প্রিয় পাঠকগণ, আইসোটোপ কি বা আইসোটোপ কাকে বলে আমরা হয়তো সবাই কম বেশি জানি। আজ আমরা এই পোস্ট এ আইসোটোপ সম্পর্কে আরও একটু গভীরে জানব। আমরা আজ জানব আইসোটোপ কাকে বলে?, আইসোটোপের বৈশিষ্ট্য, আইসোটোপের ব্যবহার কি, হাইড্রোজেনের আইসোটোপ গুলির বর্ণনা আরও জানব আইসোবার কাকে বলে?, আইসোটোন কি ইত্যাদি।
আইসোটোপ বলতে কি বোঝায়? (What is Isotope)
একই মৌলের বিভিন্ন পরমাণুর পরমাণু-ক্রমাঙ্ক একই কিন্তু নিউক্লিয়াসে ভিন্ন সংখ্যক নিউট্রন থাকার জন্য ভরসংখ্যা আলাদা হলে, তাদের পরস্পরকে আইসোটোপ (Isotope) বা সমস্থানিক বলে। যেমন ক্লোরিনের দুটি আইসোটোপ হল 17Cl35 এবং 17CI37। এই দুটি পরমাণুর পরমাণু-ক্রমাঙ্ক সমান অর্থাৎ , 17 কিন্তু ভরসংখ্যা আলাদা। প্রথম পরমাণুটিতে নিউট্রন সংখ্যা (35–17)=18 টি এবং দ্বিতীয় পরমাণুতে নিউট্রন সংখ্যা (37–17) = 20 টি , তাই এরা পরস্পর আইসোটোপ।
হাইড্রোজেনের আইসোটোপ গুলির বর্ণনা দাও
হাইড্রোজেনের তিনটি আইসোটোপ –
(i) প্রোটিয়াম
(ii) ডয়টেরিয়াম এবং
(ii) ট্রিটিয়াম ।
প্রোটিয়াম (1H1)= সাধারণ হাইড্রোজেন বা প্রোটিয়ামের নিউক্লিয়াসে 1 টি প্রোটন আছে কিন্তু কোনো নিউট্রন নেই। বাইরের কক্ষে 1 টি ইলেকট্রন থাকে।
ডয়টেরিয়াম (1H2) : D₂O ভারী হাইড্রোজেন বা ডয়টেরিয়ামের নিউক্লিয়াসে 1 টি প্রোটন ও 1 টি নিউট্রন আছে। বাইরের কক্ষে 1 টি ইলেকট্রন আছে।
ট্রিটিয়াম (1H3) : ট্রিটিয়ামের নিউক্লিয়াসে 1 টি প্রোটন ও 2 টি নিউট্রন আছে। বাইরের কক্ষে 1 টি ইলেকট্রন আবর্তন করে।
জেনে রাখো: গ্রিক ভাষায় ‘iso’ শব্দের অর্থ হল সমান এবং ‘topos’ শব্দের অর্থ হল অবস্থান। আইসোটোপগুলি পর্যায় সারণিতে একই ঘরে অবস্থান করে বলে এদের সমস্থানিক বলা হয়।
- অনুঘটক কি? | ক্যাটালিস্ট কি | অনুঘটকের বৈশিষ্ট্য
অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন কাকে বলে ও শর্ত | মরুভূমির মরীচিকা
- রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল বর্ণনা করো | রাদারফোর্ডের মডেল
- ক্যালোরিমিতির মূলনীতি (Principles of Calorimetry) | ক্যালোরিমিটার কি?
