Skip to content

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ চিত্রসহ | হিমবাহের ক্ষয়কার্য

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ

নমস্কার বন্ধুরা আমরা এই পর্বের বিষয়গুলিতে জানবো হিমবাহের বিভিন্ন কাজের সম্পর্কে, আজ আমরা জানবো হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ এর বর্ণনা। সুতরাং দেরি না করে শুরু করা যাক।

হিমবাহ কাকে বলে

উত্তর হিমবাহ : ল্যাটিন শব্দ ‘Glacies’ থেকে ‘ Glacier’ শব্দটির উৎপত্তি, যার অর্থ ‘Ice’ বা ‘বরফ’। সুনির্দিষ্ট খাত বা উপত্যকা বরাবর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে খুব ধীরে চলমান সুবিশাল বরফের স্তূপকে বলা হয় হিমবাহ। এককথায় হিমবাহ হল বরফের নদী। তবে নদীর জল জমে বরফে পরিণত হলে তাকে হিমবাহ বলা হয় না।

হিমবাহের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ভূ – বিজ্ঞানী ফ্লিন্ট ( Flint ) বলেছেন, “ হিমবাহ হল এক বিশালাকৃতির বরফের স্তূপ যা প্রধানত তুষার জমে সৃষ্টি হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অবস্থান করছে এবং গতিশীল অবস্থায় রয়েছে অথবা একদা গতিশীল ছিল “।

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ

নিন্মে আমরা হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের খুব সুন্দর করে বর্ণনা দিলাম। আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে।

1. সার্ক বা করি ( Cirque or Corrie ) :

সংজ্ঞা : হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ এর একটি উদাহরণ হল সার্ক বা করি (Cirque or Corrie)। পার্বত্য হিমবাহের উৎস ক্ষেত্রে ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট Amphitheatre বা আরামকেদারার ন্যায় ভূমিরূপকে ফরাসি ভাষায় সার্ক ও ইংরেজিতে করি, জার্মানিতে কার , ওয়েলসের ভাষায় কুম ও নরওয়েতে বন ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় বটন বলা হয় । হিমবাহ বিজ্ঞানী শারপেঁতিয়া 1823 সালে প্রথম ‘ সার্ক ’ শব্দটি ব্যবহার করেন। হিমবাহ পশ্চাদপসরণ করলে এই ভূমিরূপটি দেখা যায় ।

সার্ক বা করির গঠন : এর তিনটি অংশ তিনভাবে গঠিত হয়। যথা

(i) উৎপাটন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়ের দ্বারা সৃষ্ট হয় পেছনের খাড়া মস্তক প্রাচীর ( Head wall ) , এগুলি 700-800 মিটার উচ্চ হয়।

(ii) অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট তলদেশের গভীর বেসিন ( Basin ) এবং

(iii) কম ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট সম্মুখের চৌকাঠের ন্যায় উঁচু অংশ হল করিওষ্ঠ ( Threshold )। বরফমুক্ত করিতে জল জমলে হ্রদের সৃষ্টি হয়। এই হ্রদকে করিহ্রদ বা টার্ন ( Tarn ) বলে। হিমালয় পর্বতের হিমবাহ অধ্যুষিত অঞ্চলে এরকম বহু হ্রদ দেখা যায় উদাহরণ : আন্টার্কটিকার ওয়ালকট নামক সার্কটি পৃথিবীর গভীরতম ( 3000 মিটার ) সার্ক।

2. হিমশিরা বা এরিটি ( Arete ): 

সংজ্ঞা :হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ এর একটি উদাহরণ হল হিমশিরা বা এরিট।হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে পাশাপাশি দুটি সার্ক সৃষ্টি হলে তাদের মাঝের বিভাজিকাটিও ক্ষয়প্রাপ্ত ও সংকীর্ণ হয়ে শৈলশিরার আকারে অবস্থান করে। এই শৈলশিরাকে হিমশিরা বা এরিটি বলে।

হিমশিরা বা এরিটির বৈশিষ্ট্য : 

(i) এগুলি ছুরির ফলার ন্যায় তীক্ষ্ম বা করাতের দাঁতের ন্যায় খাঁজকাটা হয়।

(ii) এরিটির কোনো অংশ ভেঙে গেলে এক সার্ক থেকে অন্য সার্কে যাওয়ার পথকে গিরিপথ (Pass) বলা হয়।

উদাহরণ : আল্পস পার্বত্য অঞ্চলে এরূপ বহু এরিটি দেখা যায়।

আরও পড়ুন:-

 

3. পিরামিড চূড়া (Pyramidal Peak):

সংজ্ঞা : হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ এর আর একটি উদাহরণ হল পিরামিড চূড়া। কোনো শৃঙ্গের চারদিকেই সার্ক ও এরিটি থাকলে সেই শৃঙ্গকে পিরামিড চূড়া বলে। সুইস আল্পস (Swiss Alps) – এ এরূপ শৃঙ্গকে Horn বলে।

