আমাদের পরবর্তী পোস্ট গুলিতে সম্পুর্ণ রূপে পর্যায় সারণী অধ্যায় টি আলোচনা করবো। আজ আমরা এই পোস্টটিতে আলোচনা করছি পর্যায় সারণী অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ডোবেরাইনার ত্রয়ী সূত্র (Dobereiner’s law of triads), ডোবেরিনারের ত্রয়ী সূত্রের ব্যর্থতা কোথায়?, সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি।
বিভিন্ন মৌল আবিষ্কার হওয়ার পর বিজ্ঞানীরা লক্ষ করলেন যে, অনেক মৌলের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের মধ্যে মিল আছে । তখন মৌলগুলির রাসায়নিক ধর্মের সাদৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে মৌলগুলিকে শ্রেণিবদ্ধ করার চেষ্টা করা হয় ।1817 খ্রিস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী জন ডোবেরিনার (J.W. Dobereiner) তাঁর ত্রয়ী সূত্রের মাধ্যমে মৌলগুলিকে শ্রেণিবদ্ধ করার চেষ্টা করেন।
ডোবেরাইনার ত্রয়ী সূত্র (Dobereiner’s law of triads):
রাসায়নিক ধর্মের মধ্যে সাদৃশ্য আছে এমন তিনটি মৌলকে পারমাণবিক ভরের ক্রম অনুযায়ী সাজালে মাঝেরটির পারমাণবিক গুরুত্ব অন্য দুটির পারমাণবিক গুরুত্বের গড় হয়।
যেমন –লিথিয়াম (Li) , সোডিয়াম ( Na) , পটাশিয়াম ( K ) একই শ্রেণিভুক্ত দেখা মৌল এবং পরপর অবস্থিত । যায় , সোডিয়ামের পারমাণবিক গুরুত্ব লিথিয়াম ও পটাশিয়ামের পারমাণবিক গুরত্বের গড়।
Li-এর পারমাণবিক গুরুত্ব 7, K- এর পারমাণবিক গুরুত্ব 39।এদের গড় =(7+39)/2=23, যা Na- এর পারমাণবিক গুরুত্ব। এই সূত্রের ভিত্তিতে ডোবেরিনার কর্তৃক গঠিত অন্যান্য সমধর্মী ত্রয়ীগুলি নীচে সারণিবদ্ধ করা হল –
ডোবেরাইনার তয়ী সূত্রের সীমাবদ্ধতাগুলি হল (Limitation of Dobereiner’s triad law)
সমকালীন আবিষ্কৃত মৌলগুলির মধ্যে থেকে কেবল চারটি ত্রয়ী গঠন করেন বিজ্ঞানী ডোবেরিনার। বাকি মৌলগুলির ক্ষেত্রে এই সূত্রটি প্রযোজ্য নয়। ও একই শ্রেণিতে অবস্থিত অর্থাৎ, সমধর্মী সকল মৌলের ক্ষেত্রে এই সূত্র প্রযোজ্য হয় না। যেমন N (14) , P (31) ও As (74.9) – এর ক্ষেত্রে এই সূত্র প্রযোজ্য নয়।
মৌল ও তাদের যৌগের ধর্মাবলি, মৌলের পারমাণবিক গুরুত্বের বৃদ্ধির ক্রমানুসারে পর্যাবৃত্ত হয় ” – এই সুবিখ্যাত পর্যায় – সূত্র 1869 খ্রিস্টাব্দে বিবৃত করেন রুশ বিজ্ঞানী মেন্ডেলিফ। মৌল সমূহকে পর্যায় সারণিতে শ্রেণিবদ্ধ করাই এই পর্যায় – সূত্রের মূল অবদান। প্রায় একই সময়ে জার্মান বিজ্ঞানী লোথার মেয়ার এরূপ এক পর্যায়- সূত্রের বিবরণ প্রকাশ করেন। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত আগেই মেন্ডেলিফের পর্যায় – সূত্রটি প্রকাশিত হওয়ায় তাঁর এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। লোথার মেয়ার মৌলের পারমাণবিক গুরুত্বের সঙ্গে তাদের ভৌতধর্মের (পারমাণবিক আয়তন, গলনাঙ্ক ইত্যাদি) পর্যায়বৃত্তির কথা বলেন। অন্যদিকে, মেন্ডেলিফ মৌলের পারমাণবিক গুরুত্বের সঙ্গে তাদের রাসায়নিক ধর্মের পর্যাবৃত্তি প্রদর্শনে সক্ষম হন। কার্যত উভয়েই মৌলের পারমাণবিক গুরুত্বকে তাদের শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তিরূপে ব্যবহার করেছিলেন বিজ্ঞানী লোথার মেয়ার।
আরও পড়ুন:
- অনুঘটক কি? | ক্যাটালিস্ট কি | অনুঘটকের বৈশিষ্ট্য
- রাদারফোর্ডের পরীক্ষা | রাদারফোর্ডের আলফা কণার বিচ্ছুরণ পরীক্ষা
- আয়ন কাকে বলে? আয়ন কত প্রকার ও কি কি | আয়োনাইজেশন শক্তি
- নিউক্লিয় বল (Nuclear Force) কাকে বলে? | বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি
Covered Topics: ডোবেরিনারের ত্রয়ী সূত্র | ডোবেরিনারের ত্রয়ী সূত্র টি লেখ ও ব্যাখ্যা কর, ত্রয়ী সূত্র কি, পর্যায় সারণীর ত্রয়ী সূত্র কি, ত্রয়ী সূত্রের সীমাবদ্ধতা, ত্রয়ী সূত্র কে আবিষ্কার করেন, ডোবেরাইনার ত্রয়ী সূত্র উদাহরণ, ডোবেরাইনার ত্রয়ী সূত্র কত সালে প্রকাশিত হয়
Pingback: তড়িৎ ঋণাত্মকতা (Electronegativity) কাকে বলে | তড়িৎ ঋণাত্মকতা কি – Studious
Pingback: মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণি (Mendeleev's periodic table) | মেন্ডেলিফের পর্যায় সূত্রটি লেখ | মেন্ডেলিফের পর্যায়
Pingback: জারণ ক্ষমতা ও বিজারণ ক্ষমতা কি? | পর্যায় শ্রেণি জারণ বিজারণ ধর্ম কিভাবে পরিবর্তিত হয়? – Studious