Skip to content

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা কি? বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার তারতম্যের কারণ

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা কি

আজ আমরা আলোচনা করবো “বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা কি?”, “বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা এর তারতম্যের কারণ গুলি কি কি?”, “বৈপরীত্য উত্তাপ কাকে বলে?”, “বৈপরীত্য উত্তাপের কারণ কি?” আরও অনেক কিছু সুতরাং শুরু করা যাক


বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বলতে কি বোঝো?

কোন স্থানের উষ্ণতা বলতে সেই স্থানের বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা কে বোঝায়। বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার প্রধান উৎস সূর্য। সূর্য রশ্মি সরাসরি বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত করতে পারে না। সূর্যতাপে ভূপৃষ্ঠ প্রথমে উত্তপ্ত হয় এবং ওই ভূপৃষ্ঠের তাপ বিকিরণে বায়ুমণ্ডল পরোক্ষভাবে উত্তপ্ত হয়। বায়ুমণ্ডল প্রধানত বিকিরণ, পরিবহন, পরিচলন তাপ শোষণ, পদ্ধতিতে উষ্ণ হয়। গরিষ্ঠ ও লঘিষ্ঠ থার্মোমিটার এর সাহায্যে বায়ুর উষ্ণতা মাপা হয়।

***সমোষ্ণরেখা কাকে বলে?**
ভূপৃষ্ঠের যে সকল স্থানের গড় উষ্ণতা কোন নির্দিষ্ট সময়ে সমান বা একই থাকে। মানচিত্রে সেই সকল স্থানের উপর দিয়ে একটি কাল্পনিক রেখা টানা হলে যে রেখা পাওয়া যায়। তাকে সমোষ্ণরেখা বলে।

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা র বৈশিষ্ট্য

1) নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার সবচেয়ে বেশি এবং মেরু অঞ্চলের সবচেয়ে কম।
2) নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর উষ্ণতা প্রায় একই থাকে। মেরু অঞ্চলে শীতকাল ও গ্রীষ্মকালে উষ্ণতার পার্থক্য দেখা যায়।
3) ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতার তারতম্যে উষ্ণতার তারতম্য হয়। প্রতি 1000 মিটার বা 1KM উচ্চতায় 6.4 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতা কমে যায়

[আরও পড়ুন : বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস ও তাদের বর্ণনা]

বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের কারণ

ভূপৃষ্ঠের সর্বোচ্চ বায়ুর উষ্ণতা সমান নয়। যে যে কারণে ভূপৃষ্ঠে বায়ুর উষ্ণতার তারতম্য ঘটে সেগুলি হল–

সূর্যের তাপীয় ফল=
সূর্য থেকে যে শক্তি বা উত্তাপ পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। তাকে সূর্যরশ্মি তাপীয় ফল বলে। এই শক্তির শতকরা 34 ভাগ বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত না করে মহাশূন্যে প্রতিফলিত ও বিচ্ছুরিত হয়ে যায়। একে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অ্যালবেডো বলে

সূর্য থেকে আগত অবশিষ্ট 66 ভাগ শক্তি ক্ষুদ্র তরঙ্গ রূপে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে প্রথমে উত্তপ্ত করে। পরে উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠ থেকে দীর্ঘ তরঙ্গ রূপে তাপ বিকিরণের ফলে বায়ুমন্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের উপাদান, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি তা শোষণ করে ধীরে ধীরে বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করে তোলে। সূর্যরশ্মি তাপীয় ফল এর তারতম্যে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার তারতম্য ঘটে।

অক্ষাংশ=
1) পৃথিবীর অভিগত গোলক আকৃতির।
2) পৃথিবীর বার্ষিক গতি,
3) কক্ষতলের সাথে পৃথিবীর মেরুরেখা 66.5° কোণে অবস্থান,
প্রভৃতি কারণে নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর ও দক্ষিণে দুই মেরুর দিকে সূর্যরশ্মি তীর্যকভাবে পড়ে এবং কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে মকরক্রান্তি রেখার মধ্যে কোন না কোন স্থানে মধ্যাহ্ সূর্য লম্বভাবে পড়ে। লম্বভাবে পতিত সূর্যরশ্মি তাপের পরিমাণ বেশি হয় এবং তীর্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মিতে উত্তাপের পরিমাণ কম হয়।