উদাহরণ : ম্যাটারহর্ন (Matterhorn) ও ভিস হর্ন (Weiss horn)। এছাড়াও হিমালয়ের শিবলিঙ্গ ও নীলকণ্ঠ হল দুটি পিরামিড চূড়ার উদাহরণ।

4.’ U ‘ আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণী (Glacial Trough):

সংজ্ঞা : হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ এর আর একটি উদাহরণ হল হিমদ্রণী। হিমবাহ সৃষ্ট উপত্যকাকে হিমদ্রোণী বলে।

‘ U ‘ আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণীর গঠন : যে উপত্যকার মধ্য দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হয় সেই উপত্যকাটি হিমবাহের ক্ষয়কার্যের দ্বারা অত্যন্ত প্রশস্ত , মোটামুটি মসৃণ তলদেশ ও পার্শ্বদেশ খাড়া ঢালবিশিষ্ট উপত্যকায় পরিণত হয়। এই হিমদ্রোণী দেখতে ইংরেজি ‘ U ‘ অক্ষরের মতো তাই একে ‘ U ‘ আকৃতির উপত্যকাও বলা হয়।

‘ U ‘ আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণীর বৈশিষ্ট্য :

(i) অনেক সময় এই রকম গভীর উপত্যকায় হিমবাহ গলা জল জমে হ্রদের সৃষ্টি হয়। যেমন– হিমালয়ের রূপকুণ্ড হ্রদ।

(ii) অনেকসময় হিমদ্রোণীতে হিমসোপান বা সিঁড়ির মতো ধাপ দেখা যায়।

উদাহরণ : আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইয়োসেমিতি উপত্যকা।

5. ঝুলন্ত উপত্যকা ( Hanging Valley ) :

সংজ্ঞা : হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ এর আর একটি উদাহরণ হল ঝুলন্ত উপত্যকা। প্রধান হিমবাহ উপত্যকার ওপরে উপহিমবাহ উপত্যকাগুলির অবস্থানকে ঝুলন্ত উপত্যকা বলে।

ঝুলন্ত উপত্যকার গঠন: উপনদী যেমন মূল নদীতে এসে মেশে তেমনি পার্বত্য অঞ্চলে অনেক সময় ছোটো ছোটো কয়েকটি উপহিমবাহ বিভিন্ন দিক থেকে এসে প্রধান হিমবাহের সঙ্গে মিলিত হয়। ছোটো বড়ো সব হিমবাহই ক্ষয়কার্যের দ্বারা পৃথক পৃথক উপত্যকা বা হিমদ্রোণী গঠন করে। স্বাভাবিকভাবেই প্রধান হিমবাহে বরফের পরিমাণ অনেক বেশি থাকায় উপত্যকাটি উপহিমবাহ উপত্যকাগুলির থেকে বেশি গভীর ও বড়ো হয়ে থাকে। এই কারণে হিমবাহ সরে গেলে মনে হয় উপহিমবাহ উপত্যকাগুলি প্রধান হিমবাহ উপত্যকার ওপর ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। এরূপ ভূমিরূপ ঝুলন্ত উপত্যকা নামে পরিচিত।

উদাহরণ : হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের নরপর্বত থেকে নীচের দিকে কুবের নামে ঝুলন্ত উপত্যকা দেখা যায়। ঝুলন্ত উপত্যকাগুলি যেহেতু প্রধান হিমবাহ উপত্যকার ওপর খাড়াভাবে অবস্থান করে , তাই এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে নদী বয়ে গেলে ঝুলন্ত উপত্যকায় জলপ্রপাত সৃষ্টি হয় । যেমন— আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইয়োসেমিতি উপত্যকায় অবস্থিত ঝুলন্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মারসেদ নদীর নেভো জলপ্রপাত।

6. কর্তিত স্পার (Truncated Spur):

সংজ্ঞা : পার্বত্য অঞ্চলে নদী , পর্বতের অভিক্ষিপ্তাংশগুলিকে ক্ষয় করতে না পারলে যেদিকে যেমন সুবিধা পায় সেদিকে আঁকাবাঁকা পথে বয়ে হিমবাহ চলে , তার পথরোধকারী অভিক্ষিপ্তাংশগুলির অগ্রভাগ (Nose) ক্ষয় করে অগ্রসর হয়। ফলে, ত্রিভুজাকৃতির শৈলশিরার সৃষ্টি হয়  এই শৈলশিরাকে কর্তিত স্পার বলে। মারসেদ নদীর নেভো জলপ্রপাত।

7. রসে মতানে ( Roche Moutonnee ):

সংজ্ঞা : হিমবাহের ক্ষয়কার্যের দ্বারা সৃষ্ট একদিক মসৃণ ও অপরদিক অমসৃণ ভূমিরূপকে রসে মতানে বলে । ভূবিজ্ঞানী সসার ( Saussure ) 1804 খ্রিস্টাব্দে প্রথম ‘ রসে মতানে ’ শব্দটি ব্যবহার করেন।

