Skip to content

সিপাহী বিদ্রোহ 1857 (মহাবিদ্রোহ) | সিপাহী বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল

সিপাহী বিদ্রোহ কেন হয়

1857 সালের সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহকে ভারতের ইতিহাসের “ জল বিভাজিকা ” রূপে চিহ্নিত করা হয়। ইউরোপের ইতিহাসে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের মতো ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে মহাবিদ্রোহ ছিল প্রায় 100 বছর ব্যাপী ইংরেজ অপশাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। সিপাহী বিদ্রোহ একটি গণবিক্ষোভ নাকি ক্ষয়িষ্ণু ও পতনোন্মুখ সামন্তপ্রভুদের আত্ম – স্বার্থরক্ষার একটি প্রতিক্রিয়াশীল প্রয়াস তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ থাকলেও এ কথা স্বীকার করতেই হয় যে, ভারতে ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধে এটিই ছিল প্রথম বৃহত্তম অভ্যুত্থান। পরবর্তী সময়ের স্বাধীনতা আন্দোলনের ওপর এই বিদ্রোহের প্রভাব ছিল অপরিসীম তাই বীর সাভারকর এই বিদ্রোহকে ‘প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেছেন।

 

1857 সালে সিপাহী বিদ্রোহের কারণ

সিপাহী বিদ্রোহ এর প্রত্যক্ষ কারণ:

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ‘ এনফিল্ড রাইফেল ‘ – এর প্রচলন : এই রাইফেলে গোরু ও শূকরের চর্বি মেশানো কার্তুজ দাঁতে কেটে ভরতে হত । এর ফলে হিন্দু ও মুসলমান সিপাহিদের ধর্মনাশের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে গুজব রটে।

সিপাহী বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ: 

লর্ড ওয়েলেসলি প্রবর্তিত অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি : (i) দেশীয় রাজ্যগুলিকে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক আক্রমণ থেকে নিরাপত্তা দানের বিনিময়ে তাদের বশ্যতা স্বীকার করানো হয়।

(ii) এই নীতির দ্বারা হায়দ্রাবাদ , তাঞ্জোর , সুরাট , কর্ণাটক , অযোধ্যা , উদয়পুর , যোধপুর , জয়পুর ইত্যাদি দেশীয় রাজ্য ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণাধীন হয়।

লর্ড ডালহৌসি প্রবর্তিত স্বত্ববিলোপ নীতি : (i) কোনো রাজ্যের রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে, সেই রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হবে এবং সেই রাজার দত্তকপুত্রের অধিকার বাতিল বলে গণ্য করা হবে।

(ii) এই নীতির ফলে সাতারা, সম্বলপুর, উদয়পুর, ঝাঁসি , নাগপুর , কর্ণাটক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।

ব্রিটিশ আশ্রিত রাজ্যগুলির নিরাপত্তাহীনতা : (i) দেশীয় রাজ্যগুলির ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্তির ফলে আশ্রিত রাজারা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন।

(ii) ত্রিবাঙ্কুর, কাথিয়াবাড়, রাজপুতানা সহ অন্যান্য রাজ্য ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হওয়ার জন্য বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

ভাতা, উপাধি বিলোপ : নানা সাহেবের বৃত্তি বন্ধ , কর্ণাটকের রাজপরিবারের ভাতা বন্ধ , বাহাদুর শাহের উপাধি বিলোপ প্রভৃতি ঘটনা মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করে।

কুশাসনের অজুহাতে রাজ্যগ্রাস : এছাড়াও অযোধ্যা দখল এবং রাজপরিবারের সদস্যদের বিতাড়িত করে বাজপাসাদ লণ্ঠন ভারতীয়দের অসন্তোষ বাড়ায়।

সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের সামরিক কারণ:

