প্রকৃত দ্রবণ কাকে বলে?
প্রকৃত দ্রবণ ( True Solution ) : কোনো দ্রাবকে মিশ্রিত দ্রাব কণার ব্যাস 10^-8 সেমি বা তার কম হলে সেটি দ্রাবকের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে গিয়ে যে সমসত্ত্ব মিশ্রণ উৎপন্ন করে , তাকে প্রকৃত দ্রবণ বলে। যেমন জলের মধ্যে চিনি বা সাধারণ লবণ দ্রবীভূত হয়ে প্রকৃত দ্রবণ গঠন করে।
প্রকৃত দ্রবণের বৈশিষ্ট্যগুলি
প্রকৃত দ্রবণের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ :
- সমসত্ত্বতা : প্রকৃত দ্রবণ হল দ্রাব ও দ্রাবকের স্বচ্ছ ও সমসত্ত্ব মিশ্রণ অর্থাৎ, দ্রবণের যে-কোনো অংশের গঠন, উপাদান ও ধর্ম একই রকম হয়।
- দ্রাব কণার আকার : প্রকৃত দ্রবণে দ্রাবের কণাগুলি এতই ক্ষুদ্র হয় ( ব্যাস ≤10-8 cm ) যে, তাদের খালি চোখে তো নয়ই এমনকি উচ্চ শক্তিসম্পন্ন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেও এদের দেখতে পাওয়া যায় না।
- কণাগুলির ভেদ্যতা : দ্রবণে দ্রাবের কণাগুলি ফিলটার পেপার ও পার্চমেন্ট পেপারের মধ্যে দিয়ে সহজেই চলাচল করতে পারে।
কোলয়েডীয় দ্রবণ (Colloidal Solution)কাকে বলে ?
কোলয়েডীয় দ্রবণ (Colloidal Solution): 10^-5 সেমি থেকে 10-7 সেমি ব্যাসযুক্ত কোনো অদ্রাব্য কণা যখন কোনো দ্রাবকের মধ্যে ইতস্তত ভেসে বেড়ায়, কিন্তু দ্রবীভূত হয় না, তখন সেই অসমসত্ত্ব এবং দ্বি-দশাবিশিষ্ট মিশ্রণকে কোলয়েডীয় দ্রবণ বলে। উদাহরণ – দুধ , সাবানের ফেনা , রক্ত ইত্যাদি কোলয়েডীয় দ্রবণ।
জেনে রাখো : বিজ্ঞানী টমাস গ্রাহাম Colloid নামকরণ করেছিলেন । গ্রিক শব্দ Kolla = আঠা , iodos = সদৃশ ।
কোলয়েডীয় দ্রবনের বিভিন্ন দশা
কালায়ডীয় দ্রবণের দশা : কোলয়েডীয় দ্রবণের দুটি দশা বর্তমান বিস্তৃত দশা ও বিস্তার মাধ্যম৷
- বিস্তৃত দশা ( Dispersed Phase ) : কোলয়েডীয় দ্রবণে 10-5 সেমি থেকে 10-7 সেমি ব্যাসবিশিষ্ট যে পদার্থগুলি প্রলম্বিত অবস্থায় থাকে , তাদের বিস্তৃত দশা বলে।
- বিস্তার মাধ্যম ( Dispersion medium ): কোলয়েডীয় দ্রবর্ণে যে মাধ্যমে কোলয়েড কণাগুলি প্রলম্বিত অবস্থায় থাকে , তাকে বিস্তার মাধ্যম বলে। যেমন জলের মধ্যে ফ্যাটজাতীয় কণাগুলি অসমসত্ত্বভাবে মিশে দুধ তৈরি করে। এখানে ফ্যাটজাতীয় কণাগুলি হল বিস্তৃত দশা এবং জল হল বিস্তার মাধ্যম।
কোলয়েডীয় দ্রবনের বৈশিষ্ট্য
- অসমসত্ত্ব মিশ্রণ: বিস্তার মাধ্যম ও বিস্তৃত দশা পরস্পরের সঙ্গে দ্বি – দশাবিশিষ্ট অসমসত্ত্ব মিশ্রণ উৎপন্ন করে।
- দ্রাব কণার আকার : কোলয়েডীয় দ্রবণে দ্রাব কণাগুলির ব্যাস 10-5 সেমি থেকে 10-7 সেমি – এর মধ্যে হয়। দ্রাবের কণাগুলি খালি চোখে এবং সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা না গেলেও পরাঅণুবীক্ষণ যন্ত্রে দৃশ্যমান । দ্রবণে দ্রাবের কণাগুলি সাধারণ ফিলটার কাগজের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে কিন্তু পার্চমেন্ট কাগজের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে না।