রসে মতানে গঠন: হিমবাহের প্রবাহ পথে কোনো কঠিন শিলা উঁচু ঢিবির আকারে অবস্থান করলে হিমবাহের অবঘর্ষ ক্ষয়ের ফলে ঢিবির প্রতিবাত ঢাল অর্থাৎ , হিমবাহ প্রবাহের দিকটি মসৃণ , চকচকে ও আঁচড়যুক্ত হয়। কিন্তু অনুবাত ঢাল অর্থাৎ, বিপরীত দিকটি উৎপাটন ক্ষয় প্রক্রিয়ায় অসমতল, ভগ্ন ও খাঁজকাটা হয়। এই প্রকার ভূমিরূপ রসে মতানে নামে পরিচিত।

রসে মতানে বৈশিষ্ট্য :

(i) রসে মতানে একটিমাত্র শিলায় গঠিত হয় । @ এর উচ্চতা বেশি হলেও এর বিস্তৃতি ও দৈর্ঘ্য কম।

(ii) এই ভূমিরূপ থেকে হিমবাহের গতিপথের ধারণা পাওয়া যায়। এর মসৃণ মৃদু ঢালকে ‘ স্টস ’ এবং অমসৃণ খাড়া ঢালকে ‘ লি ’ বলা হয়। স্কটল্যান্ডীয় ভাষায় ‘ রসে মতানে ’ কথার অর্থ ‘ ভেড়ার মাথা ’।

উদাহরণ : মধ্য হিমালয় অঞ্চলে রসে মতানে দেখা যায় , ক্যালিফোর্নিয়ার ‘ লাম্বাটডোম ’ একটি রসে মতানে । এছাড়াও কাশ্মীর উপত্যকায় ঝিলামের উপনদী লিডার নদীর উপত্যকায় রসে মতানে দেখা যায়।

8. ক্র্যাগ ও টেল ( Crag and Tail ):

সংজ্ঞা : হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ এর আর একটি উদাহরণ হল ক্র্যাগ ও টেল। হিমবাহের প্রবাহপথে বৈষম্যমূলক ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট লেজবিশিষ্ট খাড়া উচ্চ শিলাখণ্ডকে ক্র্যাগ ও টেল বলে।

ক্র্যাগ ও টেলের গঠন : হিমবাহের প্রবাহপথে কোনো কঠিন শিলাস্তূপের পশ্চাতে কোমল শিলা ঢিবির আকারে দাঁড়িয়ে থাকে এবং নরম শিলাটি পশ্চাতে মৃদু ঢালযুক্ত লেজের মতো সরু অংশের সৃষ্টি করে। এই উঁচু ঢিবিকে ক্র্যাগ ও লেজকে টেল বলে।

ক্র্যাগ ও টেলের বৈশিষ্ট্য :

(i) ক্র্যাগ অমসৃণ এবং টেল মসৃণ হয । ঔ ক্র্যাগ খাড়া ঢালযুক্ত এবং টেল মৃদু ঢালযুক্ত হয়।

(ii) টেল কয়েক মিটার থেকে 2 কিমি পর্যন্ত দীর্ঘ হয়ে থাকে। এই ভূমিরূপগুলি হিমবাহের গতিপথের দিক নির্দেশ করে।

উদাহরণ : স্কটল্যান্ডের এডিনবরা ক্যাসেল ( Edinburgh Castle ) এরূপ একটি ব্র্যাগের ওপর অবস্থিত ও টেলটির উপর দিয়ে একটি সড়ক হাই স্ট্রিট নির্মিত হয়েছে।

8.ফিয়র্ড ( Fjord ) :

সংজ্ঞা : সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে অনেক সময় হিমবাহের ক্ষয়কার্যের দ্বারা গভীর উপত্যকার সৃষ্টি হয়। এই উপত্যকাগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে নীচু হলে বরফমুক্ত হওয়ার পর সমুদ্রের জলে ভরে যায়। জলমগ্ন এরূপ উপত্যকাকে ফিয়র্ড বলে।

বৈশিষ্ট্য : ফিয়র্ড উপকূলে জলের গভীরতা বেশি হয় এবং ফিয়র্ডের মধ্যভাগের তুলনায় প্রান্তভাগের জলের গভীরতা কম হয়।

উদাহরণ : নরওয়ের সোজনে ফিয়র্ড পৃথিবীর গভীরতম ফিয়র্ড।

 

Covered Topics: হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ, হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ চিত্রসহ, হিমবাহের ক্ষয় কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ, ড্রামলিন কি?, পিরামিড চূড়া কাকে বলে উদাহরণ, রসে মতানে ছবি, চিত্রসহ নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে গড়ে ওঠা দুটি ভূমিরূপ এর বর্ণনা দাও

 

Share this

Related Posts

Comment us

2 thoughts on “হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ চিত্রসহ | হিমবাহের ক্ষয়কার্য”

  1. Pingback: হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ | হিমবাহের সঞ্চয়কার্য কি – Studious

  2. ভারতের কোথায় হিমবাহ দেখা যায় ওই অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কার্য ফলে সৃষ্ট দুটি ভূমিরূপের চিএসহ বিশ্লেষণ করো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook Page