  • ভারতীয় সিপাহিদের বেতন অত্যন্ত কম ছিল । অভিজ্ঞতা থাকলেও তাদের পদোন্নতির বিশেষ সুযোগ ছিল না।
  • ইংরেজ অফিসাররা ভারতীয় সিপাহিদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এবং দুর্ব্যবহার করত । এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায় হিন্দু সিপাহিদের তিলক কাটা ও মুসলমান সিপাহিদের দাড়ি রাখার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়।
  • 1824 খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধে সিপাহিদের সমুদ্র (কালাপানি) পেরিয়ে যুদ্ধে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
  • 1856 খ্রিস্টাব্দে ডালহৌসি ‘ General Service Enlistment Act ‘ দ্বারা সিপাহিদের যে – কোনো স্থানে যুদ্ধে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়, কিন্তু দূরদেশে যুদ্ধে গেলেও সিপাহিরা তাদের প্রাপ্য ভাতা বা বাট্টা পেত না।

সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের অর্থনৈতিক কারণ

  • ইংল্যান্ডের শিল্পজাত উন্নত ও সম্ভা দ্রব্যে বাজার ছেয়ে গেলে ভারতীয় কুটিরশিল্প প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • কোম্পানি প্রবর্তিত ভূমিব্যবস্থায় কৃষকদের উচ্চহারে রাজস্ব প্রদান করতে হত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত , রায়তওয়ারি , মহলওয়ারি , তালুকদারি প্রভৃতি বন্দোবস্তুগুলি কৃষকদের উপর শোষণের মাত্রা বৃদ্ধি করেছিল।
  • এই সময় নীলকর, পথকর, গো-চারণ কর, চৌকিদারি কর প্রভৃতি চালু করা হয়।
  • কোম্পানি বিনাশুল্কে এদেশে একচেটিয়া বাণিজ্য করায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে।
  • 1757-1857 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারত থেকে প্রচুর মূল্যবান ধাতু ( সোনা , রুপো ) ইংল্যান্ডে প্রেরণ করে।

সিপাহী বিদ্রোহের সামাজিক ও ধর্মীয় কারণ:

  • ইংরেজরা ভারতীয়দের ঘৃণার চোখে দেখত এবং তাদের ‘ কালা আদমি ’, ‘ নেটিভ ’, ‘ বর্বর – অসভ্য ’ প্রভৃতি বলে সম্বোধন করত।
  • হিন্দু বিধবাবিবাহ আইন , সতীদাহপ্রথা রদ , স্ত্রী – শিক্ষা , শিশুহত্যা নিবারণ ইত্যাদি ঘটনাগুলিকে ভারতবাসী ধর্মনাশের প্রচেষ্টা বলে মনে করে । খ্রিস্টান মিশনারিরা ভারতবাসীদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করলে এই অসন্তোষ আরও বৃদ্ধি পায়।
  • মন্দির – মসজিদ ইত্যাদি ধর্মীয় এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানের উপর কর আরোপ করা হয়।
  • হিন্দু উত্তরাধিকার আইন বিশেষত পৈতৃক সম্পত্তিতে ধর্মান্তরিত ব্যক্তি ও নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা রক্ষণশীল হিন্দু সমাজকে ক্ষুব্ধ করে।

 

সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের গতি বা বিস্তার

1857 খ্রিস্টাব্দের 26 শে ফেব্রুয়ারি মুর্শিদাবাদের বহরমপুর সেনানিবাসে চর্বি-মাখানো টোটা নিয়ে বিক্ষোভ দেখা দেয়। এরপর 29 শে মার্চ ব্যারাকপুরের সেনানিবাসে মঙ্গল পান্ডে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তাঁর হাতে একজন ইংরেজ সামরিক কর্মচারী নিহত হন। মঙ্গল পান্ডেকে সিপাহী বিদ্রোহ র প্রথম শহিদ হিসেবে গণ্য করা হয়। বহরমপুর ও ব্যারাকপুর সেনানিবাসের এইসব কাজকর্মকে প্রতিবাদমূলক হিসেবে চিহ্নিত করা যায় — পরিকল্পিত বিদ্রোহ এগুলি নয়। 1857 খ্রিস্টাব্দের 10 ই মে মিরাট সেনানিবাসেই প্রকৃতপক্ষে বিদ্রোহ শুরু হয়। বিদ্রোহ ক্ৰমে দিল্লি, অযোধ্যা, কানপুর, লক্ষ্ণৌ, বেরিলি, ঝাঁসি, বিহার প্রভৃতি ভারতের এক বিরাট অঞ্চলে বিস্তৃত হয়। বিদ্রোহ দমনের জন্য সরকার কঠোর দমননীতি অবলম্বন করেন। বিদ্রোহীদের বহু ত্যাগ, তিতিক্ষা ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম সত্ত্বেও 1858 খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসের মধ্যে সমগ্র ভারতে বিদ্রোহ দমিত হয়।

সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের নেতৃত্ব

সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের প্রধান কেন্দ্র ছিল দিল্লি, কানপুর, লক্ষ্ণৌ, বেরিলি, ঝাঁসি এবং বিহারের আরা। বিদ্রোহী সিপাহিরা দিল্লির গদিচ্যুত বাদশাহ দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ-কে মহাবিদ্রোহের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তিনি ‘ নামসর্বস্ব ’ নেতা ছিলেন মাত্র — যদিও তাঁর নামেই সিপাহী বিদ্রোহ পরিচালিত হত। সিপাহী বিদ্রোহের কেন্দ্রবিন্দুতে তাঁর মতো জরাগ্রস্ত, দুর্বল ও দোদুল্যচিত্ত ব্যক্তির উপস্থিতি মহাবিদ্রোহকে দুর্বল করে তোলে। দিল্লিতে বিদ্রোহ পরিচালনার মূল দায়িত্ব ছিল একদল সেনার উপর এবং তাদের নেতা ছিলেন গোলন্দাজ বাহিনীর সুবেদার বখত খান। কানপুরে বিদ্রোহের নেতা ছিলেন পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও-ওর পোষ্যপুত্র নানাসাহেবতাঁর পক্ষে সেনাপতি তাঁতিয়া তোপি ও মন্ত্রী হাকিম আজিমুল্লা বিদ্রোহ পরিচালনা করতেন। অযোধ্যার বেগম  পুত্র বরজিস কাদির – কে সিংহাসনে স্থাপন করে নিজেই বিদ্রোহ পরিচালনা করতেন। ঝাঁসিতে বিদ্রোহ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব বহন করেন তরুণী বিধবা রানি লক্ষ্মীবাঈ। বিহারের মুখ্য সংগঠক ছিলেন আরা – র নিকটবর্তী জগদীশপুরের পদচ্যুত জমিদার অশীতিপর বৃদ্ধ কুনওয়ার সিংফৈজাবাদে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন বৃদ্ধ মৌলবি আহম্মদুল্লাআসামে বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেন মণিরাম দেওয়ানবেরিলি-র নেতা ছিলেন রোহিলা নায়ক খাঁ বাহাদুর খাঁ।

আরও পড়ুন: 

 

সিপাহী বিদ্রোহের ফলাফল

কোম্পানির শাসনের অবসান :

  • বিদ্রোহের ব্যাপকতা লক্ষ করে ইংল্যান্ডের ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে ভারতের প্রশাসনিক দায়িত্ব রাখা যুক্তিসংগত নয় বলে বিবেচনা করে।
  • 1858 খ্রিস্টাব্দের 2 আগস্ট ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ‘ভারতশাসন আইন’ পাস করার মাধ্যমে ভারতে কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটানো হয়।
  • ভারতের শাসনভার সরাসরি ব্রিটিশ সরকার বা ইংল্যান্ডের মহারানি ভিক্টোরিয়ার হাতে অর্পণ করা হয়।
  • ভারতের গভর্নর জেনারেল ‘ ভাইসরয় ’ বা রাজপ্রতিনিধিরূপে ভারতের শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকেন।

মহারানির ঘোষণাপত্র:

