণিতে শ্রেণি বরাবর উপর থেকে নীচে নামলে পরমাণুর তড়িৎ-ঋণাত্মকতা ক্রমশ হ্রাস পায়, কারণ শ্রেণি বরাবর উপর থেকে নীচে গেলে পরমাণু-ক্রমাঙ্ক বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক আধান বৃদ্ধি পেলেও নতুন মুখ্য শক্তিস্তরের সংযোজন হয় এবং পরমাণুর আকার ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। ফলে, সমযোজী বন্ধনের ইলেকট্রন-জোড় থেকে নিউক্লিয়াসের দূরত্ব বৃদ্ধি পায় এবং ইলেকট্রন-জোড়কে আকর্ষণ করার ক্ষমতাও হ্রাস পায়। তাই তড়িৎ – ঋণাত্মকতা ক্রমশ হ্রাস পায়।
যেমন – IA বা 1 নং শ্রেণির মৌলগুলির তড়িৎ – ঋণাত্মকতা হ্রাসের ক্রম Li > Na > K > Rb > Cs
***ফ্লুওরিন ( F ) – এর তড়িৎ-ঋণাত্মকতার মান সর্বাধিক এবং সিজিয়াম ( Cs )-এর তড়িৎ-ঋণাত্মকতার মান সর্বনিম্ন।