প্রিয় পাঠকগণ, ভূগোলের আগে অধ্যায় গুলিতে আমরা আলোচনা করেছি পর্বত এবং মালভূমি নিয়ে, ভূগোলের এই পড়বে আমরা আলোচনা করব সমভূমি সম্পর্কে। আজ আমরা জানবো “সমভূমি কি ?, সমভূমি কিভাবে সৃষ্টি হয়?, সমভূমির বৈশিষ্ট্য, সমভূমির শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে যেমন পলিগঠিত সমভূমি কি ? (Alluvial Plains)?, প্লাবন সমভূমি বা বন্যাগঠিত সমভূমি কি? (Flood Plains), বদ্বীপ সমভূমি কাকে বলে? (Deltaic Plains), উপকূলীয় সমভূমি কি? (Coastal plains)” আরও অনেক তথ্য।
Table of contents
সমভূমি কাকে বলে?
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অল্প উঁচু (300 মিটারের মধ্যে) বিস্তৃত সমতলভূমি বা সামান্য ঢেউখেলানাে নীচু ভূমিভাগকে সমভূমি বলে।
উদাহরণ : নদী অববাহিকা ও সমুদ্র উপকূল অঞলে সমভূমি গড়ে ওঠে। ভারতের সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রক্ষ্মপুত্র সমভূমি, রাশিয়ার সাইবেরিয়া সমভূমি, মিশরের নীল নদ উপত্যকা, উত্তর আমেরিকার মিসিসিপি-মিসৌরি উপত্যকা প্রভৃতি পৃথিবী বিখ্যাত সমভূমি। সাইবেরিয়া সমভূমি পৃথিবীর বৃহত্তম সমভূমি।
সমভূমির বৈশিষ্ট্য
1) সমভূমির উচ্চতা বেশ কম, সমভূমির ঢালও বেশ কম।
2) সমভূমি সাধারণত পলি দ্বারা গঠিত হয়।
3) বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সমভূমিগুলি অবস্থান করে।
4) ভূপৃষ্ঠের স্থলভাগের 50 % -এর বেশি অংশ সমভূমির অন্তর্গত।
5) এশিয়া, ইউরােপ ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশে সমভূমির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে কম।
সমভূমির শ্রেণিবিভাগ
ভূপৃষ্ঠের যাবতীয় সমভূমিকে উৎপত্তির পার্থক্য, গঠন বৈচিত্র্য ও আকৃতি অনুসারে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এগুলি হল সঞ্চয় জাত সমভূমি, ক্ষয়জাত সমভূমি ও ভূ – আলােড়নে গঠিত সমভূমি। এদের মধ্যে পৃথিবীতে সঞ্জয়জাত সমভূমির পরিমাণই সবচেয়ে বেশি।
❶ পলিগঠিত সমভূমি কাকে বলে? (Alluvial Plains)
দীর্ঘদিন ধরে নদীবাহিত পলি নদী অববাহিকায় সঞ্চিত হয়ে যে বিস্তীর্ণ সমভূমির সৃষ্টি করে তাকে পলিগঠিত সমভূমি বলে। সব বড়াে বড়াে নদী অববাহিকায় এরূপ সমভূমি দেখা যায়।
উদাহরণ : ভারতের সিন্ধু গঙ্গা ব্রম্মপুত্র সমভূমি , চিনের ইয়াংসি সমভূমি এই জাতীয় সমভূমি । পলিগঠিত সমভূমি দুধরনের হতে পারে—প্রাচীন পলিগঠিত উঁচু সমভূমি (যেমন গাঙ্গেয় সমভূমির ভাগর অঞ্চল) এবং নবীন পলিগঠিত অপেক্ষাকৃত নীচু সমভূমি (যেমন গাঙ্গেয় সমভূমির খাদর অঞ্চল)।
❷ প্লাবন সমভূমি বা বন্যাগঠিত সমভূমি কাকে বলে? (Flood Plains)
প্লাবন বা বন্যার ফলে বিস্তীর্ণ অঞলে পলি সঞিত হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে প্লাবন সমভূমি বলে
প্লাবন সমভূমি বা বন্যাগঠিত সমভূমি কীভাবে সৃষ্টি হয় ?