  • 1858 খ্রিস্টাব্দের 1 নভেম্বর মহারানির ঘোষণাপত্র দ্বারা ভারতীয় শাসনব্যবস্থায় বেশ কয়েকটি নীতি ও আদর্শের কথা ঘোষণা করা হয়।
  • স্বত্ববিলোপ নীতি পরিত্যক্ত হয় এবং দেশীয় রাজ্যগুলিকে দত্তকপুত্র গ্রহণের মতি দেওয়া হয়।
  • দেশীয় রাজ্যের সঙ্গে ইংরেজদের সম্পাদিত চুক্তিগুলি মেনে চলার কথা বলা হয়।
  • জাতি – ধর্ম – বর্ণ নির্বিশেষে সকল যোগ্য ভারতীয়দের সরকারি চাকুরি প্রদানের আশ্বাস দেওয়া হয়।

সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবর্তন

  • সরকার ভারতীয়দের সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানানো হয়।
  • স্থির হয় ব্রিটিশ সরকার এরপর থেকে ভারতে আর সাম্রাজ্যবিস্তারে আগ্রহ দেখাবে না।
  • একই সাথে গভর্নর জেনারেল বা ভাইসরয় দেশীয় রাজ্যগুলির উত্তরাধিকার – সংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি করবে বলে নির্ধারিত হয়।

শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন: 

  • 1858 খ্রিস্টাব্দের ‘Act for better Government of India’ অনুসারে ভারতে শাসনকার্য পরিচালনার সকল দায়িত্ব রানির প্রতিনিধি হিসেবে ভারতসচিবের উপর অর্পিত হয়।
  • স্থির হয় যে, 15 জন সদস্য নিয়ে গঠিত India Council ভারতসচিবের কাজে সহায়তা করবে।

আইন পরিষদে ভারতীয়দের নিয়োগ:

  • 1858 খ্রিস্টাব্দের আইনে শাসনকার্যে ভারতীয়দের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ ছিল না।
  • 1861 খ্রিস্টাব্দে নতুন ‘ ভারতশাসন আইন ’ দ্বারা কেন্দ্রীয় আইন পরিষদ এবং কলকাতা , মাদ্রাজ ও বোম্বাই আইন পরিষদে ভারতীয় সদস্যদের গ্রহণের ব্যবস্থা গৃহীত হয়।
  • স্যার দিনকর রাও, পাতিয়ালা ও বেনারসের রাজা বেসরকারি সদস্য হিসেবে আইনসভায় স্থান লাভ করেন।

সামরিক পরিবর্তন:

  • ব্রিটিশ – বিরোধী সম্ভাব্য সেনাঅভ্যুত্থান প্রতিরোধের লক্ষ্যে সামরিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়—
  • সেনাবাহিনীতে শ্বেতাঙ্গ সৈন্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।
  • গোলন্দাজ বাহিনী সম্পূর্ণভাবে ইংরেজদের হাতে রাখা হয়।
  • সীমান্তরক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ইংরেজ সেনাদের উপর অর্পিত হয়।
  • সামরিক উচ্চপদে ভারতীয়দের নিয়োগ না করার নীতি গৃহীত হয়।
  • যে সমস্ত সৈন্য মহাবিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল , সরকার তাদের ‘অসামরিক জাতি’ আখ্যা দেয় এবং তাদের ব্রিটিশ – ভারতীয় সেনাবিভাগে প্রবেশের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।
  • ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে যাতে ঐক্য গড়ে উঠতে না পারে , সেজন্য ভারতীয় বাহিনীর প্রতিটি বিভাগে বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের সেনা নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়।

 

সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ

1) ভারতের সমগ্র অঞ্চলের সিপাহি ও জনগণ সিপাহী বিদ্রোহ এ অংশগ্রহণ করেনি।

2) উত্তর – পশ্চিম ভারত, পূর্ব ভারত এবং দক্ষিণ ভারতের একাংশ এই বিদ্রোহ থেকে দূরে ছিল।