আইসোটোপের বৈশিষ্ট্য
- আইসোটোপগুলির পারমাণবিক সংখ্যা (অর্থাৎ প্রোটন সংখ্যা) সমান কিন্তু ভরসংখ্যা আলাদা। ও আইসোটোপগুলির রাসায়নিক ধর্ম, যোজ্যতা, ইলেকট্রন – বিন্যাস অভিন্ন।
- আইসোটোপগুলির ভর, ঘনত্ব, গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক প্রভৃতি ভৌত ধর্মগুলি পৃথক হয়।
- একই মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপগুলি পর্যায় সারণিতে একই অবস্থানে থাকে। তাই এদের সমস্থানিক বলে।
আইসোটোপের ব্যবহার (Uses of Isotope):
- চিকিৎসাবিজ্ঞানে ক্যানসার ও টিউমারের চিকিৎসায় তেজস্ক্রিয় আয়োডিন আইসোটোপ (I31 ) ব্যবহার করা হয়। ও কৃষিক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও রোগ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
- তেজস্ক্রিয় কার্বন ( C14 ) আইসোটোপের সাহায্যে পুরাতন শিলা, গাছ এবং পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করা যায়।
- বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতিপ্রকৃতি নির্ণয়ের জন্য তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ (C13 , N15 , O18 , S35 ইত্যাদি) ব্যবহার করা হয়।
- কোবাল্টের আইসোটোপ (Co) ক্যানসার কোশ ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ঘটিত কোশ ধ্বংস করতে ব্যবহার করা হয়।
আইসোবার কাকে বলে?
আইসোবার (Isobar) : যেসব মৌলের ভরসংখ্যা সমান কিন্তু পরমাণু-ক্রমাঙ্ক আলাদা, তাদের পরস্পরকে আইসোবার বলে। এদের প্রোটন তথা ইলেকট্রন সংখ্যা আলাদা হবার কারণে রাসায়নিক ধর্ম আলাদা হয়।
যেমন 18Ar40, 19K40 , 20Ca40 এরা পরস্পর পরস্পরের আইসোবার। কারণ এদের প্রত্যেকের ভরসংখ্যা সমান অর্থাৎ 40 , কিন্তু পরমাণু – ক্রমাঙ্ক যথাক্রমে 18,19, 20
আইসোটোন কাকে বলে?
আইসোটোন (Isotone) : যেসব মৌলের নিউক্লিয়াসে নিউট্রন সংখ্যা একই কিন্তু প্রোটন সংখ্যা আলাদা, তাদের পরস্পরকে একে অপরের আইসোটোন বলে।
যেমন – 14Si30 এবং 15P31 এরা পরস্পর আইসোটোন । কারণ এদের উভয়ের নিউক্লিয়াসে নিউট্রন সংখ্যা সমান। অর্থাৎ , প্রথমটিতে ( 30-14)=16 টি এবং দ্বিতীয়টিতে (31–15)=16 টি , কিন্তু পরমাণু-ক্রমাঙ্ক আলাদা।অর্থাৎ , এরা পরস্পরের আইসোটোন।
সমইলেকট্রনীয় বা আইসোইলেকট্রনিক কাকে বলে?
আইসোইলেকট্রনিক (Isoelectronic) : যেসব পরমাণু বা আয়নের মোট ইলেকট্রন সংখ্যা সমান তাদের পরস্পরকে সমইলেকট্রনীয় বা আইসোইলেকট্রনিক বলে।
**আইসোটোপের রাসায়নিক ধর্ম অভিন্ন হয় কেন?
উত্তর: একই মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপের ভরসংখ্যা আলাদা হয , কিন্তু পারমাণবিক সংখ্যা সমান হয়। অর্থাৎ, পরমাণুতে উপস্থিত প্রোটন সংখ্যা এবং ইলেকট্রন সংখ্যা একই হয়। মৌলের রাসায়নিক ধর্ম তার পারমাণবিক সংখ্যা ও ইলেকট্রন বিন্যাসের ওপর নির্ভর করে ৷ আইসোটোপের প্রোটন সংখ্যা ও ইলেকট্রন বিন্যাস এক হবার কারণে আইসোটোপের রাসায়নিক ধর্ম অভিন্ন হয়।
Pingback: নিউক্লিয় বল (Nuclear Force) কাকে বলে? | বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি – Studious
Pingback: পদার্থের ভৌত ধর্ম কাকে বলে? | ভৌত ধর্ম গুলির উল্লেখ করো – Studious
খুব সুন্দর হয়েছে। আমার খুব ভালো লাগলো। আইসোটোপ কি এই সম্বন্ধে আমার সব প্রশ্নের উত্তর পেলাম