কারণ- 1) লম্বভাবে পতিত সূর্য রশ্মি বায়ুমন্ডলের কম স্তর ভেদ করে আসে। ফলে বায়ুমন্ডলে মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন ধূলিকণা ও গ্যাসীয় উপাদান সূর্য রশ্মি কে কম পরিমাণে শোষণ করতে পারে। তাই উত্তাপ বেশি পাওয়া যায় কিন্তু তীর্যকভাবে পতিত সূর্য রশ্মি বেশী বায়ুমণ্ডলের স্তর ভেদ করে আসে বলে অধিক পরিমাণে শোষিত হয় ফলে তাপের পরিমাণ হ্রাস পায়।

2) লম্বভাবে পতিত সূর্যরশ্মি অল্প স্থান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বলে তা উত্তপ্ত করার ক্ষমতা বেশি। কিন্তু তীর্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মি অনেক বেশি স্থান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বলে তার উত্তপ্ত করার ক্ষমতা কম। সাধারণভাবে নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর বা দক্ষিণে 1° অক্ষাংশের তফাতে 0.28° সেন্টিগ্রেড কমে যায়।

দিনের পরিমাণ=
পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলে দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য এর হ্রাস বৃদ্ধি হয় ও ঋতু পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে বিভিন্ন স্থানে উষ্ণতার তারতম্য ঘটতে দেখা যায়। দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেলে কোন স্থানের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। আবার রাত্রির দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেলে ওই স্থানের শীতলতা বৃদ্ধি পায়। এই কারণে গ্রীষ্মকাল দিন বড় হয় বলে উত্তাপের পরিমাণ বেশি হয় এবং শীতকালে দিন ছোট হয় বলে তাপের পরিমাণ হ্রাস পায়।

ভূমির উচ্চতা=
ট্রপোস্ফিয়ারের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যতই উপরে ওঠা যায় বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পেতে থাকে। এই কারণে কলকাতার তুলনায় দার্জিলিংয়ের উষ্ণতা বেশ কম, দিল্লি অপেক্ষা সিমলার উষ্ণতা অনেক কম। তবে পার্বত্য উপত্যকা অঞ্চলে অনেক সময় উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা হ্রাস না পেয়ে বরং বৃদ্ধি পায় এরূপ অবস্থাকে বৈপরীত্য উত্তাপ বলে

**বৈপরীত্য উত্তাপ এর কারণ কি?: শীতকালে পরিষ্কার মেঘমুক্ত আকাশে শান্ত আবহাওয়ায় পর্বতের উপরের অংশের বায়ুর তাপ বিকিরণ করে দ্রুত শীতল হয় এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পর্বতের ঢাল বেয়ে নিচের উপত্যকা অঞ্চলে নেমে আসে। একে ক্যাটাবেটিক বায়ু বলে। এর ফলে পর্বতের উপরের অংশের তুলনায় নিচের উপত্যকা অঞ্চলে উষ্ণতা বেশ কম হয়। বৈপরীত্য উত্তাপ এর জন্য উপত্যকা অঞ্চলে লোক বসতি কম দেখা যায় এবং কৃষি কাজ হয়। আবার এই বৈপরীত্য উত্তাপ এর জন্য ভোরবেলা উপত্যকা গুলি মেঘে ঢাকা থাকে।

**উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে উষ্ণতা হ্রাস পায় কেন?
1) সূর্য রশ্মির মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠ প্রথমে উত্তপ্ত হয় এবং এই উষ্ণ ভূপৃষ্ঠের তাপ বিকিরণে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়। এই বিকিরিত তাপের অতি সামান্য অংশ ওপরের বায়ুস্তরে পৌঁছায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে উষ্ণতা ক্রমশ কমে যায়।
2) ওপরের বায়ুস্তর হালকা বলে তাপ বিকিরণ করে দ্রুত শীতল হয়।
3) উপরের বায়ুস্তর চাপ কম বলে তার উষ্ণতা কম হয়।
4) উপরের বায়ুস্তরে বিভিন্ন উপাদান কম থাকে বলে তার তাপশোষণ ও সংরক্ষণ ক্ষমতা কম

সমুদ্রস্রোত=
সমুদ্রস্রোত বায়ুর উষ্ণতা কে নিয়ন্ত্রণ করে। উষ্ণ স্রোতের দ্বারা প্রভাবিত অঞ্চলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় এবং শীতল স্রোত এর দ্বারা প্রভাবিত অঞ্চলে উষ্ণতা হ্রাস পায়।

পর্বতের অবস্থান=
বায়ুর গতিপথে পর্বত বা উঁচু ভূমি আড়াআড়িভাবে অবস্থান করলে বায়ুপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। উষ্ণ বায়ু ও শীতল বায়ু এইভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পর্বতের উভয় দিকে উষ্ণতার পার্থক্য দেখা যায়।

ভূমির ঢাল=
উত্তর গোলার্ধে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত পর্বতগুলির উত্তর ঢাল অপেক্ষা দক্ষিণ ঢালে সূর্যরশ্মি বেশি লম্বভাবে পড়ে। ফলে দক্ষিণ ঢালের উষ্ণতা বেশি হয়। দক্ষিণ গোলার্ধে এর বিপরীত অবস্থা দেখা যায়

সমুদ্র থেকে দূরত্ব=
যে স্থান সমুদ্র থেকে যত দূরে অবস্থিত সেখানে সমুদ্রের প্রভাব পড়ে না বলে শীত ও গরম খুব বেশি হয়। অর্থাৎ জলবায়ুর চরমভাব দেখা যায়। কিন্তু সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলে উষ্ণতার পরিমাণ কখনো খুব বেশি বা খুব কম হয় না।

বায়ুপ্রবাহ=
উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় এবং শীতল বায়ু প্রবাহিত হয় উষ্ণতা হ্রাস পায়।

মেঘের আবরণ=
আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে দিনের বেলায় ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বেড়ে যায় ও রাতের বেলায় তাপ বিকিরণ এর ফলে উষ্ণতা হ্রাস পায় এইজন্য মরু অঞ্চলে দিন ও রাত্রির উষ্ণতার মধ্যে এত পার্থক্য দেখা যায়। কিন্তু আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলে সূর্যরশ্মি ভূপৃষ্ঠে তেমন পৌছাতে পারে না বলে দিনের বেলা উত্তাপ কমে এবং রাতের বেলা এই মেঘ ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপকে বাধা দেয় বলে উত্তাপ বাড়ে। এইজন্য **মেঘমুক্ত রাত্রি অপেক্ষা মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি বেশি উষ্ণ হয়**।

বনভূমির অবস্থান=
ভূপৃষ্ঠে কোন বনভূমি অবস্থান করলে তা মাটির অভ্যন্তরে জলীয়বাষ্প ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে মাটি আর্দ্র হয়। ঘন বনভূমির জন্য সূর্যরশ্মি ভূপৃষ্ঠে বেশি উত্তপ্ত করতে পারে না এবং ভূপৃষ্ঠ খুব তাড়াতাড়ি তাপ বিকিরণ করে শীতল হতে পারে না। আবার বনভূমি বৃষ্টিপাত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে বলে বায়ুর উষ্ণতা স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা হ্রাস পায়।

আশা করি বন্ধুরা “বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা ” সম্পর্কিত পোস্ট টি আপনাদের ভালো লেগেছে। অবশ্যই comment জানতে ভুলবেন না।

Share this

Related Posts

Comment us

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook Page