3) শিখ ও গোর্খা সৈন্যরা এই সিপাহী বিদ্রোহ দমনে ইংরেজদের সাহায্য করেছিল।

4) ইংরেজ সেনাপতি লরেন্স, ক্যাম্পবেল, নিকলসন প্রমুখ ইংরেজ সেনাপতিগণ নানাসাহেব, তাঁতিয়া টোপি, লক্ষ্মীবাঈয়ের তুলনায় যুদ্ধ বিষয়ে অনেক বেশি দক্ষ ও পারদর্শী ছিলেন।

5) বিদ্রোহীদের মধ্যে কোনো সর্বভারতীয় পরিকল্পনা ছিল না। বিদ্রোহীরা মূলত আঞ্চলিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা পরিচালিত হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে যুদ্ধ শুরু করেন।

6) বিদ্রোহীরা জাতীয় স্বার্থে কোনো স্থির লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলন করেননি। গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া, হায়দ্রাবাদের নিজাম, নেপালের জঙ্গ বাহাদুর, কাশ্মীর ও যোধপুরের রাজারা সিপাহী বিদ্রোহ দমনে ইংরেজদের সাহায্য করেন।

7) পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় সমাজে আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে ইংরেজদের বিরোধিতা করেননি।

8) আধুনিক ও উন্নত অস্ত্রের অভাবে বিদ্রোহীরা সহজেই ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয়। উন্নত ও শক্তিশালী নৌশক্তি ইংরেজদের সাফল্যকে ত্বরান্বিত করেছিল।

9) রেললাইন, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ ইত্যাদি আধুনিক উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ইংরেজদের দ্রুত সংবাদ ও সৈন্য প্রেরণের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকায় তারা সমস্যার সম্মুখীন হয়।
10) মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের কিছু কর্মচারী ও সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতা বিদ্রোহীদের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর

1) সিপাহী বিদ্রোহ কোথায় গণবিদ্রোহ পরিণত হয়?

উত্তর: সিপাহী বিদ্রোহ অযোধ্যায় গণবিদ্রোহ পরিণত হয়।

2) সিপাহী বিদ্রোহের প্রথম শহীদ কে?

উত্তর: সিপাহী বিদ্রোহের প্রথম শহীদ হলেন মঙ্গল পান্ডে।

3) সিপাহী বিদ্রোহের সময় বড়লাট কে ছিলেন?

উত্তর: সিপাহী বিদ্রোহের সময় বড়লাট ছিলেন লর্ড ক্যানিং

4) কানপুরে সিপাহী বিদ্রোহের নেতা কে ছিলেন?

উত্তর: কানপুরে সিপাহী বিদ্রোহের নেতা ছিলেন তাঁতিয়া টোপি।

5) সিপাহী বিদ্রোহ কবে শুরু হয়?

উত্তর: সিপাহী বিদ্রোহ ১৮৫৭ সালে ১০ মে শুরু হয়।

 
6) সিপাহী বিদ্রোহে কারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?
 
উত্তর: ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাই, বাহাদুর শাহ, নানা সাহেব।
 
7) দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে কোথায় নির্বাসিত করা হয়েছিল ? 
 
উত্তর:  ব্রহ্মদেশের বর্তমান মায়ানমারের রেঙ্গুনে।
 
8) নানাসাহেব কে ছিলেন ? 
 
উত্তর:  পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও এর দত্তকপুত্র এবং সিপাহী বিদ্রোহের অগ্রগণ্য নেতা। 
 
Covered Topics: সিপাহী বিদ্রোহ কেন হয়েছিল, সিপাহী বিদ্রোহ pdf, 1857 সালের সিপাহী বিদ্রোহের কারণ, সিপাহী বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল, সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ গুলি কি কি,  সিপাহী বিদ্রোহের সময় বড়লাট কে ছিলেন, সিপাহী বিদ্রোহের প্রকৃতিি, সিপাহী বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ কি ছিল,সিপাহী বিদ্রোহের অর্থনৈতিক কারণ। Image source- www.thoughtco.com

Share this

Related Posts

Comment us

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook Page