নদীর মধ্যগতি ও নিম্নগতির আঁকাবাঁকা প্রবাহপথে বর্ষার সময় অতিরিক্ত জলরাশি নদীতে প্রবাহিত হলে তা নদীর দুকূল ছাপিয়ে পার্শ্ববর্তী নীচু অঞ্চল প্লাবিত করে। বর্ষার জলের সঙ্গে বাহিত পলি, কাদা, বালি প্রভৃতি এইভাবে নদীতীরের পার্শ্ববর্তী অংশে বছরের পর বছর সঞ্চিত হয়ে প্লাবন সমভূমির সৃষ্টি করে।
উদাহরণ: গঙ্গা নদীর মধ্য ও নিম্নগতিতে এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় এরূপ প্লাবন সমভূমি দেখা যায়।
❸ বদ্বীপ সমভূমি কাকে বলে? (Deltaic Plains):
মােহনার নিকট নদীর পলি সঞ্জয়ের ফলে বিভিন্ন বদ্বীপগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে বদ্বীপ সমভূমি বলে।
বদ্বীপ সমভূমি কীভাবে সৃষ্টি হয় : মােহনার নিকট নদীর শক্তি খুব কমে যায়। ফলে নদীবাহিত যাবতীয় সূক্ষ্ম পলি, বালি, কাদা প্রভৃতি মােহনার নিকট অগভীর সমুদ্রে (হ্রদেও বদ্বীপ সমভূমি সৃষ্টি হতে পারে) সঞ্চিত হয়। সমুদ্রের লবণাক্ত জল ও নদীর মিষ্টি জলের প্রভাবে দ্রুত সঞ্চয়কাজ ঘটতে থাকে। এইভাবে অগভীর সমুদ্রে মাত্রাহীন ‘ ব ’ অক্ষর বা গ্রিক অক্ষর (ডেল্টা) -র মতাে দ্বীপের সৃষ্টি হয়। একে বদ্বীপ বলে। বাধা এড়িয়ে প্রবাহিত হওয়ার জন্য নদী বহশাখায় বিভক্ত হয়ে সমুদ্রে মিলিত হয়। ক্রমান্বয়ে নদীর পলি সঞয় এবং সামুদ্রিক সঞ্চয়ের ফলে বদ্বীপের চারদিকে পলি সঞ্চিত হয় এবং বদ্বীপগুলি একসময় মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিস্তীর্ণ সমভূমির সৃষ্টি করে। এইভাবেই বদ্বীপ সমভূমির সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ : পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণে গঙ্গা – ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর দ্বারা গঠিত সুন্দরবন বদ্বীপ সমভূমি পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ সমভূমি।
❹ উপকূলীয় সমভূমি কাকে বলে? (Coastal plains):
বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে স্থলভাগের ক্ষয়প্রাপ্ত কাঁকর, বালি, পলি, কাদা প্রভৃতি অগভীর সমুদ্রে দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চিত হয়ে সমুদ্র উপকূলে যে সমভূমির সৃষ্টি করে তাকে উপকূলীয় সমভূমি বলে।অনেক সময় ভূ-আলােড়নের প্রভাবে উপকূলের নিকট অগভীর সমুদ্রতলদেশ উখিত হয়ে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে উপকূলীয় সমভূমির সৃষ্টি করে।
উদাহরণ : যে কোনাে সমুদ্র উপকূলে উপকূলীয় সমভূমি দেখা যায়। ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে এরূপ সমভূমি গড়ে উঠেছে।
প্রিয় পাঠকগণ আমাদের এই পোস্ট টি এই পর্যন্তই। ভাল লাগলে comment করতে ভুলবেন না একদম। ভবিষ্যতে এরকম আরও পোস্ট পেতে আমাদের blog এ প্রতিনিয়ত ভিজিট করতে থাকুন এবং উপরে দেওয়া button এ ক্লিক করে আমাদের whatsapp/Telegram channel এর সাথে যুক্ত হন।
Pingback: আবহবিকার কাকে বলে? যান্ত্রিক আবহবিকার ও রাসায়নিক আবহবিকার – Studious
Many many many thanks,,,
We are happy to help you. Hope you like our content.Keep visiting our site studiouss.com