- দ্রবণের স্থায়িত্ব : কোলয়েডীয় দ্রবণ স্থায়ী প্রকৃতির হয়। তবে বিশেষ কিছু শর্তের উপস্থিতিতে (তাপ দিলে , তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ যোগ করলে) কোলয়েডীয় দ্রবণে দ্রাবের কণাগুলি থিতিয়ে পড়ে।
- ব্রাউনীয় গতি : কোলয়েড কণাগুলি বিস্তার মাধ্যমে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে অবিরাম ছুটে বেড়ায়। ফলে , কোলয়েড কণাগুলি ব্রাউনীয় গতি প্রদর্শন করে।
- টিল্ডাল প্রভাব : কোলয়েডীয় দ্রবণের মধ্যে দিয়ে আলোকরশ্মি পাঠালে কোলয়েড কণাগুলি আলোকরশ্মির বিচ্ছুরণ ঘটায়। ফলে, আলোর গতিপথ দৃশ্যমান হয়। তাই কোলয়েড কণাগুলির টিন্ডাল প্রভাব দেখা যায়।
- অধিশোষণ ক্ষমতা : কোলয়েড কণাগুলির অধিশোষণ ক্ষমতা আছে। কোনো কোনো কোলয়েড কণা পরা – তড়িদ্ধর্মী আয়ন অধিশোষণ করে পরা – তড়িদাহিত হয়। অপরপক্ষে কোনো কোনো কোলয়েড কণা অপরা – তড়িদ্ধর্মী আয়ন অধিশোষণ করে অপরা – তড়িদাহিত হয়।
- তড়িৎচলন : কোলয়েড দ্রবণের মধ্যে দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে আধানগ্রস্ত কোলয়েড কণাগুলি বিপরীত আধানযুক্ত তড়িদ্দ্বারের দিকে ছুটে যায়। কোলয়েড কণার এরূপ চলনকে তড়িৎচলন বলে।
- ব্যাপন ধর্ম : কোলয়েডীয় দ্রবণের কণাগুলির ব্যাপন খুব ধীর গতিতে ঘটে।
- অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন কাকে বলে ও শর্ত | মরুভূমির মরীচিকা
-
তরলের চাপ (Pressure of liquid) কাকে বলে? কোনো বিন্দুতে তরলের চাপ কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে
প্রলম্বন কী ? /what is Suspension
প্রলম্বন (Suspension): একটি পদার্থ (সাধারণত কঠিন) অপর একটি পদার্থের মধ্যে (সাধারণত তরল) 10-5 সেমি -এর অধিক ব্যাসবিশিষ্ট কণারূপে বিভাজিত হয়ে বিস্তৃত থাকলে যে অসমসত্ত্ব এবং অস্থায়ী মিশ্রণ তৈরি করে, তাকে প্রলম্বন বলে। বর্ষাকালে খাল – বিলের জল।
প্রলম্বনের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ :
- দ্রবণের প্রকৃতি : প্রলম্বন অস্বচ্ছ ও অসমসত্ত্ব প্রকৃতির হয়।
- দ্রাব কণার আকার : প্রলম্বনের কণাগুলির ব্যাস > 10-5 হয়। কণাগুলি অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে , আবার কখনো খালি চোখেও দৃশ্যমান হয়।
- কণাগুলির ভেদ্যতা : প্রলম্বনের কণাগুলির আকার বড়ো হওয়ায় কণাগুলি সাধারণ ফিলটার কাগজ কিংবা পার্চমেন্ট কাগজের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে না।
Pingback: টিন্ডাল প্রভাব কি? | টিন্ডাল প্রভাব দেখা যায় কোন দ্রবণে – Studious
Pingback: কেলাস বা ক্রিস্টাল কাকে বলে | কেলাস কি | কেলাস কিভাবে গঠিত হয় – Studious