প্রিয় পাঠক আজ আমরা আবার হাজির নতুন বিষয় নিয়ে। আজ আমাদের বিষয় “পৃথিবীর তাপবলয়” সম্পর্কিত।
ভূপৃষ্ঠের সর্বএ বায়ুর উষ্ণতা সমান নয়। ভূপৃষ্ঠের যেসব অঞ্চলে সূর্য লম্বভাবে পড়ে সেখানকার উষ্ণতা বেশি এবং যেসব অঞ্চলে সূর্য রশ্মি তীর্যকভাবে পরে সেখানকার উষ্ণতা কম হয়। ভূপৃষ্ঠে উষ্ণতার তারতম্যের ভিত্তিতে কয়েকটি তাপমন্ডলে ভাগ করা হয়।
উষ্ণমন্ডল কাকে বলে?(Torrid Zone)
নিরক্ষরেখার উত্তর ও দক্ষিণে কর্কটক্রান্তি রেখা ও মকরক্রান্তি রেখার (23.5° অক্ষরেখা) মধ্যবর্তী অঞ্চলকে উষ্ণমন্ডল বলে।
উষ্ণমন্ডলের বৈশিষ্ট্য :
1) এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি বছরের অধিকাংশ সময়ে প্রায় খাড়াভাবে পড়ে (90°- 66.5°) এবং মধ্যবর্তী অঞ্চলে বছরে দুবার সূর্য লম্বভাবে পড়ে।
2) নিরক্ষরেখার সারাবছরই মধ্যহ্নে সূর্য লম্বভাবে পড়ে ফলে এই অঞ্চলে সারাবছর উষ্ণতা বেশি থাকে বলে , একে উষ্ণমন্ডল বা গ্রীষ্মমন্ডল বলে। গড় বার্ষিক উষ্ণতার 27°C।
[আরও পড়ুন : বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা কি? বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার তারতম্যের কারণ]
উত্তর ও দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল কাকে বলে?(Temperate Zone)
কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে উত্তরের সুমেরুবৃত্ত এবং মকরক্রান্তি রেখা থেকে দক্ষিনে কুমেরু বৃত্ত পর্যন্ত অঞ্চলকে নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল বলে।
উত্তর ও দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের বৈশিষ্ট্য:
1) এই অঞ্চলের সূর্যরশ্মি অপেক্ষাকৃত তীর্যকভাবে পড়ে (66°C থেকে 23.5°C)
2) এই অঞ্চলের উষ্ণতা খুব বেশি বা কম হয় না মাঝামাঝি ধরনের হয় এই জন্য এই অঞ্চলকে নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল বলে।
3) কর্কটক্রান্তি রেখার 23.5° N থেকে সুমেরুবৃত্ত 66.5° N পর্যন্ত অঞ্চলকে উত্তর নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল বলে।
4) মকরক্রান্তি রেখার 23.5°S থেকে 66.5° S পর্যন্ত অঞ্চলকে দক্ষিন নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল বলে।
5) ক্রান্তীয়রেখার নিকটবর্তী অঞ্চল অপেক্ষাকৃত অধিক উষ্ণতার জন্য উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল বলে।
6) মেরু বৃত্তের নিকটবর্তী অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত স্বল্প উষ্ণতার জন্য শীতল নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল বলে। এই অঞ্চলের গড় বার্ষিক উষ্ণতা 27°C – 0°C।
উত্তর ও দক্ষিণ হিমমন্ডল কাকে বলে?(Frigid Zone)
উত্তর গোলার্ধে সুমেরুবৃত্ত থেকে সুমেরুবিন্দু এবং দক্ষিণ গোলার্ধে কুমেরুবৃত্ত থেকে কুমেরুবিন্দু পর্যন্ত অঞ্চলকে হিমমন্ডল বলে।
উত্তর ও দক্ষিণ হিমমন্ডলের বৈশিষ্ট্য :
1) এ অঞ্চলে সূর্যরশ্মি ভীষন তীর্যকভাবে পড়ে ( 66.5°C – 90°C)।
2) মেরু বিন্দুতে একটানা ছয় মাস দিন ও ছয় রাত দেখা যায়। তাই এই অঞ্চলে উষ্ণতা খুবই কম হয়। অধিকাংশ অঞ্চল বরফে ঢাকা থাকে বলে এই অঞ্চলকে হিমমন্ডল বলে।
3) উত্তর গোলার্ধের হিমমন্ডলকে উত্তর হিমমন্ডল এবং দক্ষিণ গোলার্ধের হিমমন্ডলকে দক্ষিণ হিমমন্ডল বলে। এই অঞ্চলে বার্ষিক উষ্ণতার 0°C এরও কম।
**তাপবিষুব কি? কোন নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিটি দ্রাঘিমায় সর্বোচ্চ উষ্ণতা বিশিষ্ট স্থানগুলিকে যে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয়। তাকে তাপীয় বিষুব রেখা বলে। নিরক্ষরেখা বরাবর সাধারণত এই তাপীয় বিষুবরেখা অবস্থান করে। সূর্যের উত্তরায়ন ও দক্ষিণায়ন এর সময় এই রেখা সামান্য উত্তর ও দক্ষিণে সরে যায়।
পৃথিবীর তাপবলয় সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন উত্তর
উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন কবে?- 21 শে জুন।(কর্কট সংক্রান্তি)
উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে ছোট দিন কবে?- 22 শে ডিসেম্বর। (মকর সংক্রান্তি)
কোন কোন তারিখে পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রি সমান হয়?- 23 শে সেপ্টেম্বর ও 21 শে মার্চ
উষ্ণমন্ডল কত ডিগ্রি অক্ষাংশে অবস্থান করে?- 23.5° উত্তর ও দক্ষিণ।
নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল কত ডিগ্রি অক্ষাংশে অবস্থিত?- উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে 23.5° – 66.5° অক্ষাংশে।
হিমমন্ডল কত ডিগ্রি অক্ষাংশে অবস্থিত?- উভয় গোলার্ধে 66.5° – 90° অক্ষাংশে অবস্থান করে।
পৃথিবীর নিজ অক্ষের শহিত কত ডিগ্রি কোণে অবস্থান করে?- 66.5° কোনে অবস্থান করে।
মেরুতে দুটির দ্রাঘিমার মধ্যে মধ্যে দূরত্ব কত?- 0 কিমি।
কোথায় সর্বদা দিন রাত্রি সমান?- নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বদা দিন রাত্রি সমান।
আজ এই পর্যন্তই। দেখা হবে আবার নতুন বিষয়ের সাথে। “পৃথিবীর তাপবলয়” সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন থাকলে। comment box এ লিখতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ
Pingback: সমুদ্রস্রোত কী? | সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ কি? – Studious
চাপবলয়vsতাপবলয় পার্থক্য?